কি করে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে?
হার্ট অ্যাটাককে এমন একটি নীরব ঘাতক বলা হয় যা কখনো কোনো পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন হলেই তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। যে কেউ যেকোনো সময়, যেকোনো বয়সে এতে আক্রান্ত হতে পারে।
কোনো রোগই পূর্ব প্রস্ততি ছাড়া হতে পারে না। পার্থক্য শুধু এই যে কোনো কোনো শারীরিক সমস্যা শুরুতেই বুঝা যায়। আর কোনোটা বুঝা যায় একদম শেষের দিকে যেয়ে। কিন্তু সব ধরনের সমস্যারই কোনো না কোনো পূর্ব লক্ষণ থাকেই।
লক্ষণগুলো জানা থাকলে নিরাময়ে সহজ হয়, মৃত্যুর হাত থেকেও বাঁচা সম্ভব। তাই এই বিষয়ে কিছু বিষয় জেনে রাখাই ভালো।
দেখে নিন লক্ষণগুলো
১. অ্যাটাকের শুরুতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাম হাতে ব্যথা দেখা দেয়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
২. সবসময় বুকে ব্যথা হবে এমনটাও ঠিক নয়।
৩. অ্যাটাকের আগে চোয়ালে তীব্র যন্ত্রণা হলে বেশি সাবধান হতে হবে।
৪. বমি বমি ভাব অথবা অসম্ভব ঘাম হতে পারে।
৫. শ্বাসকষ্ট, মাথা ঝিমানো ও জ্ঞান হারানো হার্ট অ্যাটাকের আরও কয়েকটি পূর্বলক্ষণ। এছাড়া অকারণ অবসাদগ্রস্ততা, বিবর্ণতা, ধড়ফড়ানি ও উদ্বিগ্নতা হতে পারে।
৬. খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া
৭. প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়, আমরা ওষুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু জানেন কি, হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ হল প্রতিদিনকার প্রচন্ড মাথা ব্যথা।
হার্ট অ্যাটাকের আগে আই লক্ষণগুলো আপনার দেখা দিতে পারে। যদি এই লক্ষণগুলো আপনার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। উপরোক্ত যেকোনো একটি কারণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কারো হার্ট অ্যাটাক হলে কি করবেন
১. হার্ট অ্যাটাকের পরপরই রোগীকে শক্ত জায়গায় হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে দিন এবং গায়ের জামা-কাপড় ঢিলেঢালা করে দিন। ব্যক্তির শরীরে বাতাস চলাচলের রাস্তাগুলো সব উম্মুক্ত করে দিন। এটি রোগীকে গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহায়তা করবে।
২. হার্ট অ্যাটাকের পর যদি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর চেষ্টা করুন। রোগীর যদি বমি আসে তাহলে তাকে একদিকে কাত করে দিন। যাতে সে সহজেই বমি করতে পারে। এতে ফুসফুসের মতো অঙ্গে বমি ঢুকে পড়া থেকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ষা পাবেন।
৩. তবে অতি দ্রুত কিছু করতে গিয়ে ভুল করলে রোগীর জীবন আরো শঙ্কটে পড়তে পারে। এই সময়ে রোগীকে একা ফেলে রাখা যাবে না। তার পাশে থাকতে হবে এবং চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত তার প্রতিটি লক্ষণের ওপর নজর রাখতে হবে। তবে রোগীকে নিয়ে ঘরে বসে থাকাটা সবচেয়ে বিপজ্জনক।
৪. হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে রোগীর মুখে একটি অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। তবে তা রোগীকে চুষে বা চিবিয়ে খেতে হবে। আর রোগী যদি বেশি ঘামতে থাকে তাহলে তার জিবের নিচে এক চামচ গ্লুকোজ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ভুলেই কোনো ঠাণ্ডা এবং মিষ্টি পানীয় তার মুখে দেয়া যাবে না।
৫. রোগী অচেতন হয়ে গেলে এবং কোনো সাড়া না দিলে সিপিআর’র সাহায্য নিতে হবে। সিপিআর হলো হাত দিয়ে বুকে হালকা চাপের সৃষ্টি করা এবং মুখ দিয়ে রোগীর মুখে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা।
৬. হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তকে প্রথমেই জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হবে। কারণ অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া কোনো চিকিৎসা করতে গেলে অনেক সময় রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়তে পারে।
৭. প্রাথমিক চিকিৎসার ফলাফলের ওপর নির্ভর না করে রোগীকে এমন কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন আইসিইউ আছে এবং পৃথক কার্ডিও বিভাগ আছে।
সতর্কতা
হৃদরোগের শত্রু হচ্ছে ধুমপান। তাই ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। ধুমপানের মতো মাদকও হৃদরোগের আরেকটি কারণ, তাই মাদককে না বলুন। অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। ভালো থাকবেন। মাঝে মাঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত হাঁটা-চলা ও ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ রাখুন। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খান।