এরশাদের আত্মজীবনী : প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর মন্ত্রীরা সব ভীত হয়ে নিজ নিজ বাসভবন ত্যাগ করেন

আত্মজীবনীমূলক বই লিখেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বইটি লিখতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে তার। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় উপলক্ষে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। ৮৮০ পৃষ্ঠার এ বইয়ে শৈশব, কৈশোর, সামরিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম, বিয়ে, পারিবারিক অনেক কথা তুলে ধরেছেন তিনি। বইয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বগুণ ও তার জনপ্রিয়তার আকর্ষণীয় বর্ণনা। হাজার টাকা মূল্যের এ বইটিতে জিয়াউর রহমান হত্যায় জেনারেল আবুল মঞ্জুরের সম্পৃক্ততা এবং সঙ্কটময় ওই সময়ে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে তার ভূমিকার সব ইতিবৃত্ত তুলে ধরেছেন। এছাড়া বইয়ে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে বিচারপতি সাহাবউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকাও। ওই সরকার ব্যবস্থার ব্যাপক সমালোচনাও করেছেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। বইটিতে লেখকের বক্তব্যের বিভিন্ন দিক ধারাবহিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বাংলামেইল২৪ডটকম।
জিয়াউর রহমান একই সঙ্গে দেশের প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বে থাকায় সেনাবাহিনির প্রতি ততোটা মনোযোগী হতে পারছিলেন না। কেননা রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ ‘আমার কর্ম আমার জীবন’শীর্ষক বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, তার ওপর গভীর আস্থা থাকায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সঙ্গে নিজেকে বেশি সময় যুক্ত রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিন বছর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭৮ সালের ১ ডিসেম্বর আমাকে চিফ অব স্টাফ হিসেবে পদোন্নতি দেন।
এরশাদ আরো লিখেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্টের আগ্রহেই আমাকে এই পদোন্নতি হয়েছিল। এরশাদের আত্মজীবনী ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ গ্রন্থের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ড ও চট্টগ্রাম বিদ্রোহ অধ্যায় এরশাদ এসব কথা লিখেন। এই অধ্যায়ের শুরুতেই তিনি লিখেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা এবং পরবর্তীকালে জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করার পর ১৯৮১ সালের ৩০ মে জাতির কপালে আরও একটি কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়। এদিন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী অফিসার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে। জিয়া হত্যায় মঞ্জুরকে সরাসরিই অভিযুক্ত করেছেন এরশাদ তিনি বইতে আরো লিখেছেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যার সময় আমি দিল্লিতে, আর জিয়াউর রহমান হত্যার সময় তো আমি ঢাকাতেই, সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। জিয়া হত্যা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যা লিখেছেন তার এরকম : চট্টগ্রামে ওই বিদ্রোহের ঘটনায় প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা রক্ষীসহ আরও কয়েকজন নিহত হন। ৩০ মে ভোর চারটার দিকে এই দুঃসংবাদটি আমি জানতে পারি। প্রথমে আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার তখন অসুস্থ অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমি তৎক্ষণাৎ সিএমএইচ-এ গিয়ে তাঁকে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু-সংবাদটি জানাই এবং সংবিধান মোতাবেক সব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করি। জাতির ওই সংকটকালে তাঁর যে কোনো পদক্ষেপের প্রতি সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিই। সকাল দশটার কিছু পরে বেতারে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু-সংবাদ প্রচারিত হলে ঢাকাসহ দেশের সকল এলাকার লোকজন স্তম্ভিত হয়ে যায়। তাঁর এই বেদনাদায়ক মৃত্যু গোটা জাতিকে শোকাচ্ছন্ন করে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজ খালি হয়ে যায়, ফাঁকা হয়ে যায় অফিস-আদালত ও ব্যস্ত রাজপথ। প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর মন্ত্রীরা সব ভীত হয়ে নিজ নিজ বাসভবন ত্যাগ করলেন। ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার রেডিও-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু-সংবাদ দেশবাসীকে অবহিত করেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫ (১) ধারার বিধান বলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ ও সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। দেশের ওই চরম সঙ্কট মুহূর্তে বিদ্রোহ দমনের জন্য অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আমাকে ক্ষমতা দেয়ার পর আমি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে কোনোরকম প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হয়ে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবিচল থাকার জন্য সারা দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানাই।
