অরক্ষিত মহাকাশ, সাইবার আক্রমণে মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা
বর্তমান বিশ্বের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামরিক শক্তি ও নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, বিনোদন সব কিছুই স্যাটেলাইট নির্ভর হয়ে পড়েছে। সামনে সাইবার নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই মহাকাশ নির্ভরশীলতাও ব্যাপকভাবে বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় মহাকাশে স্থাপিত যোগাযোগ সহায়ক যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা নিয়ে কোনো দেশ বা সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মিলিত উদ্যোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার নিরাপত্তার দিকে থেকে মহাকাশ এতোটাই অরক্ষিত যে যেকোনো মুহূর্তে হ্যাকড বা ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হতে পারে। আর এমনটি হলে বিশ্বে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। সমন্বিত প্রস্তুতি না থাকার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই করা সম্ভব হবে না। আর ততোক্ষণে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাথাম হাউজ সম্প্রতি এক গবেষণাপত্রে দাবি করেছে, মহাকাশের অবকাঠামো আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবেলায় অপ্রস্তুত গোটা বিশ্বই।
রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের আরেক নাম চাথাম হাউজ। লন্ডনভিত্তিক এ অলাভজনক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে কাজ করে।
এই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাটেলাইটে সাইবার আক্রমণের কারণে যদি কোনো বৈশ্বিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তবে পুরো পৃথিবীই মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে।
যদি মহাকাশের অবকাঠামো হ্যাকড হয় অথবা কোনোভাবে বিপজ্জনক কাছে ব্যবহৃত হয়, তবে কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারবে না। এতে বাণিজ্য ও আর্থিক সেবা খাত বিপর্যস্ত হওয়া থেকে শুরু করে সন্ত্রাসীদের কৌশলগত অস্ত্রেও পরিণত হতে পারে।
বিশ্বের বহু অবকাঠামো মহাকাশে স্থাপিত যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল। ভূমির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি পরিচালিত হয় এসব যন্ত্রপাতির দ্বারাই। এবং বিভিন্ন দেশের সরকার যারা ভূমির এই প্রযুক্তিকে নিরাপদ রাখতে ইতিমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছেন তারাও মহাকাশ থেকে নেমে আসা হুমকির মুখে পড়তে পারেন সহজেই।
চাথাম হাউজ বলছে, এই দুর্বলতার কারণে মহাকাশ কোনো ব্যক্তি, গ্রুপ, অপরাধী সিন্ডিকেট, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, এমনকি কোনো দেশের দ্বারাও সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারে।
চাথাম হাউজের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ড. প্যাট্রিসিয়া লুইস ও তার সহযোগী গবেষক ডেভিড লিভিংস্টোন বলেন, মহাকাশে সাইবার নিরাপত্তার আমূল পর্যালোচনার জন্য কর্তৃক্ষের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। বর্তমানে এ সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক কোনো সংস্থা নেই। তাই রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলে অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাবে।
এটি এ কারণে যে, মহাকাশ এখন উন্মুক্ত, এটা গুটিকয়েক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের কর্তৃত্বে নেই। বরং এটি একটি ডোমেইনে পরিণত হয়েছে, যা বাজারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি আরো জোরালো হতে পারে। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, নির্দিষ্ট সাইবার আক্রমণে বিচ্ছিন্ন সরকার খুব সামান্যই তা মোকাবিলা করতে পারবে। তাই এসব দেশের এক সঙ্গে কাজ করা উচিত।
তাদের পরামর্শ, বিশ্বের উচিত একটি নিরাপদ ও সহজলভ্য সাইবার নিরাপত্তা যুগের সূচনা করা, বিশ্বের সাইবার আক্রমণ ঠেকাতে যেখানে দেশগুলো এক সঙ্গে কাজ করবে। এজন্য একটি সাইবার ইন্ড্রাস্টিও প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
প্যাট্রিসিয়া লুইস বলেন, এরই মধ্যে কিছু মহাকাশ সংস্থা নিরাপত্তার স্বার্থে অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এ ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে চীন প্রস্তুত, তারা পুরোপুরি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। ইউরোপীয় গ্যালিলিও মহাকাশ নেভিগেশনাল নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা পরিমাপক চালু করেছে। সাইবার আক্রমণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মহাকাশ শিল্পে সব দেশকেই সক্ষমতা ও একাগ্রতা দেখাতে হবে।
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট