অবশেষে পিপিপিতে বিআরটিসির ভলভো বাস মেরামতের উদ্যোগ

ইসমাইল আলী |

রাজপথে আবারো নামবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ভলভো বাস। এজন্য ৪৮টি বাস মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি তহবিল থেকে এজন্য ১৫ কোটি টাকা চাওয়া হলেও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাসগুলো মেরামতে দরপত্র আহ্বান করেছে বিআরটিসি। মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান বাসগুলো পাঁচ বছর পরিচালনার সুযোগ পাবে।

সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) অর্থায়নে ২০০২ সালে ৫০টি ভলভো বাস কেনে বিআরটিসি। প্রতিটি ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা দরে কেনা বাসগুলোর জন্য মোট ব্যয় করা হয় ৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে বাসগুলোর সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশ কেনা হয়নি। আর ভলভোর যন্ত্রাংশ দেশে সহজলভ্যও নয়। ফলে বিকল হওয়া বাসগুলো দ্রুত মেরামত করা যায়নি। বরং লম্বা সময় পড়ে থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে আয়ুষ্কাল ১৫ বছর ধরা হলেও সাত-আট বছরের মধ্যে বিকল হয়ে পড়ে সুইডেন থেকে কেনা দ্বিতল বাসগুলো। বর্তমানে বিআরটিসির মিরপুর ডিপোয় ২৭টি ও কল্যাণপুরে ২১টি বাস পড়ে আছে। বাকি দুটি বাসের একটি এখনো চালানো হচ্ছে। অন্যটি হালকা মেরামত শেষে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, বিকল ৪৮টি ভলভো বাসের অবস্থা যাচাইয়ে গত মে মাসে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে বিআরটিসি। বাসগুলোর কার্যক্ষমতা, বিভিন্ন যন্ত্রাংশের অবস্থা, বিকল হওয়ার কারণসহ ব্যাপকভিত্তিক তথ্য উঠে আসে কমিটির প্রতিবেদনে। এর ভিত্তিতে বাসগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে মেরামতের ক্ষেত্রে খুচরা যন্ত্রাংশ সংকটের সম্মুখীন হয় বিআরটিসি। দেশে অনুমোদিত ডিলার না থাকায় সরাসরি যোগাযোগ করা হয় ভলভো কোম্পানির সঙ্গে। ভলভোর তথ্যের ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয় বাসগুলোর মেরামতের ব্যয়। এক্ষেত্রে বাসভেদে মেরামতে ২৫-৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। সব মিলিয়ে ভলভো বাস মেরামতে প্রায় ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল এ আর মোহাম্মদ পারভেজ মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, মেরামত করা গেলে বাসগুলো থেকে কমপক্ষে পাঁচ বছর সেবা পাওয়া সম্ভব। দেশে খুচরা যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। এ নিয়ে ভলভো কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ভারত থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাওয়া গেলেই বাসগুলো চালু করা যাবে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাস মেরামতে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিআরটিসি। তবে মন্ত্রণালয় কোনো বরাদ্দ দিতে রাজি হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়, ২০০৮ সালে একবার বাসগুলো মেরামতে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তবে এতে খুব বেশি দিন বাসগুলো চলেনি। তাই পুরনো বাসগুলো মেরামতের পরিবর্তে নতুন কিছু বাস কেনাই যুক্তিযুক্ত মনে করছে মন্ত্রণালয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভলভো বাসগুলো পিপিপিতে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে মেরামত করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সেগুলো পরিচালনা করবে। বিনিময়ে বিআরটিসিতে দৈনিক ন্যূনতম জমা দিতে হবে। এছাড়া জামানত হিসেবে ২ লাখ টাকা জমা রাখতে হবে। এজন্য বাসগুলো আটটি করে মোট ছয়টি স্লটে ভাগ করা হয়েছে। তবে প্রথম দফায় বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জামানতের পরিমাণ কমিয়ে বাসপ্রতি ১ লাখ টাকা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বাসগুলো অনেক দিন ধরে ডিপোয় পড়ে আছে। তাই মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুতই সাড়া পাওয়া যাবে। কারণ ভলভো দ্বিতল বাসে মোট আসন ১২০টি। আসনের অতিরিক্ত আরো ৪০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারে। ফলে একটি ভলভো বাসে পাঁচটি মিনিবাসের সমান যাত্রী বহন করা সম্ভব। এতে বাসগুলো থেকে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, প্রথমবার দরপত্রে অনেকে আগ্রহ দেখালেও জামানত বেশির যুক্তি দেখায়। তাই এবার জামানত কমানো হয়েছে। আশা করা যায়, পিপিপিতে এবার সাড়া পাওয়া যাবে। এর পরও বিনিয়োগকারী পাওয়া না গেলে নিজস্ব তহবিল থেকে মাসে একটি করে ভলভো মেরামতের চেষ্টা করা হবে। এতে বছরে ১০-১২টি বাস নামানো যাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.