এক পতাকাতলে গোটা বিশ্ব

শত্রুতা নয় বন্ধুত্ব, লড়াই নয় প্রতিযোগিতা, জয় নয় অংশগ্রহণ।

শতবর্ষেরও আগে ধর্ম, বর্ণ, জাতির ভেদ ঘুচিয়ে বিশ্ব মানবকে একই পতাকাতলে আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা- ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তিন। বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে সাম্যের বাণী ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন এই ফরাসি। যার যথার্থ উত্তরাধিকার বহন করে ব্রাজিলের রিওতে বসছে বিশ্ব অলিম্পিকের ৩১ তম আসর।

আট বছর আগের বেইজিংয়ের মতো জাকজমক নেই, নেই চার বছর আগের লন্ডনের মতো শান্ত নীরবতা- তারপরও ১৯ দিন ধরে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে থাকবে রিও অলিম্পিক। ৪২টি খেলায় ৩১১ ইভেন্টে অংশ নিবেন ২০৮ টি দেশের ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেট। মোট ৩০৬ টি পদকের জন্য লড়বেন তারা।

আগামীকাল ভোরে হয়তো সাক্ষী হবেন মারকানা স্টেডিয়ামের বর্ণিল আতশবাজির। বেইজিংয়ের মতো জাকজমক হয়তো খুঁজে পাবেন না। কিন্তু তারপরও রিও অলিম্পিক অনন্য। এবারই যে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকের পতাকাতলে গৃহহারা ৪৩ শরণার্থী। সহিসংতা ছাপিয়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিবেন ইউসারি মারদিনিরা। এমন দিনটা দেখে যেতে পারলেই হয়তো সবচেয়ে বেশি শান্তি পেতেন কুবার্তিন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই গত পরশু মেয়েদের ফুটবল দিয়ে শুরু হয়ে গেছে আসর। আনুষ্ঠানিকতা শুরু আর্চারি দিয়ে। তবে প্রত্যেকবারের মতো এবারো মূল নজরটা থাকবে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে। যেটা শুরু হবে ১২ আগস্ট। শেষ হবে ২১ আগস্ট ম্যারাথন দিয়ে। যেখানে আরো একবার বিস্ময় উপহার দেয়ার অপেক্ষায় উসাইন বোল্ট।

ব্রাজিলের মাটিতে পা রেখেই ‘লাইটিং বোল্ট’র আলোয় রিওকে উদ্ভাসিত করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন জ্যামাইকান গতি দানব। বেইজিং এবং লন্ডন অলিম্পিকে যেটা করেছেন, তাতেই বোল্টের জন্য অমরত্বের আসন ছেড়ে দিয়েছে ইতিহাস। ‘ট্রিপল ট্রিপল’ জিতে সেটাকে আরো দৃঢ়তা দেয়ার অপেক্ষায় জ্যামাইকান কিংবদন্তি।

বোল্ট ভক্তরা কিছুটা চিন্তিত হতে পারেন কয়েকদিন আগের ইনজুরির কথা ভেবে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে তো জ্যামাইকান অলিম্পিক ট্রায়েলেই অংশ নিতে পারলেন না। এই ফিটনেস নিয়ে রিওতে ১০০, ২০০ কিংবা ৪০০ মিটার রিলেতে কি দেখা যাবে অপ্রতিদ্বন্দ্বি বোল্টকে?

স্মৃতিশক্তি দ্বারা প্রতারিত না হলে উত্তরটা হ্যাঁ-ই হবে। মনে করে দেখুন, চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিকের আগেও হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ভুগছিলেন বোল্ট। তিনটি ইভেন্টেই বিস্ময় উপহার দিয়েছিলেন জ্যামাইকান কিংবদন্তি। বছর খানেক আগে চীনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের কথাও মনে করতে পারেন। বেইজিং-এ আসার আগেও তো পিঠের ইনজুরিতে ভুগছিলেন তিনি।

চোখ থাকবে সাঁতারেও। এটাই হয়তো শেষ অলিম্পিক আমেরিকান কিংবদন্তি মাইকেল ফেলপসের। ১৮ স্বর্ণসহ ২২ টি পদজয়ী অলিম্পিয়ানের অমরত্ব পেতে তো আর কিছু প্রয়োজন নেই। পারফরম্যান্সও হয়তো আগের মতো নেই। কিন্তু ফেলপসের উপর নজরটা থাকবে অন্য কারণে। লন্ডন অলিম্পিকের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন অবসরের। তারপর জীবন-যাপন সম্পর্কে হয়ে পড়লেন কিছুটা ছন্নছাড়া। পুনর্বাসন কেন্দ্রেও যেতে হয়েছে। শেষের আগে মনে মনে হয়তো একটা বার্তা দেয়ার জন্যই আবার ফিরে এসেছেন, ফেলপস আছে ফেলপসের মতোই।

পদক জয়ে গত কয়েক অলিম্পিক ধরেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে। এবার কিন্তু তাদের সঙ্গী রাশিয়া। না, প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে নয়। মূল আকর্ষণ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডেই যে নেই তারা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ড্রাগ সেবনের অভিযোগে রিও অলিম্পিক থেকে তাদের নির্বাসিত করতে উঠে পড়ে লেগেছিল বিশ্ব অ্যাথলেটিকস। সেই ক্ষোভটা কি কিছুটা হলেও উগরে দিতে চাইবে না তারা!

স্বাগতিক ব্রাজিলের প্রেরণাটা অন্য রকম। বেতন ভাতা, মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অধিকাংশ ব্রাজিলিয়ন। প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন রিওর বিপক্ষে। প্রথমবারের মতো অলিম্পিক স্বর্ণ জিতে দেশের মানুষের ক্ষোভে কিছুটা হলেও প্রলেপ নিশ্চয়ই নিতে চাইবেন নেইমাররা।-বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.