ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো টাইগাররা

সিলেট, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ (বাসস) : সিলেটের অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে বড় ব্যবধানে হারালো স্বাগতিক বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো টাইগাররা। ওয়ানডে ইতিহাসে এই নিয়ে ২৪তম দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
অনেক মাইলফলকের এক ম্যাচ, এই তৃতীয় ওয়ানডে। দেশের অষ্টম ও বিশ্বের ২শতম স্টেডিয়াম হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওয়ানডে ফরম্যাটের অভিষেক হলো সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। শুধুমাত্র ভেন্যুই নয়, ব্যক্তিগত মাইলফলকও ছিলো। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২শতম ওয়ানডে ম্যাচ এবং দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ম্যাচের নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড গড়েন স্বাগতিক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনটি মাইলফলকই বাংলাদেশের পক্ষে। ভাগ্য দেবী টস লড়াইয়ে জয় পাইয়ে দেন মাশরাফিকে। যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। সন্ধ্যার পর শিশির পড়ার মাত্রাটা বেশি হচ্ছে সিলেটে। তাই টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন মাশরাফি।
মাশরাফির সিদ্বান্তকে সঠিক প্রমাণ করেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন তিনি। ৯ রান করা চন্দরপল হেমরাজকে শিকার করেন তিনি।
ওপেনারকে শুরুতে হারানোর ক্ষত মুছে ফেলার চেষ্টা করেন হোপ ও তিন নম্বরে নামা ড্যারেন ব্রাভো। ফলে ১৩তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। অবশ্য এর পরই ছন্দপতন হয় হোপ ও ব্রাভোর জুটিতে। আবারো বাংলাদেশকে আনন্দ করার উপলক্ষ তৈরি করে মিরাজ। ব্রাভোকে ১০ রানের বেশি করতে দেননি মিরাজ।
ব্রাভোর বিদায়ে উইকেটে আসেন অভিজ্ঞ মারলন স্যামুয়েলস। বড় ইনিংস খেলার পরিকল্পনায় থাকায় উইকেটে থিতু গড়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি মিডিয়াম পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন । স্যামুয়েলসকে ১৯ রানে থামিয়ে দেন তিনি।
এরপর উইকেটে আসেন হার্ড-হিটার শিমরোন হেটমায়ার। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দু’ম্যাচে নিজের জাত চেনাতে পারেননি তিনি। এবার ব্যর্থতার মধ্যেই ছিলেন হেটমায়ার। আবারো হেটমায়ারের ঘাতক মিরাজ। শুন্য রানে মিরাজের শিকার হন হেটমায়ার।
হেটমায়ারকে ফেরানোর পরের ওভারেই আবারো উইকেট শিকার করেন মিরাজ। এবার তার শিকার হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ১ রান করা রোভম্যান পাওয়েল।
মিরাজের ৪ উইকেট শিকারে ৯৯ রানেই ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষের দ্রুতই গুটিয়ে দেয়ার পথ তৈরি করেন সাকিব আল হাসান। মিডল-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান রোস্টন চেজ ৮ ও ফাবিয়ান অ্যালেন ৬ রান করে সাকিবের শিকার হন।
সতীর্থদের এমন ব্যর্থতার মাঝে ব্যাট হাতে সাহস দেখাচ্ছিলেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অনবদ্য ১৪৪ রান করা হোপ। তার ব্যাটিং বুঝতেই দিচ্ছিলো না বড় ধরনের চাপে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রান তোলার কাজটা ভালোই করছিলেন তিনি। ফলে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে হাটতে থাকেন হোপ। তবে হোপের সেঞ্চুরির পাবার স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছিলো। কারন দলীয় ১৭৭ রানে নবম উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এসময় হোপের রান ৯৩।
তবে নিজে ও দলকে হতাশ করেননি হোপ। শেষ ব্যাটসম্যান দেবেন্দ্র বিশুকে নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হোপ। সাকিবকে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হোপ। শেষ পর্যন্ত তার অপরাজিত ১০৮ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৮ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩১ বল মোকাবেলা করে ৯টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন হোপ। বাংলাদেশের মিরাজ ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন। এছাড়া সাকিব-মাশরাফি ২টি করে এবং সাইফউদ্দিন ১টি উইকেট নেন।
ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের জন্য ১৯৯ রান করতে হবে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে নিজেদের ইনিংস শুরু করে ম্বাগতিকরা। ভালো শুরু আভাস দেন টাইগারদের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রতিপক্ষ বোলারদের দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেন তারা। তাই প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪৫ রান পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১১তম ওভারের প্রথম বলেই মাঠ ছাড়েন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেমো পলের প্রথম শিকার হবার আগে ২৩ রান করেন লিটন।
দলীয় ৪৫ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে ঘাবড়ে যায়নি বাংলাদেশ। কারন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ব্যাটিং কারিশমা দেখিয়েছেন তামিম ও তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজজ বোলারাদের পাত্তাই দেননি তারা। পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন তামিম ও সৌম্য। ফলে প্রায় কাছাকাছি সময়ে দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। এতে দলের স্কোর পঞ্চাশ, একশ ও দেড়শ পেরিয়ে লক্ষ্যের খুব কাছে পৌঁছে যায়।
তবে দলের জয় থেকে ২৩ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন সৌম্য। পলের বলে বোল্ড হবার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ৫টি করে চার-ছক্কায় ইনিংস সাজিয়ে ৮০ রান করেন সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-সৌম্য ১৫২ বল মোকাবেলা করে ১৩১ রান যোগ করেন। এরমধ্যে তামিমের ৭১ ও সৌম্যর ৮০ রান অবদান ছিলো।
সৌম্যর বিদায়ের পর দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন তামিম ও মুশফিকুর রহিম। জয়ের জন্য বাকী ২৬ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন তামিম-মুশফিক। তামিম ৯টি চারে ১০৪ বলে অপরাজিত ৮১ রান করেন। ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মিরাজ। সিরিজ সেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হোপ।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-২০।

