আষাঢ়ের প্রথম দিন
আষাঢ়স্য প্রথম দিবস আজ। পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে, নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে আসছে বর্ষা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা–’।
বৃষ্টিতো হচ্ছে ক’দিন ধরেই। গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্নতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সেজেছে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশেও ঘন মেঘের ঘনঘটা। কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ যখন পুড়ছে তখন ব্যাপক আয়োজনে বর্ষার এই ঝুম ঝুম বৃষ্টির বরণডালা মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দিচ্ছে বর্ষাতো এসেই গেছে।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। রবী ঠাকুরের ভাষায়, “আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে… আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…”
প্রতিবছরের মত এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং গানের দল আয়োজন করছে বর্ষাবরনের । সরকারি – বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও থাকবে বর্ষা নিয়ে নানা আয়োজন। দেশের নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বর্ষাকে নিয়ে নানা মিথ। কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাকে বরণ করে ভিন্ন মাত্রায়। প্রতিবছর তারা কক্সবাজরর সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপি বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা এ বর্ষা বরণ উৎসবে যোগ দেয়।
তবে হঠাৎ বর্ষা যেমন আনন্দের, বর্ষার নির্মম নৃত্য তেমনি হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। তবুও বর্ষা বাঙালী জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলীর আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষতো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।