কেকের চেয়ে নাদিয়াকেই বেশি ভালোবাসি
কেকের চেয়ে নাদিয়াকেই বেশি ভালোবাসি
লন্ডন: ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়ী নাদিয়া হুসেইন বলেছেন ট্রফিটি তিনি পেয়েছিলেন কয়েক মাস আগেই, আর এ কয়েক মাস ধরে তাকে চরম গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়েছে।
বুধবার রাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর বিবিসি ব্রেকফাস্ট শোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, জুনের শেষ দিকেই ট্রফিটি দেয়া হয় তাকে।
‘এরপর কাগজে মুড়ে, সেটি প্রথমকে একটি বাক্সে রাখি। তারপর সে বাক্সটি আরেকটি বড় বাক্সে এবং সেটিও আরেকটু বড় বাক্সে ঢুকিয়ে রাখি। আর এই বড় বাক্সটি সুটকেসে ভরে শোবার বিছানা অর্থাৎ খাটের নীচে রেখে দিয়েছিলাম।’
কেক বানিয়ে এতো বড় পুরষ্কার লাভকেই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন তিন সন্তানের জননী ৩০ বছর বয়সী নাদিয়া হুসেইন।
বুধবার রাতে যখন টিভিতে দেখানো হচ্ছিলো প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বটি, যেখানে নাদিয়াকে শিরোপা জয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি এ পর্বটি দেখেছেন বাবা-মা, ভাই-বোন ও বাচ্চাদের সাথেই।
যদিও নাদিয়া বলছেন, বাচ্চাদের তিনি আগেই শিখিয়েছিলেন যে কিভাবে বিষয়টি গোপন রাখতে হবে। তবে তার বাবা-মা কিংবা ভাই বোন চূড়ান্ত ঘোষণার আগে জানতে পেরেছিলেন কি-না তা পরিস্কার নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে নাদিয়া বলেন, তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে খাওয়ার পরে মিষ্টান্ন খাওয়ার তেমন একটা চল নেই।
কিন্তু বড় হয়ে যখন স্কুলে গেলেন তখন দেখলেন যে খাবারের পরে মিষ্টি খাওয়া হচ্ছে। তখনই তার ভাবনায় আসলো মিষ্টান্ন বা আরো সহজ করে বললে কেক বানানোর বিষয়টি।
পরে হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষক নাদিয়ার কেক সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তুমি তো বেশ ভালো কেক বানাও।’
বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার পর পাওয়া ফ্রি সময়টিই মূলত নাদিয়া কাজে লাগাতেন কেক বানানোর জন্যে।
পরে এক পর্যায়ে এই রিয়েলিটি শো-তে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় আসে তার।
বুধবারের ফাইনাল পর্বে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের বড় একটি কেক তৈরি করেন-যেটাকে তিনি তার নিজের বিয়ের গহনা দিয়ে সাজান। সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের মেয়ে নাদিয়া লিডসে বাস করেন।
রান্না বিষয়ক এই অনুষ্ঠানটি ব্রিটেনের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি।
ফাইনাল পর্বটি দেখতে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ থেকে ২ কোটি দর্শক সেদিন টেলিভিশনের সামনে ছিলেন। এই পর্বটি এখন পর্যন্ত এ বছরের সবচেয়ে বেশি দেখা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি।
চূড়ান্ত পর্বে তিনি ইয়ান কামিং এবং তমাল রায় কে হারান।
তিন সন্তানের মা নাদিয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘শোস্টপার হিসেবে উৎসবের কেক বানাতে বলা হয়েছিল। যেহেতু আমার বিয়ের সময় কোনো কেক ছিল না তাই আমি চেয়েছিলাম একটি ভাল, মজার কেক তৈরি করতে।’
এই অনুষ্ঠানের ইতিহাসের নাদিয়া হলেন ৬ষ্ঠ বারের বিজয়ী।
এদিকে ব্রিটেনে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়াকে নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের মূলধারার সংবাদপত্রগুলো বহু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ট্যাবলয়েড দৈনিক মেইল নাদিয়ার বিশালাকারের ছবি দিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। টেলিগ্রাফসহ অন্যান্য পত্রিকাতে রয়েছে নাদিয়ার সদম্ভ উপস্থিতি। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রশংসার জোয়ারে ভেসে গেছেন হিজাব পরিহিত এই তরুণী-যিনি এক সময় আশঙ্কা করেছিলেন যে হিজাব পড়ার কারণে ব্রিটিশরা হয়তো তাকে সমর্থন নাও করতে পারে। কিন্তু ব্রিটিশদের ভালোবাসায় এখন তিনি অভিভূত।
নাদিয়ার স্বামী আবদাল হুসেনও সবার মনযোগ আকর্ষণ করেছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই যুবক নাদিয়াকে বলেছেন, ‘ নাদিয়ার কেকের চেয়ে আমি আমি তাকেই বেশি ভালোবাসি।’