কর আদায় বৃদ্ধি, নানা প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পেশ হলো নতুন বাজেট

রাকিব হাসনাত, বিবিসি বাংলা, ঢাকা

বাংলাদেশে বাজেট সম্বলিত বিস্তারিত বক্তৃতা সাধারণত অর্থমন্ত্রী নিজেই সংসদে উপস্থাপন করেন।

তবে এবার অসুস্থতার জন্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে জীবনের প্রথম বাজেটটি পুরোপুরি উপস্থাপন করতে পারেননি আহম মুস্তফা কামাল।

শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপনের পর যখন বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন তিনি তখন তাকে বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছিলো।

এর মধ্যেই অর্থমন্ত্রী জানান যে এবারের বাজেটে দাম বাড়ানোর কোন উপাদান তিনি রাখেননি।

তবে বলেছেন, করদাতার সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়িয়ে এক কোটিতে নেয়া হবে আর পাশাপাশি চালু হবে ভ্যাট আইন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাখতে হবে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি।

বক্তৃতার শুরুর দিকেই অর্থমন্ত্রী বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন অসুস্থতার জন্য।

এ অবস্থায় হাল ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতার বাকি অংশ তিনিই সংসদে পড়ে শোনান। শুরুতেই তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ও বাজেট ঘাটতি সম্পর্কে একটি ধারণা দেন জাতীয় সংসদকে।

তিনি বলেন, “২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ব্যয় খাতে বরাদ্দ ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা।”

প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক খাতকে প্রণোদনা দিতে ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে ৭৪ হাজার কোটি টাকা এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনার প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রীর হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন ২০৩০ সাল বা এরপরের জন্য দশ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির টার্গেট করেছে তার সরকার।

“আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ। ২০৩০ সাল ও তার বেশি সময়ের জন্য দশ শতাংশ টেকসই প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে দুই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেয়া হবে। বিদেশ গমনকারী কর্মীদের বিমার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।”

তবে এবারের বাজেটেও কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রেখেছে সরকার। অপ্রদর্শিত আয়ে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টও কেনা যাবে। পাশাপাশি দীর্ঘকাল বন্ধ রাখার পর আবার চালু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এমপিওভুক্তির কর্মসূচি।

বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের গ্রুপ বিমার আওতায় আনা এবং সার্বজনীন পেনশনের প্রস্তাব যেমন এসেছে তেমনি কৃষকদের জন্য শস্য বীমা ও কারখানার শ্রমিকদের জন্য এসেছে দুর্ঘটনা ভাতা দেয়ার প্রস্তাব।

আবার গত কয়েকবছরের আলোচিত ব্যাংক খাতের জন্য ব্যাংক কমিশনের কথাও উঠে এসেছে বাজেট বক্তৃতায়। বাদ যায়নি শেয়ার বাজার প্রসঙ্গও।

“যেসব ঋণ গ্রহীতা পরিশোধ না করতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুঁজি বাজারে ভিজিলেন্স জোরদার করা হবে। বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনা থাকবে।”

প্রস্তাবনা অনুযায়ী এখন থেকে বিমানবন্দর দিয়ে সোনা আনায় আগের চেয়ে কম ট্যাক্স দিতে হবে।

তবে বাজেট পাশ হলে দাম বাড়বে দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা স্মার্টফোন, সিগারেট, গুল, জর্দা ও আইসক্রিমের মতো পণ্যের।

আর দাম কমার সম্ভাবনা আছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ক্যান্সারের ঔষধ, এলইডি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিনের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবহার্য ফিচার ফোনের মতো বেশ কিছু পণ্যের।

জ্যোতিষী ও ঘটকালির সেবা নিতে হলেও এখন থেকে কিন্তু একটু বেশিই ব্যয় করতে হবে।

আর খরচ বাড়ছে মোবাইল ফোনে কথা বলা, বার্তা দেয়া কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।

ফোন কোম্পানিগুলোকেও এখন থেকে গুনতে হবে বাড়তি কর।