অগ্রজপ্রতিম বন্ধু কবি শামসুর রাহমান

শুচি সৈয়দ

কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৮০ সালের কোন এক সকালে। গিয়েছিলাম দৈনিক বাংলায়, কবি আহসান হাবীবের রুমে। উদ্দেশ্য তাঁর কাছে একটি পত্রিকা পৌঁছানো। পত্রিকার নাম কবিকণ্ঠ। দেশের ঊনিশ জেলার একটি জেলা শহর পাবনাতে আমরা যারা লেখালেখি, প্রকাশনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত তাদের একটি প্রাণের সংগঠন কবিকণ্ঠ। কবিকণ্ঠ ছিল মূলত, সাপ্তাহিক স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। যে আসরে আমরা সবাই আমাদের ‘পরমাÍীয়’দের লেখা কবিতা, ছড়া নিয়ে হাজির হতাম। আমাদের আসর বসত রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিনটিতে। ছুটির দিনে বসত কারণ আমরা যে জায়গাটিতে বসতাম সেটা সেদিন বন্ধ থাকত। সরকারের অফিস-জেলা তথ্যকেন্দ্র লাইব্রেরি। অফিসটিতে আমাদেরকে ছুটির দিনে আসর বসাতে দিয়েছিলেন তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা চিশতী ভাই। যিনি ছিলেন পাবনার সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মওলানা কসিমউদ্দিন আহমদ-এর পুত্র। যিনি হানাদার পাক বাহিনীর হাতে শহীদ হন ঊনিশ শ’ একাত্তরে। পাবনা শহরের নতুন ব্রীজের ঢালে মওলানা কসিমউদ্দিন আহমদ স্মৃতি কেন্দ্র-র একতলা একটি ভবনে তিনটি রুম। একটি রুমে তাঁর নামেই স্থাপিত একটি পাঠাগার, তার ঠিক উল্টোদিকের রুমে জেলা তথ্যকেন্দ্র-র গণপাঠাগার আর মাঝখানের রুমটি হচ্ছে সংবাদপত্র পাঠকক্ষ এই সংবাদপত্র পাঠকক্ষটিতেই ছুটির দিনের বিকেলে বসতাম আমরা।
সাপ্তাহিক কবিতাপাঠের আসর কবিকণ্ঠের ‘পরমাÍীয়’ কবিদের লেখা কবিতার এক বছরের সালতামামি ছিল কবিকণ্ঠ স্মারক। সেই স্মারক পত্রিকাটি কবি আহসান হাবীবের হাতে পৌঁছাতেই আমি সেদিন লিফটে দৈনিক বাংলার পাঁচতলায় হাবীব ভাইয়ের রুমে ঢুকে ছিলাম। হাবীব ভাইয়ের টেবিলের ঠিক উল্টো দিকের চেয়ারে বসে খুব কাছকাছি ঝুঁকে তাঁরা কিছু আলাপ করছিলেন। এখন লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে কি অসাধারণ আর দুর্লভ সেই দৃশ্যটি–  কথা বলছিলেন বাংলাদেশের সাহিত্যের দুই দিক পাল  দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদক কবি আহসান হাবীব এবং দৈনিক বাংলার সম্পাদক স্বয়ং কবি শামসুর রাহমান। এই গোপন শলাপরামর্শমূলক আলাপের দৃশ্যে আমি এক অপ্রস্তুত কিশোর। অপ্রস্তুত ভাব কাটাতে আমি কবি আহসান হাবীবের মুখোমুখি যে টেবিল সেই টেবিলটিতে কবিকণ্ঠ স্মারকে ‘শ্রদ্ধাস্পদেষু কবি আহসান হাবীব’কে- এরকম কিছু লেখার উদ্যোগ করি এবং লিখি। (পরে জেনেছি ওই টেবিলটি ছিল দৈনিক বাংলার মহিলাদের পাতার সম্পাদিকা কবি মাফরুহা চৌধুরীর।) ইত্যবসরে হাবীব ভাইয়ের সামনের চেয়ার থেকে উঠে চলে গেছেন কবি শামসুর রাহমান। আমি হাবীব ভাইকে ‘কবিকণ্ঠ’ স্মারকটি দেয়ার পর তিনি সেটি হাতে নিয়ে বললেন, ‘ও কে দিলে না?’ বলাই বাহুল্য তার সামনে বসেছিলেন যিনি তিনি কে সেটা আমি ভালোভাবে লক্ষ্য করিনি। তাকে আমি আমার মতই কোনও দর্শনার্থী ভেবেছি। