আজ শহীদ আলতাফ মাহমুদের জন্মদিন

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির মতো এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরের স্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ। আজ ২৩ ডিসেম্বর, এই অমর সুরস্রষ্টার জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে আজ এই সংগীতকারের যাপিত জীবনসংগ্রাম ও দেশপ্রেমের নানাবিধ দিক ও তাঁর সৃষ্টিশীল জীবন নিয়ে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘সুরের বরপুত্র’ শিরোনামের একটি গ্রন্থ। বইটি লিখেছেন দিনু লিল্লাহ।
আজ বুধবার, রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিকেল ৫টায় এ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হবে। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক হায়াত মামুদ, সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা (বীর প্রতীক) গোলাম দস্তগীর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও লেখক দিনু বিল্লাহ।
বইটির মোড়ক উন্মোচনের পর দেশের প্রতিশ্রুতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে সন্ধ্যায় সংগীত ও আবৃত্তির সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদি থানার অন্তর্গত পাতারচর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আলতাফ মাহমুদ ছিলেন তার বারা মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান। তাঁর বাবার নাম নাজেম আলী হাওলাদার এবং মায়ের নাম কদ বানু। আলতাফ মাহমুদের বাবা প্রথমে আদালতের পেশকার এবং পরবর্তীতে জেলা বোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট ভোরবেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সংগীতকার আলতাফ মাহমুদকে ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডের বাসা থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ধরে নিয়ে যায়। সেই সময়ে প্রথমে তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় রমনা থানায়। সেখানে তাঁর ওপরে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর আবারও তাঁকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাতস্থানে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রথম আলো।

 

আলতাফ মাহমুদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আলতাফ মাহমুদ
জন্ম২৩ ডিসেম্বর ১৯৩৩
পাতার চর, মুলাদী, বরিশাল জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
অন্তর্ধান৩০ আগস্ট ১৯৭১ (৩৭ বছর)
অবস্থানিখোঁজ ও মৃত ধরে নেয়া হয়েছে
জাতীয়তাবাংলাদেশী
বংশোদ্ভূতবাঙালি
নাগরিকত্ববাংলাদেশ Flag of Bangladesh.svg
পেশামুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, সংস্কৃতি কর্মী
দম্পতিসারা আরা মাহমুদ
সন্তানশাওন মাহমুদ
পুরস্কারএকুশে পদক, স্বাধীনতা পদক পুরস্কার

আলতাফ মাহমুদ (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৩৩ – অন্তর্ধান: ১৯৭১) একজন বাংলাদেশী সুরকার, সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসে গাওয়া আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির বর্তমান সুরটিও তাঁরই করা। এই গানের সুরকার হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত।

ব্যক্তি জীবন

১৯৩৩ সালের ২৩শে ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলার পাতারচর গ্রামে আলতাফ মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করে বিএম কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে গমণ করেন। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই মাহমুদ গান গাইতে শুরু করেন। তিনি প্রসিদ্ধ ভায়োলিন বাদক সুরেন রায়ের কাছে প্রথম সঙ্গীতে তালিম নেন। তিনি গণসঙ্গীত গাইতে শেখেন যা ঐ সময় তাঁকে অসম্ভব জনপ্রিয়তা ও বিপুল খ্যাতি এনে দেয়।

তিনি সারা আরা মাহমুদকে বিয়ে করেন। তাঁদের সংসারে শাওন মাহমুদ নামীয় কন্যা সন্তান রয়েছে।[১]

১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আলতাফ মাহমুদকে ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডের বাসা থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় কোথাও নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।[১][২]

কর্মজীবন

১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় আসেন এবং ধুমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংস্থাটির ‘সঙ্গীত পরিচালক’ পদে আসীন হন। ১৯৫৪ সালে “ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে” মাহমুদ আমন্ত্রিত হন, কিন্তু করাচিতে পাকিস্তানী সরকার তাঁর পাসপোর্ট আটকে দেয়ায় তিনি এখানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খাঁ’র কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক তালিম নিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি নৃত্য পরিচালক ঘনশ্যাম এবং সঙ্গীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্য্যের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর মাহমুদ ১৯টি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, সংসার, আঁকাবাঁকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, কখগঘঙ, কুচবরণ কন্যা, সুযোরাণী দুয়োরাণী, আপন দুলাল, সপ্তডিঙ্গা প্রভৃতি। এছাড়া তিনি রাজনীতি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথেও জড়িত ছিলেন। সঙ্গীতে প্রতিভা থাকলেও মাহমুদ ছবিও আঁকতে পারতেন।

আন্দোলনে অংশগ্রহণ

১৯৫০ সালের দিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসঙ্গীত গাইতেন। গান গাওয়ার মাধ্যমে মাহমুদ এই আন্দোলনকে সর্বদাই সমর্থন যুগিয়েছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের আলোড়ন সৃষ্টিকারী গানটিতে সুর সংযোজন করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন।[৩] ১৯৬৯ সালে তিনি আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটিতে পুণরায় সুরারোপ করেন, যেটি প্রথমত সুর করেছিলেন আব্দুল লতিফ। এই সুরটি জহির রায়হানের চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া’য় ব্যবহৃত হয়।

১৯৭১ সালে আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তাঁর বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী তাঁকে আটক করে। তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর বাসা থেকে আরো অনেক গেরিলা যোদ্ধা আটক হয়।[৪] এদের অনেকের সাথে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন।[৫] পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রারিত করেছিল।

সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. ঝাঁপ দাও:১.০ ১.১ ১.২ দৈনিক প্রথম আলো, মুদ্রিত সংস্করণ, সারা দেশ, পৃষ্ঠা ১৬, ৩১ আগস্ট, ২০১২, সংস্কৃতি সংবাদ – শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মরণ ও পদক প্রদান
  2. ঝাঁপ দাও শহীদ আলতাফ মাহমুদ ডট কম
  3. ঝাঁপ দাও বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদনা: সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ২য় সংস্করণ, ১৯৯৭, পৃষ্ঠা-৬৯
  4. ঝাঁপ দাও জাহানারা ইমাম, “একাত্তরের দিনগুলি’’, সন্ধানী প্রকাশনী, pp. 187-189 ISBN 984-480-000-5
  5. ঝাঁপ দাও আহমেদ, মনোয়ার, ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল, আগামী প্রকাশনী, pp.111

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.