উত্তর দিনাজপুরের সেই ভিক্ষুকের মেয়ে এখন জার্মানির এমপি

নন্দিনী সৃষ্টি করলেন ইতিহাস, এটা কোন নাটক কিংবা সিনেমার গল্প নয় বাস্তবের নন্দিনী অনেক বেশী সৃজনশীল. এই নন্দিনী কাপাচ্ছে সমগ্র ভারতবর্ষ, বাংগালী মেয়ে নন্দিনী জন্ম উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে,এই রায়গঞ্জ এবং দুর্গাপুরে নন্দিনীর বেড়ে ওঠা, নন্দিনীর বাস্তব সত্য পথের প্যাচালীর অপু দুর্গা কেও হার মানিয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা,চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ হাসপাতালের ঠিক একটু পিছনে নন্দিনীদের বাড়ি,নন্দিনীর বাবা সমৃদ্ধ কোন ব্যবসায়ী কিংবা চাকুরিজীবী নয়, নেই কোন পৈত্রিক সম্পত্তির বৈভব।

নন্দিনীর বাবা হরিনাথ ফকির ছিলেন স্থানীয় একটি মন্দিরের দায়িত্বে,প্রতিদিন মন্দিরের আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে চাউল তুলতেন মন্দিরের জন্য,সেই চাউলের একটি অংশ মন্দিরে দিতেন আর একটি অংশ তিনি নিজে রাখতেন। মাঝেমধ্যে নন্দিনী তার বাবার সাথে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন চাউল সংগ্রহ করার জন্য। নন্দিনীর বয়স যখন ছয় বছর তখন তিনি ভর্তি হন দুর্গাপুর স্কুলে।

এখান থেকে ভালো ফলাফল করে নন্দিনী আসেন রায়গঞ্জ কলেজে,নন্দিনীর বয়স যখন আঠারো বছর তখন হরিনাথ ফকির ইহলোক ত্যাগ করেন,নন্দিনীর আর কোন ভাই বোন ছিলেন না,নন্দিনী তার মাকে নিয়ে খুব বেকায়দায় পড়েন কিন্তু হাল ছাড়েনি ব্যাপক প্রতিকুলতার মাঝে নন্দিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য ভর্তি হন,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা কালীন নন্দিনী একটি ছোট্ট পত্রিকায় খন্ডকালীন চাকরি পান মডারেটর হিসেবে. নন্দিনী বেশ সফলতার সহিত তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে আবারো বাধ সাধে বিধাতা,নন্দিনীর একমাত্র ভরসা তার মা পৃথিবী থেকে স্বর্গে চলে যান,এক অসহায় অবস্থায় নন্দিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে,নন্দিনীর আপন বলতে এই মর্ত্যে আর যে কেউ থাকলো না,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই কে অবাক করে নন্দিনীর ফলাফল,ইতিহাস ঐতিহ্য এবং ভাষা ও সংস্কৃতিতে উচ্চতর গবেষণার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান সুদূর জার্মানিতে,জার্মানির সারলান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন,সারলান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীরা তাদের ফান্ড বৃদ্ধির জন্য একসময় আন্দোলন করেন নন্দিনী সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন,সবার দৃষ্টি পড়ে নন্দিনীর উপর, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নন্দিনী জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে,সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জার্মানি দলের সাথে নন্দিনীর সখ্যতা ক্রমেই বাড়তে থাকে,একসময় এই পার্টিতে নন্দিনীর অবস্থান হয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে (এশীয় অঞ্চল)।

সেই সাথে এই পার্টি থেকে প্রকাশিত পত্রিকার মুল সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। গতবছরের নভেম্বরে সারলান্ডের আনাট্রপলি অঞ্চলের উপনির্বাচনে নন্দিনী তার পার্টি থেকে নমিনেশন পাই এবং সিডিএফের প্রার্থী জন্টস কে তিন শত দুই ভোটের ব্যাবধানে হারান.কলকাতা থেকে যাবার পর নন্দিনীর প্রায় দশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এরমধ্যে নন্দিনী দেশে এসেছেন মাত্র দুইবার তবে নন্দিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জার্মানিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য. নন্দিনী জানিয়েছেন বাইরে থেকে যারা জার্মানিতে পড়াশোনা করতে আসেন তাদের জন্য জার্মান ভাষা বাধ্যতামূলক লেভেল 2 পর্যন্ত কিন্তু এই নিয়ম ভারতীয়দের জন্য অনেক কঠিন তাই তিনি জার্মান শিক্ষামন্ত্রণায়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় চাইবেন,নন্দিনী ইতোমধ্যে বিয়ে করেছেন সারলান্ড অঞ্চলের স্বনামধন্য ব্যাবসায়ী বেঞ্জামিন কে,নন্দিনী – বেঞ্জামিন দম্পতির আছে দুই ছেলে। নন্দিনী আগামী মার্চে কলকাতা আসবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান,নন্দিনীর পুর্ব পুরুষের ভিটা যে বাংলাদেশে ছিলো একথা নন্দিনী তার বাবা মায়ের মুখে শুনেছেন,আলাপচারিতার একপর্যায়ে নন্দিনী সেটাও উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.