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই হাবীব ভাইকে বলি, ‘উনি কে?’ ‘ওঁ কবি শামসুর রাহমান।’ সেদিন বোধকরি লজ্জায় আরক্তিম হয়েছিলাম। বোধকরি সেটা সহƒদয় উপলব্ধিও করেছিলেন হাবীব ভাই। তাই আমার আরেক দফা অপ্রস্তুত অবস্থা এবং উত্তর শুনে আমার প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। হাবীব ভাইয়ের বিস্মিত প্রশ্নের উত্তরে সত্যি কথাটাই বলেছিলাম, ‘খেয়াল করতে পারিনি।’ আসলেই রাহমান ভাই সেদিন এতো ঝটিতি উঠে চলে গিয়েছিলেন যে তাকে আমি লক্ষ্যই করতে পারিনি। লক্ষ্য করলেও হয়তো চিনতে পারতাম না কারণ সেটাই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। তাঁকে দেখেছি ‘শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা’র পেছনের প্রচ্ছদের ছবিতে। যেটি দেশের সুবিখ্যাত আলোকচিত্রী আমানুল হক-এর ক্যামেরায় তোলা। সেই ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তাকে সনাক্ত করতে কতটা সক্ষম হতাম? হাবীব ভাই বোধহয় পুরো বিষয়টিই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন আর তাই অসাধারণ মমতায় আমাকে একটি মিথ্যে কথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন, আমার অপ্রস্তুত ভাব দেখে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে অসুবিধে নেই, ও দোতলায় বসে, ওঁকে ওর রুমে গিয়ে দিয়ে এসো আর বোলো ওখানে আহসান হাবীবের কক্ষে দিলে আপনি কিছু মনে করেন তাই দিইনি।’ আমি দোতলায় নেমে রহমান ভাইয়ের রুমে ঢুকে তাঁকে পত্রিকাটি দিয়ে হাবীব ভাইয়ের শিখিয়ে দেয়া মিথ্য কথাটি বলি। উত্তরে রহমান ভাই বলেন, ‘ওখানে দিলেও আমি কিছু মনে করতাম না।’ তাঁর এই কথাগুলো যে সত্য ছিল আমার একটি মিথ্য সংলাপের উত্তরে- তাতে সেদিন যেমন আমার অবিশ্বাস হয়নি পরবর্তীতে রাহমান ভাইয়ের সঙ্গে আরও অনেক ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সৌভাগ্যে জেনেছি সেটি সত্যই ছিল। আমার একটি কবিতার লাইন, ‘মানুষের মিথ্যে থাকে সত্যের সুন্দর উপাসনায়’– হাবীব ভাইয়ের শিখিয়ে দেয়া এটি মধুর মিথ্যে সংলাপের মধ্য দিয়ে আমার পরিচয়ের সূত্রপাত ঘটেছিলো বাংলাদেশের দুই মহান সত্য ও সুন্দরের উপাসকের সঙ্গে, দুই প্রধান কবির সঙ্গে- একথা ভাবলে আমার ভালো লাগে।
অনেক পরে যখন রাহমান ভাইকে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের এই ঘটনাটির কথা বলেছি তখন তিনি তাঁর সভাবসুলভ সেই সুন্দর হাসিটি হেসেছেন। সেই হাসির ভেতরও আমি দূর অতীতে ফেলে আসা সংলাপটির সত্যতা অনুভব করেছি।
রাহমান ভাইকে নিয়ে একটি লেখার জন্য সারমিন ফোন করলে রাজী হয়ে যাবার পর কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যাইÑ কি লিখব? তাঁকে নিয়ে লেখার অধিকারই বা আমার কতটুকু? নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটাকুটি শেষে ব্যক্তি শামসুর রাহমান বিষয়েই লেখার কথা মনে হল-  জানিনা এতে কেউ আÍপ্রচারের অভীপ্সা পেয়ে যাবে কি-না। পাঠকের কাছে সেটা মনে হলে ক্ষমা চেয়ে রাখছি। একটি পত্রিকায় দেখলাম সদ্যপ্রয়াত আমার