বইয়ের প্রচ্ছদ বিবৃতিতে আমি প্রেসিডেন্টের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেই। জেনারেল মঞ্জুরসহ চট্টগ্রামের সব দুষ্কৃতকারী ও তাদের কমান্ডিং অফিসারদের আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়ার পর বিপুল সংখ্যক অনুগত অফিসার ও সৈন্য আমার আহ্বানে সাড়া দেয়। বিবৃতিতে আমি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করি যে, মুষ্টিমেয় দুষ্কৃতকারী ছাড়া দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্য সরকারের প্রতি অনুগত এবং জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য ৪০ দিন জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। পরদিন সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট জিয়ার গায়েবানা জানাজা। সকালের অঝোর ধারার বর্ষণ উপেক্ষা করে লাখো মানুষ সমবেত হয় ওই জানাজায়। ১ জুন চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানের জানাজায় দু লাখ শোকার্ত মানুষ অংশ নেয়। পরের দিন মরহুম প্রেসিডেন্টের মরদেহ আনা হয় ঢাকায়। শেরে বাংলা নগরে স্মরণকালের এক বৃহত্তম জনসমুদ্রে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কোনো কোনো মৃত্যু যে জীবনের চেয়েও বড়, প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পর তাই যেন আরেকবার প্রমাণিত হলো।
ওইদিনই সন্ধ্যায় অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার বঙ্গভবনে মন্ত্রিপরিষদ ও দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারের মাত্র দুজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত সবাই চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান এবং নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি তাদের অবিচল আস্থার কথা পুনরায় প্রকাশ করেন এবং ধ্বংসাত্মক পথ ত্যাগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। এ সময়ে আমরা তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিডিআর ও পুলিশ প্রধানরা বঙ্গভবনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে নিয়মতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আমাদের সর্বাত্মক আনুগত্য ঘোষণা করি এবং শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রশ্নে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিই। পরবর্তী কয়েকদিন আমি যশোর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও সৈয়দপুর সেনানিবাস পরিদর্শন করে সেসব সেনানিবাসের অফিসার ও জওয়ানদের যে কোনো মূল্যে অধিকতর ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের সাথে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ প্রদান করি। সঙ্কটের এ সময়ে সেনাবাহিনীর ভুমিকার কথা তুলে ধরতে গিয়ে নিজের কৃতিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য পাঠকের সামনে তুলে ধরেন এরশাদ। বলেন, সেনাবাহিনীর দৃঢতা ও সাহসিকতায় সঙ্কট উত্তরণের পাশাপাশি বিদ্রোহ নির্মূল, বিদ্রোহের নায়ক ও মূল পরিকল্পনাকারী মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল। গ্রেপ্তার করে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়ার পথে বিক্ষুব্ধ সৈনিকদের গুলিতে জেনারেল আবুল মঞ্জুর নিহত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন লেখক এরশাদ। তিনি লিখেছেন, তৎকালীন বিএনপি সরকার প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নির্মম হত্যা এবং পরবর্তী সময়ে জেনারেল আবুল মঞ্জুর বিক্ষুব্ধ সৈনিকদের গুলিতে নিহত হওয়ার বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়। বিস্ময়ের ও বেদনার বিষয় এই যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন মারা যান, তখন তারাই তো ক্ষমতায় ছিলেন। জিয়াউর রহমান সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর সরকারের লোকজন থানায় গিয়ে কেনো হত্যাকান্ডের বিষয়ে এজাহার দেননি, সে সম্পর্কে বিএনপি সরকারের তৎকালীন কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারেন। জিয়া হত্যার প্রতিবাদ করার সুযোগ বিএনপি’র হাতে ছিল। নিজ দলীয় কোনো লোকজন তাঁর হত্যার ব্যাপারে কোনো ভূমিকা নিয়েছিলেন কী-না, তা-ও সহজেই বের করা সম্ভব ছিল। কিন্তু বিএনপি তখন তাদের নিজ দায়িত্ব পালন করেনি। তারপরেও দু’দুবার তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল।
তিনি আরো লিখেছেন, ১৯৯০-এ আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আমাকে তো জেলেও ঢোকানো হয়েছিল। এমন এমন তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ৪৩টি মামলা দায়ের করা হলো, যার কোনোটিরই কোনোরকম ভিত্তি ছিল না, অথচ আমি জিয়াউর রহমান সাহেবের ‘খুনি’ তখন এমন একটি মামলাও তারা করতে পারলেন না। আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য ওই একটি মামলাই তো যথেষ্ট ছিল। দেশের একজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হলেও মানুষ থানা ও কোর্টে যায়, বিচার চায়। অথচ দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হলো, তার বিচার হলো না। আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন আমিও বলেছি, জিয়া হত্যার