আজ বিশ্ব মা দিবস, ভালোবাসুন মাকে

মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার হলো ‘বিশ্ব মা দিবস’। পৃথিবীর সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কের নাম ‘মা’। সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। কবির ভাষায়- ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই / মায়ের চেয়ে নাম যে মধুর, ত্রিভুবনে নাই’।

কালে কালে একটি কথাই চিরায়ত সত্যিতে পরিণত হয়েছে, আর সেটি হচ্ছে- পৃথিবীতে মা শব্দের চেয়ে অতি আপন শব্দ আর দ্বিতীয়টি নেই। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না। তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ। সন্তানের যত বয়সই হোক, যতই স্বাবলম্বী হোক না কেন মায়ের কাছে সে সন্তানই থাকে। তাই মায়েরা কখনই সেই চিন্তা থেকে বেরোতে পারেন না। রাগ, অভিমান, তর্ক, বকাবকি, কাজে বাধা দেয়া সেই সবই আসলে সেই অপত্য স্নেহেরই প্রকাশ। তাই মায়ের উপর বিরক্ত না হয়ে উনি কেন এমন আচরণ করছেন তা বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন উনিও আপনাকে বুঝতে পারবেন। কারণ, সন্তান তাঁকে বুঝবে এই প্রত্যাশা সব মায়েদেরই থাকে।

নিজে মা হলে বুঝবি! এই কথাটা নিশ্চয়ই মায়ের মুখ থেকে শুনেছেন? বড় হয়ে যাওয়ার পর মায়ের উপদেশ শুনতে আমরা অনেকেই বিরক্ত হই। কেন সব ব্যাপারে মতামত দেয়, খিটখিট করে তা নিয়ে অশান্তি করি আমরা। ভেবে দেখবেন, মা কিন্তু তাঁর নিজের ভাবনা অনুযায়ী সেরা উপদেশটাই দিয়ে থাকেন। এবং মায়ের অবস্থানে থেকে উপদেশ না দিয়ে হয়তো থাকাও সম্ভব হয় না সব সময়।

অনেক সময়ই যা আমাদের প্রজন্মের কাছে অকেজো হয়তো। রাগারাগি না করে মাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আমাদের জন্মের পর থেকে মায়েদের গোটা জীবনটা জুড়েই থাকি আমরা। সন্তানদের ভালমন্দ, তাদের বেড়ে ওঠা নিয়েই হয় তাদের জগত্‌। কিন্তু বড় হওয়ার পর আমাদের নিজেদের জগত্‌ তৈরি হয়।

মায়ের থেকে অনেক সময়ই দূরে সরে আসি। মায়েরা কিন্তু আমাদের জীবনের অংশ হতে চান। আমরা যাকে মায়েদের অনধিকারচর্চা, কৌতূহল ভাবি তা আসলে আমাদের জীবন থেকে নিজের হারিয়ে যাওয়ার ভয়। ওঁরা সব সময়ই সন্তানের জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকতে চান। যত বয়স বাড়ছে তত কি আপনার মা একটু অবুঝ হয়ে উঠছেন? মায়ের উপর বিরক্ত না হয়ে ওঁকে বোঝার চেষ্টা করুন। মাকে ভালোবাসা আর তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধার বিষয়টি পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরই মধ্যে মাকে ভালোবাসা জানিয়েছেন বহু মানুষ।

 

যেভাবে এলো মা দিবস

মমতাময়ী মা, মাতৃত্ব, মাতৃত্বের বন্ধন ও সমাজে নারীদের অবদানকে সম্মান জানাতেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত পালিত হয় বিশ্ব ‘মা দিবস’।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে আজ দিবসটি পালিত হলেও সব দেশে সব অঞ্চলে কিন্তু একই দিনে এটি পালিত হয় না। মূলত একেক দেশে একেক দিনে দিবসটি পালিত হয়।

যেমন বাংলাদেশে আজ দিবসটি পালিত হলেও কসোভোয় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম রবিবার এটি পালিত হয়। নরওয়েতে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রবিবার, জর্জিয়ায় ৩ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। অর্থাৎ দিবসটির সার্বজনীন কোনো তারিখ বা দিন নেই। তবে তারিখ যা-ই হোক না কেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত রবিবার দিবসটি পালিত হয়।

মা দিবসের কথিত ইতিহাস : একটি গোষ্ঠীর মতে,  দিবসটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল’র উদ্দেশ্যে পালন করা হতো একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুবের সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে উৎসবটি পালিত হতো। প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল। এদিন মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে নানান জিনিস উপহার দেওয়া হতো। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হতো। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হতো প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মতো মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে। মা দিবস ছাড়াও বহু দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয় ৮ মার্চ। জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রক্লামেশন’ বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলোে মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই’র মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোইয়ের এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

কতটি দেশে দিবসটি পালিত হয় : বিশ্বের ৪৬টিরও বেশি দেশে দিবসটি পালিত হয়। মায়ের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশে কেউ মসজিদ, মন্দির বা গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা করেন, আবার কেউ মাকে বিশেষ উপহার দেন, কেউবা মাসহ পরিবারের সঙ্গে ডিনার সারেন। অর্থাৎ মায়েদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ উপলক্ষ্যে একেকজন একেকরকমভাবে দিবসটি উদযাপন করে থাকেন।

দেশে দেশে মা দিবস উদযাপন : যুক্তরাষ্ট্র : উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়।

যুক্তরাজ্য : ইউরোপের এই দেশটিতে চলতি বছর ৬ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। থাইল্যান্ড : দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে দেশটির রাণী সিরিকিতের জন্মদিনে অর্থাৎ ১২ আগস্ট দিবসটি পালিত হয়।

শ্রীলংকা : দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকায়ও আজ রবিবার দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে দেশটিতে মা দিবস উদযাপন তুলনামূলক নতুন।

সিঙ্গাপুর : এশিয়ার এই দেশটিতেও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়। তবে এ দিনে কোনো সরকারি ছুটি নেই।

ভারত : আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও আজ সম্মানের সহিত মা দিবস পালিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.