আরেক শ্রদ্ধাভাজন কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ-এর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। যার শিরনাম অনেকটা এরকম– ‘শামসুর রাহমানের কোনও বন্ধু ছিল না, ছিল কিছু স্তাবক’– সাক্ষাৎকারটি øেহভাজন কবি সাখাওয়াত টিপুরা নিয়েছিল ২০০৮ সালে সেটির পুনর্মুদ্রণ করেছে তারা মান্নান ভাইয়ের প্রয়াণে। এই শিরনামটি আমাকে সাংঘাতিক আহত করল। আহত হবার কারণ বিবিধ। তার একটি হচ্ছে একজন নিখাঁদ ভদ্রলোক সম্পর্কে বলছেন আরেকজন নিখাঁদ ভদ্রলোক। জানি না উক্তিটি আব্দুল মান্নান সৈয়দ-এর মুখে টিপুরা বসিয়ে দিয়েছে কি-না। কারণ এই দুইজন লেখকের সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় ছিল। আব্দুল মান্নান সৈয়দকে আমি কখনো কাউকে অসম্মান করে কিছু বলতে দেখিনি, শুনিনি। মান্নান সৈয়দের সঙ্গে আমার চাইতেও যারা বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন তারাও বোধহয় একথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন। মান্নান সৈয়দ কাউকে আহত করে লিখতেনও না, বলতেনও না। যাহোক টিপুদের এই শিরনামটি পড়ে আমি খুব ধন্ধে পতিত হই। ‘বন্ধুৃত্ব’ এই শব্দটির অর্থ কি? কিংবা কাকে বলে প্রকৃত ‘বন্ধুত্ব’ রীতিমত সংশয়ে পড়ে যাই, আমি কি তাহলে কবি শামসুর রাহমানের একজন ¯তাবক? এই লেখাটিও কি তাই? তাঁকে নিয়ে এক স্তাবকতা? সংশয়ে পড়ি কারণ কবি শামসুর রাহমান তাঁর এক সাক্ষাৎকারে তাঁর তিন তরুণ বন্ধুর তালিকায় আমার নামটি উলে¬খ করেছিলেন। সেই উলে-খও ছিল বেশ নাটকীয় বলা চলে। কবি মারজুক রাসেল বলেছিলেন আমাকে ঘটনাটি। মারজুক রাসেল তখন কাজ করতেন ‘পূর্ণতা’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকায়। ‘পূর্ণতা’র একটি সংখ্যায় কবি শামসুর রাহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তারা। সেই সাক্ষাৎকারের একটি প্রশ্ন ছিল বোধ হয় আপনার বন্ধুদের কথা বলুন কিংবা আপনার বন্ধু কারা? এ জাতীয়– সেই বন্ধুদের তালিকায় আর কার কার নাম ছিল সেটা মনে পড়ছে না। তবে তরুণ তিন বন্ধুর নাম উলে¬খ করতে গিয়ে তিনি কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, কবি সাজ্জাদ শরিফের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেছিলেন। যুক্ত করেছিলেনই বলা যায়, কবি মারজুক রাসেলের ভাষ্য অনুসারে। মারজুক আমাকে ঘটনাটি বলেছিলেন এক বিস্ময় নিয়ে। বিস্মিত হয়েছিলাম তার মত আমি নিজেও। মারজুকের ভাষ্য এরকম- তিন জন তরুণ বন্ধুর দুটি নাম উলে¬খের পর তৃতীয় জনের নাম স্মরণ করতে পারছিলেন না। ‘পূর্ণতা’ যখন তার সাক্ষাৎকার কম্পোজের কাজ করছে তখন তিনি মারজুককে টেলিফোন করে স্মরণ হওয়া তৃতীয় নামটি জানান। তাঁর নেই তৃতীয় তরুণ বন্ধুটি আমি। আমার মত এক অভাজনের জন্য এই প্রাপ্তি অনেক নগদপ্রাপ্তির অধিক। আমাকে তিনি তাঁর হƒদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন বন্ধুত্বের অধিকারে- স্তাবকতার জন্য নয়। মান্নান ভাই জীবিত কালে এই সাক্ষাৎকার আমার চোখে পড়েনি, পড়লে কথা বলতাম তাঁর সাথে।

২.
একদিন দুপুরে রাহমান ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি- তখন তিনি ফকির লালন শাহের মাজার রক্ষার এক আন্দোলনে শরিক। লালনের মাজার নিয়ে এই আন্দোলনে তখন আমার দুই প্রিয় মানুষ জড়িয়ে পড়েছেন। অন্য জন হলেন ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। লালনের আখড়া নিয়ে এই আন্দোলন তখন বেশ আলোচিত। আন্দোলনের সংগঠক তরুণদের মধ্যে আমার পরিচিত কয়েকজন তরুণও আছে। তারা কেমন কেমন করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার এবং রাহমান ভাইকে জুটিয়ে ফেলেছে। লালনের আখড়ায় সরকার একটি আধুনিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত কমপে¬ক্স করবে, সেখানে লাইব্রেরি, আর্কাইভ এসব থাকবার কথা- আন্দোলনকারীরা সেটি চান না। গোটা আন্দোলনটি তখন আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়েছিল নানা কারণে- সে রহস্য বোধকরি রয়ে গেছে আজও। মাঝখানে দুজন নিরীহ ভদ্রলোক শিকার হয়েছেন দুর্ভোগের।
আমি রাহমান ভাইকে আক্রমণ করে বসি রীতিমত, ‘কি বুঝে আপনি এই আন্দোলনে জড়িয়েছেন? আপনি কখনও ছেউরিয়া গেছেন? কে আপনাকে এই বিভ্রান্তিকর আন্দোলনে জড়ালো? আপনি এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার- আমার এই দুই প্রিয়জন এই আন্দোলনে জড়িয়েছেন কিন্তু এটা একটা বিভ্রাšিতকর আন্দোলন। কে আপনাদেরকে জড়ালো এই বিভ্রান্তিতে?’ আমি আসলে বুঝতে চাইছিলাম বাংলাদেশের দুজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষকে কারা এবং কিভাবে এমন একটি বিভ্রাšিতকর কর্মকা-ে জড়িয়ে ফেলেছে সেটা। আমার এমন তীব্র আক্রমণেও দেখি তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ মিটিমিটি হাসি হাসতে থাকেন। হাসেন তার সামনে বসে থাকা তার আরেক সুহƒদ সজ্জন কবি কায়সুল হকের দিকে তাকিয়ে। মুখে কিছুই বলেন না। আমার উপর্যুপরি আক্রমণাÍক প্রশ্নে অবশেষে মুখ খোলেন কবি কায়সুল হক। বলেন, ‘আমিই দায়ী এজন্য, আমিই দুই তরুণের কথা শুনে তাদেরকে কবি সাহেবের কাছে পাঠিয়েছিলাম। আমার কারণেই কবি সাহেব এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন।’ আমি এবার বলাযায় ঝাঁপিয়ে পড়ি কবি কায়সুল হকের ওপর, ‘আপনিই বা কি বুঝে এদের দ্বারা কনভিন্সড হলেন?’ নিরীহ সজ্জন বলে খ্যাত কায়সুল ভাই জবাবে বলেন, ‘ইটিভিতে একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম এক তরুণের। ওরা এরকম একটা উদ্যোগ নিচ্ছে শুনে আমিই তাদের বলি এই আন্দোলনে কবি সাহেবকে সঙ্গে রাখতে।’ কায়সুল ভাইকে বললাম, ‘শুধু একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখে এমন মুগ্ধ হলেন? কি ছিল সেই প্রামাণ্য চিত্রে?’ কায়সুল ভাই জানান, সেই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতার একটি লেখা পড়ে তিনি উদ্বিগ্ন হন। ফলে তাকে তার কাছে বিশ্বস্ত মনে হয়েছিল। কি ছিল সেই লেখায় যা পড়ে উদ্বেগাকুল হয়েছিলেন তিনি তা জানতে চাইলে বলেন, সে লেখায় বলা হয়েছিল- লালনের আখড়ায় জুয়ারিরা নাকি অবাধে জুয়ার আসর বসানো শুরু করেছে। এ তথ্যে উদ্বিগ্ন হয়ে লালনের আখড়া রক্ষার আন্তর্তাগিদ বোধ করেন তিনি।
আমি কায়সুল ভাই, রাহমান ভাইকে বলি, দেখেন আপনাদের একটি সৎ আবেগ কিভাবে অসৎ উদ্দেশ্যপূরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদেরকে জানাই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। লালনের মাজারে এত পরিমাণ গঞ্জিকা সেবন হয় বাউলদের দ্বারা যে আমি নিজে সেই ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়েছি কিন্তু সেখানে মোটেও জুয়ার আসর বসেনা। কোনো ভাবেই কখনো কোনো নারী লাঞ্ছিত হন না। বাউল সাধুদের সে এক অসাধারণ সমাবেশ। তথ্যচিত্র নির্মাতা ভুল তথ্যদাতা। আমার কথায় আমার প্রবীণ দুই অগ্রজ কনভিন্সড হন। কথা হয় আরও অনেক কিছু নিয়েই। আমি রাহমান ভাইকে বলি, ‘রাহমান ভাই, যে কেউ এল, আপনাকে ডেকে নিয়ে গেল আর আপনি তাদের ব্যানারটি ধরে টেনে দিয়ে এলেন- এটি আপনার কাজ নয়।’ আমাকে সমর্থন দেন কবি কায়সুল হক বলেন, ‘যারা দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে গলার রগ ফাটাচ্ছে তাদের নিজের দেশে শতাব্দীর শেষপ্রাšেত এসে ঘটছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।’
সেদিন আমি, কবি কায়সুল হক এবং রাহমান ভাই দুপুর থেকে প্রায় রাত্রি আটটা পর্যন্ত এরকম উত্তপ্ত আলোচনায় মেতেছিলাম। আমার মত এক তরুণের এরকম ক্ষোভকে স্বীকার করার ঔদার্য এবং কেবল স্বীকার করা নয়–  সে পরামর্শ অনুসরণ করার মত বড় মনের মানুষ আমাদের সমাজে খুব কমই পেয়েছি। রাহমান ভাই সেই বিরলতমদের অন্যতম। তাই তিনি যখন আমাকে তাঁর বন্ধুত্বের তালিকায় ঠাঁই দেন তখন তাতে আমি সম্মানিত বোধ করি। কবি শামসুর রাহমানের বন্ধুদের ¯তাবক বলে যারা মনে করেন তারা জানেন না- কোনও কোনও বন্ধুর ব্যবহারে এই মহৎপ্রাণ মানুষটি কি সাংঘাতিক ভাবে দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়েছেন বেদনায়। তাঁর সে অশ্রুর একমাত্র সাক্ষী তাঁর কন্যাপ্রতিম পুত্রবধূ টিয়া রহমান, যে কিনা মাতৃ¯েœহে আগলে রেখেছিল এই কবিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.