স্কোর কার্ড :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :

চন্দরপল হেমরাজ ক মিথুন ব মিরাজ ৯
শাই হোপ অপরাজিত ১০৮
ড্যারেন ব্রাভো বোল্ড ব মিরাজ ১০
মারলন স্যামুয়েলস বোল্ড ব সাইফউদ্দিন ১৯
শিমরোন হেটমায়ার এলবিডব্লু ব মিরাজ ০
রোভম্যান পাওয়েল ক মুশফিক ব মিরাজ ১
রোস্টন চেজ ক সৌম্য ব সাকিব ৮
ফাবিয়ান অ্যালেন ক মিথুন ব সাকিব ৬
কেমো পল বোল্ড ব মাশরাফি ১২
কেমার রোচ এলবিডব্লু ব মাশরাফি ৩
দেবেন্দ্র বিশু অপরাজিত ৬
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৪, ও-৬, পেনা-৫) ১৬
মোট (৯ উইকেট, ৫০ ওভার) ১৯৮
উইকেট পতন : ১/১৫ (হেমরাজ), ২/৫৭ (ব্রাভো), ৩/৯৬ (স্যামুয়েলস), ৪/৯৭ (হেটমায়ার), ৫/৯৯ (পাওয়েল), ৬/১৩৩ (চেজ), ৭/১৪৩ (অ্যালেন), ৮/১৭১ (পল), ৯/১৭৭ (রোচ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজুর রহমান : ১০-১-৩৩-০ (ও-২),
মেহেদি হাসান মিরাজ : ১০-১-২৯-৪ (ও-১),
সাকিব আল হাসান : ৯-০-৪০-২,
মাশরাফি বিন মর্তুজা : ৯-১-৩৪-২,
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন : ৯-০-৩৮-১ (ও-১),
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : ৩-০-১৪-০ (ও-২)।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল অপরাজিত ৮১
লিটন দাস ক পাওয়েল ব পল ২৩
সৌম্য সরকার অপরাজিত ৮০
অতিরিক্ত (নো-১, ও-১) ২
মোট (২ উইকেট, ৩৮.২ ওভার) ২০২
উইকেট পতন : ১/৪৫ (লিটন), ২/১৭৬ (সৌম্য)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
রোচ : ৩-০-১৬-০,
চেজ : ৮-০-৩২-০,
পল : ৭-০-৩৮-২,
স্যামুয়েলস : ৪-০-২৫-০ (ও-১),
বিশু : ৯-০-৪৮-০ (নো-১),
অ্যালেন : ৪-০-২২-০,
পাওয়েল : ৩.৩-০-২১-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা : শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.