ইতিহাস গড়লো বাংলার টাইগ্রেসরা
বেশ কয়েকবার টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললেও শিরোপার স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল। এবার সেই আক্ষেপ মেটালো নারীরা। ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ট্রফি জিতল বাংলাদেশ।
ভারতের দেওয়া ১১৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশের। জাহানার-শুকতারার ব্যাটে সহজেই এসেছে জয়। ওপেনিং জুটিতে আয়েশা ও শামিমা শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে ভারতীয় স্পিনার পুনম যাদবের পর পর দুই বলে আয়েশা (১৬) ও শামিমা (১৭) সাজঘরে ফিরলে কিছুটা বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এই জুটিতে আসে ৩৫ রান। ফলে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে হাফসেঞ্চুরি করা ফারজানা হক ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা দেখে শুনে খেলতে থাকেন। যদিও অফস্ট্যাম্পের বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ফারজানা (১১)।
চতুর্থ উইকেটে নিগার ও ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা মিলে জয়ের কাছেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। আচমকা পুনম যাদবের ফুলটস বল মিড অনে খেলতে গিয়ে নিগার ক্যাচ তুলে দিলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ২৪ বলে ৪ চারে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন নিগার।
বাকি দায়িত্বটুকু ঠিকভাবেই সামলাচ্ছিলেন ফাহিমা-রুমানা। আর শেষ দিকেই নড়বড়ে পরিস্থিতিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সাত রান করে আউট হন ফাহিমা। ৬ষ্ঠ উইকেটে সানজিদা ও রুমানা মিলে জয়ের কাছেই ছিলেন। কিন্তু সানজিদা বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার পর পর রুমানাও ফিরে যান রান আউটে। ফেরার আগে ২২ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
শেষ ওভারে ৯ রান খেলতে গিয়ে শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দুই রান। জাহানারা বলটি বাঁ পাশে ঠেলেই দেন ছুট। দৌঁড়ে দুই রান নিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশের নারীরা। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন রুমানা আহমেদ।
কুয়ালালামপুরে ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে শুরুতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ভারত ইনিংসের ৪র্থ ওভারে রানআউটের মাধ্যমে প্রথম ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। নাহিদা আকতারের দুর্দান্ত থ্রো’তে ৭ রান করে ফেরেন স্মৃতি মান্ধানা। রানের চাকা থামিয়ে দেন সালমা-নাহিদারা।
ইনিংসের ৭ম ওভারে দীপ্তি শর্মাকে সরাসরি বোল্ড করেন জাহানারা আলম। পরের ওভারেই খাদিজা তুল কুবরার বলে ফারজানা হকের তালুবন্দী হন মিতালি রাজ। এর ঠিক এক ওভার পরে উইকেটরক্ষক শামীমা সুলতানার থ্রো ইচ্ছাকৃতভাবে থামান অনুজা পাতিল। এতে তাকে আঙুল তুলে সাজঘরে পাঠান আম্পায়ার।
এরপরে মাঠে নামেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত। ভেদা কৃষ্ণামূর্তির সঙ্গে ধাক্কা সামলে নেন। ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন সালমা খাতুন। ১৩তম ওভারে কৃষ্ণামূর্তিকে বোল্ড করেন তিনি। তখনও এক প্রান্ত আগলে রেখে এগিয়ে যান হারমানপ্রিত। ঝুলান গোস্বামিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ৩৩ রানের জুটি। ইনিংসের শেষ বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ৫৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন হারমানপ্রিত। তার আগে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ঝুলানও। সবমিলিয়ে ভারতের ইনিংস থামে ৯ উইকেটে ১১২ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে রুমানা আহমেদ ও খাদিজা পেয়েছেন দুটি করে উইকেট। এছাড়া সালমা, জাহানারা পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন উদ্বোধনী জুটি আয়েশা ও শামীমা। সপ্তম ওভারে দলীয় ৩৫ রানের মাথায় ভারতের ব্রেক থ্রু এনে দেন পুনম যাদভ।
২০০৪ থেকে শুরু হয়েছে মেয়েদের এশিয়া কাপ। ভারত গত ৬ আসরের সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এবারের আসরসহ তিনটি আসরে মাঠে নেমেছে। আগের দুই আসরে সাদামাটা পারফরম্যান্স করলেও তৃতীয় আসরে শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছে সালমারা। শুধু তাই নয়, আরও একটি বৃত্ত ভেঙেছে বাংলাদেশ। এতদিন ভারতের বিপক্ষে খেলা মানেই ছিল বাংলাদেশে হার। কিন্তু এবার সব সমীকরণ ভেঙে অসাধ্য সাধন করেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের মধ্যে ভারত জিতেছে ৮টিতে। আর হারের বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টেই জিতলো দুটিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১১২/৯ (মিতালি ১১, স্মৃতি ৭, দিপ্তি ৪, হারমানপ্রিত ৫৬, অনুজা ৩, ভেদা ১১, তানিয়া ১, শিখা ১, ঝুলন ১০, একতা ১*; নাহিদা ০/১২, সালমা ১/২৪, খাদিজা ২/২৩, জাহানারা ১/২৩, রুমানা ২/২২, ফাহিমা ০/৮)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৩/৭ (শামিমা ১৬, আয়েশা ১৭, ফারজানা ১১, নিগার ২৭, রুমানা ২৩, ফাহিমা ৯, সানজিদা ৫ জাহানারা ২*, সালমা ০*; একতা ০/১৩, শিখা ০/১০, দিপ্তি ০/১৯, অনুজা ০/২৩, পুনম ৪/৯, ঝুলন ০/২০, হারমানপ্রিত ২/১৯)।