কারাগার থেকে হাসপাতালে খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমিইউ) নেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউর কেবিনে নেওয়া হয়।
সকালে শাহবাগ থানার পরিদর্শক আবুল বাশার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। হাসপাতালে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে বলে জানান তিনি।
কারাবন্দি অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গাড়ি বহরে ঢল নামে নেতাকর্মীদের। পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে হাসপাতালের গেটে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যোগ দেয় নেতাকর্মীরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
তাকে হাসপাতালের ডি- ব্লকের ১৯ তলায় ৫১২ নাম্বার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সাথে কারা কর্তৃপক্ষ ও তার দুই আইনজীবি রয়েছেন। তবে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হচ্ছে কি না তা পরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ড ঠিক করবে।
খালেদা জিয়া দুই মাস ধরে পুরনো কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে থাকছেন। এর আগে সকাল ১১টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগার থেকে কালো রঙের একটি গাড়িতে করে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনা হয়। গাড়ির সামনে পেছনে কারা কর্তৃপক্ষের দুটি গাড়ি ছাড়াও ছিল র্যাবের পাহারা। এছাড়া হাসপাতালের কেবিন ব্লকের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
খালেদা জিয়াকে হাসপতালে নেয়ার আগে থেকেই বিএসএমএমইউ সংলগ্ন আশেপাশে নীরাপত্তা বাড়ানো হয়। শাহবাগ মোড়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যান ও জলকামানের গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়। হাসপাতালের সামনে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা অবস্থান করছেন।
কারা কর্তৃপক্ষের আবেদনে তার জন্য বিএসএমএমইউতে একটি কেবিন তার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ আলী আসগর মোড়ল। তিনি শনিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তার জন্য একটি কেবিন রেডি করেছি। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে দেখবেন।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আগে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খেতে হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, খালেদা জিয়ার এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করা হবে। সেজন্য হাসপাতালে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে এক্সরে কক্ষ নং ১/এ এবং কেবিল ব্লকে প্যাথলজি বিভাগে রক্ত পরীক্ষার করার কক্ষ প্রস্তত রাখা হয়েছে।
তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান। বোর্ডে সদস্য রয়েছেন ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)। এই মেডিকেল বোর্ড গত সপ্তাহে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে এসে জানিয়েছিল, তার অসুস্থতা গুরুতর নয়।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে দেখতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি। বিএনপি খালেদার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডকে ‘লোক দেখানো’ বলেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির নেতা মওদুদ আহমদ।
শুক্রবার বিকালে দলীয় নেত্রীকে দেখে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো নয়। তার আর্থরাইটিসের সমস্যা বেশ বেড়ে গেছে। তার হাঁটতেও কষ্ট হয়। যেটাকে কিছুটা স্নায়ুবিক সমস্যা বলা হয়, সেটাও দেখা দিয়েছে। সত্যিকার অর্থেই তিনি কিছুটা স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, যারা তার নিয়মিত চিকিৎসা করেন, তাদেরকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হোক এবং যে চিকিৎসা দরকার, অবিলম্বে তা দেয়া হোক।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে রয়েছেন। তিনি আপিল করে জামিনের আবেদন জানালেও তার শুনানি মে মাসে নির্ধারিত রয়েছে। ফলে তার আগে তার কারামুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।