এসএ গেমসে আরও এক স্বর্ণময় দিন দেখল বাংলাদেশ

সএ গেমসের সপ্তম দিনে দেশের বাইরে পাওয়া সেরা সাফল্যকে ছুঁয়েছিল বাংলাদেশ। অষ্টম দিন সকালেই আরচারি রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে সোনা জিতে অ্যাথলেটরা গড়েন সাফল্যের নতুন ইতিহাস। বিকালে সেটিকে ছাড়িয়ে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেল আরচারি। তার সঙ্গে নারী ক্রিকেটের সাফল্য মিলে বাংলাদেশের স্বর্ণ সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১৪তে। গতকাল একদিনেই রেকর্ড সাতটি স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে আগের সেরা সাফল্য ছিল ১৯৯৫ সালে, মাদ্রাজের এসএ গেমসে। সেবার ৭টি সোনার পদক পেয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে গেমসে অবশ্য এর চেয়েও বেশি সাফল্য আছে।

১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো এসএ গেমসের আয়োজন করে বাংলাদেশ জিতেছিল ৯টি সোনা। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় দফার আয়োজনে অর্জন ১১টি। আগের দুই আসর ছাপিয়ে ২০১০ সালে ১৮টি সোনার পদক জিতেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। আরচারিকে নয়া ইতিহাসের হাতছানি দিচ্ছে। এক আসরে এক ডিসিপ্লিনে সর্বাধিক ছয়টি স্বর্ণ এসেছে সাঁতারে। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই আসরে ছয়টি স্বর্ণ জয়ের পাঁচটিতে অবদান ছিল মোশারফ হোসেনের। গতকাল পোখরায় একদিনে ছয়টি স্বর্ণ জিতে সাঁতারকে ছুয়েছে আরচারি। মোশারফকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও আজ রোমান সানারা একবার সোনালী হাসি হাসলেই এক আসরে সাত স্বর্ণ জিতে নতুন রেকর্ড গড়বে আরচারি।

কাঠমান্ডুতে আসরের দ্বিতীয় দিনে ছেলেদের তায়কোয়ান্দোতে ২৯ (প্লাস) বয়স ক্যাটাগরিতে ৮ দশমিক ২৮ ও ৭ দশমিক ৯৬ স্কোর গড়ে সোনা জিতেন দিপু চাকমা। বাংলাদেশও পায় প্রথম সোনার পদকের দেখা। পরের দিন তিনটি সোনা আসে কারাতে ইভেন্ট থেকে। পুরুষ একক কুমিতে অনূর্ধ্ব-৬০ কেজিতে আল আমিন, কুমিতে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজিতে মারজান আক্তার প্রিয়া এবং কুমিতে অনূর্ধ্ব-৬১ কেজিতে হুমায়রা আক্তার অন্তরা সোনা জিতেন। বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে গত আসরের সাফল্যকে। এই চারটি সোনা জিতে যেন থমকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই চারটি সোনার পদকই এসেছিল কাঠমান্ডু থেকে। তিনদিন বিরতির পর পোখারা থেকে আসে সোনালী সুসংবাদ। ভারোত্তলনে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে মাবিয়া আক্তার সিমান্ত জিতেন সোনার পদক। এ ইভেন্টে শ্রীলঙ্কার সি বি প্রিয়ন্তিকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেন মাবিয়া। ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের কোনো নারী ক্রীড়াবিদের টানা দুই আসরে স্বর্ণ এটিই প্রথম। ১৯৯১ সালে কলম্বো সাফ গেমসে প্রথম নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বর্ণ জয় করেন শুটার কাজী শাহানা পারভীন। মেয়েদের ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড রাইফেল ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেন তিনি। পরের আসরেও স্বর্ণ জয় করেছিলেন কাজী শাহানা পারভীন। তবে সেটি দলগত ইভেন্টে। এ ছাড়া সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা ২০১৬ এসএ গেমসে এক আসরেই দুই স্বর্ণ জয়ের ইতিহাস গড়েছিলেন। দুটিই ছিল ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকে। ব্যক্তিগত কারনে এবার অনুপস্থিত শিলা।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই পর পর দুই দুই আসরে সোনা জিতে ইতিহাস গড়েন এই ভারোত্তোলক। পোখারায় গত শনিবার মেয়েদের ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৮৫ কেজি তুলে মাবিয়া আক্তার সিমান্ত সোনা জিতলে গত আসরের সাফল্যকে ছাপিয়ে যায় বাংলাদেশ। একই দিন ভারোত্তোলনে ছেলেদের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ২৬২ কেজি তুলে জিয়ারুল ইসলাম এবং ফেন্সিংয়ে মেয়েদের সেইবার এককে ফাতেমা মুজিব সেরা হলে মাদ্রাজের সাফল্যকে স্পর্শ করে বাংলাদেশ। এরপর কেবল নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পালা। পোখরার আরচারি স্টেডিয়ামে গতকাল রোমান সানা তামিমুল ইসলাম ও হাকিম আহমেদ রুবেলে সোনালি হাসিতে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দুপুর নাগাদ আরচারদর সেই হাসি আরও চওড়া হয়েছে। পুরুষদের দলগত রিকার্ভে রোমান সানা, হাকিম আহমেদ রুবেল ও তামিল ইসলাম ৫-৩ সেটে শ্রীলঙ্কান আরচাদের হারানো সাহস বেড়ে যায় অন্যদের। পরের ইভেন্টেগুলোতে বাংলাদেশের আরচারদের সঙ্গে কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি অন্যরা। মেয়েদের দলগত রিকার্ভে ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায়ের দল লঙ্কানদের ৬-০ সেটে উড়িয়ে দিয়ে সোনা জেতেন। মিশ্র রিকার্ভে দলটিতে ছিলেন রোমান সানা ও ইতি খাতুন। তারা হারান ভুটানকে ৬-২ সেটে। কম্পাউন্ড ইভেন্টে ছেলেদের দল জিতেছে ভুটানের বিপক্ষে। আশিকুজ্জামান, সোহেল রানা ও অসিম কুমার দাসের দল জিতেছে ২২৬-২১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে। একই ইভেন্টে মেয়েরা জিতেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

মেয়েদের দলটিতে ছিলেন সুস্মিতা বণিক, শ্যামলি রায় ও সোমা বিশ্বাস। আরচারিতে দিনের শেষ ইভেন্ট কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন জুয়েল রানা- সুম্মিতা বণিক জুটি। স্বাগতিক নেপালের জুটিকে তারা হারান ১৪৮-১৪০ ব্যবধানে। সব মিলিয়ে দিনের ৬ ইভেন্টের ৬টিতেই সেরা বাংলাদেশ। নারী ক্রিকেটের সাফল্য মিলে এক দিনেই এলো আরও ৭টি সোনা। ১৪টি সোনা জিতে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন উচ্চতা। আজ আরচারির চারটি ইভেন্টে স্বর্ণেও লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশের আরচাররা। পুরুষ ক্রিকেটেও স্বর্ণ জয়ের সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। বক্সিংয়েও ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের দু’জন। সব মিলিয়ে দেশের সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগলো কাঠমান্ডু পোখারার এবারের আসরে।

ইউ.এন.বি নিউজ

দক্ষিণ এশিয়া (এসএ) গেমসের চলমান আসরে শনিবার মাবিয়া আক্তার সীমান্তর পর স্বর্ণপদক পেয়েছেন জিয়ারুল ইসলাম ও ফাতেমা মুজিব। এ নিয়ে চলতি আসরে এখন পর্যন্ত মোট সাতটি সোনা পেল বাংলাদেশ।

দিনের শুরুতে প্রথম এবং এবারের আসরে পঞ্চমবারের মতো সোনার আসে মাবিয়ার হাত ধরে। পোখারায় মেয়েদের ভারোত্তোলনে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতেন মাবিয়া। তিনি মোট ১৮৫ কেজি (৮০ কেজি+১০৫ কেজি) ভার উত্তোলন করেছেন।

পরে স্ন্যাচে ৮০ কেজি এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজিসহ মোট ১৮৫ কেজি ওজন তুলে সেরা হন জিয়ারুল। গত এসএ গেমসে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতেও সোনা জিতেছিলেন এ ভারোত্তোলক।

দিনের তৃতীয় এবং আসরের সপ্তম স্বর্ণপদকটি এনে দেন ফাতেমা। এসএ গেমসের এবারের আসরে প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়া ফেন্সিংয়ে মেয়েদের সাবরে এককে সেরা হয়েছেন এ অ্যাথলেট।

গত ৩ ডিসেম্বর এমনই এক স্বর্ণময় দিনের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। আসরের দ্বিতীয় দিনের সকালে পরপর তিনটি স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা।

কারাতের কুমি ইভেন্টে পুরুষ এককে অনূর্ধ্ব-৬০ কেজি ওজন শ্রেণিতে ফাইনালে পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে হারিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে দেশকে দিনের প্রথম সোনা এনে দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাথলেট আল আমিন।

পরবর্তীতে, এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম মেয়ে অ্যাথলেট হিসেবে এবং দিনের দ্বিতীয় স্বর্ণ নিয়ে এসেছিলেন মারজানা আক্তার পিয়া। কারাতে মেয়েদের কুমিতে অনূর্ধ্ব ৫৫ কেজির ফাইনালে পাকিস্তানের কউসার সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে হারান তিনি।

আর বাংলাদেশকে প্রথম পদক এনে দেয়া হুমায়রা আক্তার মেয়েদের কুমিতে ওই দিনই অনূর্ধ্ব ৬১ কেজির ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের আনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টে হারিয়ে কারাতে থেকে দিনের তৃতীয় এবং আসরের চতুর্থ স্বর্ণপদক এনে দেন।

এর আগে, এসএ গেমসের ১৩তম আসরে তায়কোয়ান্দো থেকে প্রথম সোনা পায় বাংলাদেশ। নিজের ইভেন্ট পুমসে সেরা হয়ে দিপু চাকমা এনে দেন এ পুরস্কার। গত সোমবার ছেলেদের ২৯ (প্লাস) বয়স ক্যাটাগরিতে ৮ দশমিক ২৮ ও ৭ দশমিক ৯৬ স্কোর গড়ে সেরা হন দিপু।