ইসলামে সম্পদ উপার্জন ও খরচের ৪টি মূলনীতি
আমিন ইকবাল : সম্পদ আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নেয়ামত। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্পদ দান করেন; আবার যার থেকে ইচ্ছা সম্পদ ছিনিয়েও নেন। সম্পদের কারণে অনেকে সম্মানিত হয়, অনেকে হয় অপমানিত। কখনও কখনও সম্পদ ফেতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়!
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘প্রতিটি উম্মতের একটা ফেতনা ছিল। আমার উম্মতের ফেতনা হলো সম্পদ।’ [মেশকাত : ৫১৯৪]। এ ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক সম্পদশালীর একান্ত দায়িত্ব। সম্পদের ব্যাপারে চারটি মূলনীতি অনুসরণ করলে ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। দুটি মূলনীতি সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে, দুটি খরচ করার ক্ষেত্রে।
উপার্জনের দু’টি মূলনীতি হলোÑ
এক. হারাম পদ্ধতি অবলম্বন করে সম্পদ উপার্জন করা যাবে না। হালাল পন্থা অবলম্বন করলে কখনও ফেতনায় পড়তে হবে না। বরং হালাল উপার্জন দ্বারা নেকি অর্জন হবে, নামাজ-রোজা করলে যেমন নেকি হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘হালাল পদ্ধতিতে সম্পদ উপার্জন করা, অন্যান্য ফরজের পরেই ফরজ।’ [মেশকাত : ২৭৮১।
দুই. সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মূলনীতি হলোÑ নিয়ত শুদ্ধ রাখতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি হালাল পদ্ধতিতে সম্পদ উপার্জন করবে, যাতে মানুষের কাছে হাত বাড়াতে না হয় এবং সেই টাকা-পয়সা দিয়ে বালবাচ্চা লালন-পালন করা, পাড়া-প্রতিবেশী গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহমর্মিতা করা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার চেহারা চৌদ্দ তারিখের রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে।’ [মেশকাত : ৫২০৭]।
হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন যদি এই নিয়তে করে যে, আমার টাকা বেশি হবে। আমি বড় ধনী হবো, সমাজে আমার মান বৃদ্ধি হবে, মানুষ আমাকে ধনী বলবে, তাহলে হালাল পন্থা হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা তার ওপর অসন্তুষ্ট হবেন। ওই হাদিসের শেষাংশে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি টাকা-পয়সা হালাল পন্থায় কামাই করে প্রাচুর্য ও প্রতিযোগিতার নিয়তে, অহঙ্কার ও লোক দেখানোর জন্য, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন।’
খরচের দু’টি মূলনীতি হলোÑ
এক. বৈধ স্থানে খরচ করতে হবে। অবৈধ স্থানে খরচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবৈধ স্থানে খরচকারীকে কোরআনের ভাষায় ‘মুবাজজির’ তথা অপব্যয়কারী বলে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ [বনি ইসরাইল : ২৬-২৭]।
দুই. খরচের ব্যাপারে দ্বিতীয় মূলনীতি হলো, বৈধ স্থানে বৈধ পন্থায় খরচ করতে হবে। বালবাচ্চাদের জন্য খরচ করা বৈধ। কিন্তু অবৈধভাবে খরচ করা যাবে না। অতিরঞ্জিত খরচ করা যাবে না, আবার একেবারে কমও করা যাবে না। বৈধ স্থানে অতিরঞ্জিত খরচ করাকে কোরআনের ভাষায় ‘ইসরাফ’ (অপব্যয়) এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম খরচ করাকে ‘তাকতির’ (কিপটামী) বলে। দুই পন্থা থেকেই বিরত থাকতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করতে হবে। ভালো খাওয়া-পরার সামর্থ্য থাকলে ভালো খাবেন, ভালো পরবেন। টাকা-পয়সা কম থাকলে অতিরঞ্জিত করবেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা খাও, পান করো। অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ [সুরা আরাফ : ৩১]।