আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে আজকের পৃথিবী। আধুনিক বিশ্বে নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে একইসঙ্গে সব স্তরে কাজ করছে। তবে নারীর ন্যায্য অধিকার নিয়ে কর্মস্থলে সফলভাবে কাজ করতে পারার পেছনে রয়েছে এক সাহসী সংগ্রামের ইতিহাস।

এ বছরে নারী দিবসে জাতিসংঘের স্লোগান ‘নারীপুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্বকর্মে নতুন মাত্রা’। এই প্রতিপাদ্য বিষয়ই ইঙ্গিত দেয় যে ক্ষমতায়নের বিচারে পুরুষের তুলনায় নারী আজও পিছিয়ে আছে এবং মানবতার অগ্রযাত্রার স্বার্থেই এ বৈষম্যের বিলুপ্তি কাম্য।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) পালিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য ভিন্ন। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের বিষয় মুখ্য, আবার কোথাও নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।

১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।

এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।

১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে থাকে। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জনের আগে থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে।

অতঃপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা বিশ্বে জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি। নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে  আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ,  ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,  উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া।

এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,  নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটি হিসেবে নারী দিবসে ছুটি ভোগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.