বিচার হোক। সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে আমি বিপথগামী ঘাতক সেনা সদস্য ও বিদ্রোহের বিচার আইনানুযায়ী সেনা প্রধান হিসেবে আমার ওপরে এই বিদ্রোহের বিচারের দায়িত্ব বর্তায়। আজ এতো বছর পর অভিযোগ করা হচ্ছে, আমি জিয়া ও মঞ্জুরের খুনি। মঞ্জুর হত্যার ১৪ বছর ৯ মাস পর আমাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হলো। এটা যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে, দেশের মানুষের বুঝতে আশা করি কোনো অসুবিধা হয়নি। একটি কথা আমি অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আর সেটা হলো এই যে, আমি কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক চক্রান্ত কিংবা মতলববাজির ধার ধারিনি এবং গোপন চক্রান্তকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করি। কারণ, ওটা কাপুরুষের ধর্ম, সৈনিক বা বীরের ধর্ম নয়। এ বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে আর কোনো কথা বলা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি, কারণ বিষয়টি এই মুহূর্তে আদালতে বিচারাধীন।

Book of Ershad
সাবেক রাষ্ট্রপতি তার বইয়ে আরো লিখেছেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার বিদ্রোহ নির্মূল করার জন্য সশস্ত্রবাহিনীকে অভিনন্দন জানান। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির এটা পরম সন্তোষের বিষয় যে, স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের নির্দেশে সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্য কঠোর শপথ নিয়ে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত ট্রাইবুনাল, বিচারের জন্য কোর্ট মার্শাল এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। জুলাইয়ের ১০ তারিখে চট্টগ্রামে কোর্ট মার্শালে বিদ্রোহের বিচার শুরু হয়। আগস্ট মাসের ৪ তারিখে চট্টগ্রাম বিদ্রোহ ও প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যা সম্পর্কে সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। উক্ত শ্বেতপত্রের তিনটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পটভূমি, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে বিদ্রোহের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি, চক্রান্ত বাস্তবায়ন, বিদ্রোহ-পরবর্তী তৎপরতা ও বিদ্রোহের অবসান ও পরিণাম। শ্বেতপত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে বিচারের বিবরণ। এই অধ্যায়ে আদালত গঠন, বাদি-বিবাদিদের বক্তব্য, কৌঁসুলির প্রারম্ভিক বক্তব্য, সাক্ষীর বিবৃতি ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ডিফেন্সিং অফিসারদের বক্তব্যের বিবরণ রয়েছে। এই অধ্যায়ের শেষে রয়েছে সিদ্ধান্ত। ওই শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অপসারিত করে সামরিক সরকার গঠন করার লক্ষ্যেই সুপরিকল্পিতভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়।
শ্বেতপত্রে মন্তব্য করা হয়, যে কোনো বিবেচনায় এই হত্যাকান্ড একটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ এবং ইতিহাসে এক জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। শ্বেতপত্রের একটি স্থানে উল্লেখ করা হয় যে, …বড় কিছু অর্থাৎ নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে যে কোনোভাবে অপসারণ করিয়া অন্তত তিন বছরের জন্য দেশে সামরিক সরকার কায়েমের চিন্তা ক্রমাগত তাহাকে (জেনারেল মঞ্জুরকে) আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে। সামরিক সরকার কায়েম করিতে পারিলে তিনি হইবেন সর্বেসর্বা এবং তথাকথিত অনাচার তিনি দূর করিবেন, এমন বাসনা তাহার ছিল। দেশের শাসনভার অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে থাকিতে হইবে, এমন বাতিকে তাহাকে পাইয়া বসে। প্রেসিডেন্ট জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তেমন কিছু করিতেছেন না বলিয়া তিনি ধারণা পোষণ করিতেন…(দৈনিক ইত্তেফাক, ৫ আগস্ট ৮১) । ‘সুযোগ পাইলেই তিনি (জেনারেল মঞ্জুর) সেনাবাহিনীর সদর দফতরের নীতির, সিনিয়র অফিসার ও সেনাবাহিনীর এবং দেশের দুর্নীতির সমালোচনা করিতেন। তাহার ধারণা ছিল দেশে কোনো কিছুই ঠিকমতো চলিতেছে না… (দৈনিক ইত্তেফাক, ৫ আগস্ট ১৯৮১) । হাটহাজারী থানা থেকে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে বহনকারী গাড়িটি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের অফিসার্স মেসের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সময় উত্তেজিত সৈন্যরা বিদ্রোহী এই সেনা কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ জেনারেল মঞ্জুরকে গুরুতর অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন (দৈনিক সংবাদ, ৯ আগস্ট ’৮১)। (চলবে) উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মুক্তিযুদ্ধ হলে আলোচিত এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সাবেক মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী। সেদিন থেকেই অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে। বইটির প্রকাশক আলমগীর শিকদার লোটন আকাশ এবং প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ও রিপন জোয়ার্দার। বাংলামেইল২৪ডটকম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.