কিভাবে এমন অমানুষও হয় মানুষ!

মাটির ভেতর থেকে শিশুর বেরিয়ে থাকা হাত! নির্মম এক খবরে বুধবার ঘুম ভেঙ্গেছে বাংলাদেশের। মানুষকে আবারো দেখতে হয়েছে সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির মতো নির্মম চিত্র। সেই ট্র্যাজেডিতে মানুষের দায় থাকলেও সেটা শেষ পর্যন্ত এক দুর্ঘটনা। কিন্তু হবিগঞ্জের বাহুবলে শিশু হত্যার মতো চরম অমানবিকতা। সেখানে নিখোঁজের পাঁচদিন পর সাত থেকে ১০ বছর বয়সী চার শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি এলাকায় একটি বাড়ির পাশ থেকে শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে সুন্দ্রাটিকি এলাকায় কয়েকজন শ্রমিক মাঠে কাজ করছিলেন। সেসময় তারা লাশের গন্ধ পেয়ে একটু এগিয়ে মাটির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা একটি শিশুর হাত দেখতে পান। এলাকাবাসীসহ দ্রুত তারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জানতো, চার শিশু পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ। সম্ভাব্য পরিণতি আঁচ করেই পুলিশ বাহিনী সদস্যরা দ্রুত সুন্দ্রাটিকি এলাকায় ছুটে যান। উপস্থিত গ্রামবাসীর বিস্ময় আর বিলাপের মধ্যে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দক্ষিণ পাশের কুমারপাড়া ইছার বিলপাড়ে মাটিচাপা চার শিশুর মৃতদেহ একে একে বের করে আনে পুলিশ। মানুষের চরম অমানুষিকতার শিকার শিশুরা হচ্ছে শুভ (৮), মনির (৭), তাজেল (১০) এবং ইসমাইল (১০)। তাদের মধ্যে তিনজন সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। তাদের মৃতদেহ উদ্ধারের আগের ছবিগুলো রানা প্লাজার কথা মনে করিয়ে দেয়। আর ছোট ছোট লাশগুলো উদ্ধারের চিত্র মনে করিয়ে দেয় ২০০৯ সালে পিলখানায় সৈনিকদের হাতে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের মরদেহ মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করে আনার ঘটনা। গ্রামবাসী জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে মাঠে খেলতে যায় সুন্দ্রাটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র জাকারিয়া শুভ, প্রথম শ্রেণীর মনির মিয়া, চতুর্থ শ্রেণীর তাজেল মিয়া এবং সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইল মিয়া। 190704_1 এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলো তারা। তাদের স্বজনরা ওই সন্ধ্যা থেকেই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কোথাও তাদের খুঁজে না পেয়ে রাতেই উপজেলার সব জায়গায় মাইকে নিখোঁজের বিষয়টি প্রচার করা হয়। চার শিশুর সন্ধান না পেয়ে জাকারিয়া শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া শনিবার দুপুরে বাহুবল মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিহত মনিরের বাবা আবদাল মিয়ার অভিযোগ, মাসখানেক আগে বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে শুক্রবার তার ছেলেসহ ওই চার শিশুকে বাচ্চু মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যান আব্দুল হাই। টের পেয়ে তিনি ওই দিনই বিষয়টি পুলিশকে জানান। কিন্তু পুলিশ তাদের উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।134906_1 (1) অভিযো্গটি তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন সিলেটের ডিআইজি মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, চার শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হবে। খুনিদের বিষয়ে তথ্য পেতে তিনি এক লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন। এর আগে শিশুরা নিখোঁজ থাকার সময় তাদের সন্ধান চেয়ে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলো পুলিশ। fpPLLQP4p2L5 পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন: শিশু নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়ে আমরা গত কয়েকদিন ধরে ওই চার শিশুর খোঁজ করছিলাম। মাটিতে শিশুর মরদেহের হাত-পা দেখা যাচ্ছে, সকালে এমন খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থালে যাই। সেখান থেকে চার শিশুরই মরদেহ আমরা উদ্ধার করি। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য শিশুদের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে খুনিদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা করে পুলিশ সুপার বলেছেন, তদন্তের মধ্য দিয়ে খুব শিগগিরই আসল রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেছেন, চার শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের পর তদন্ত শুরু হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক টিম এলাকা ঘিরে রেখেছে। সেখান থেকে এরইমধ্যে কিছু আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.