কেমন ছিলেন হিটলারের বান্ধবীরা

হিটলারের সাথে ইভা ব্রাউন নামে এক নারীর সর্ম্পক যতটা আলোচিত হয়েছে তার অন্য বান্ধবীদের নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়েছে। ইতিহাসের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া আরও বেশ কিছু মহিলার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। যারা নাৎসি রাজত্বকালে হিটলারের খুব কাছাকাছি থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভিন্ন সরকারি কাজে নিয়োজিত এই মহিলাদের সম্পর্কে ইতিহাস সেভাবে খোঁজ না রাখলেও ক্ষমতার অলিন্দে এদের কদর ছিল চোখে পরার মতো। তাই তো ইভা ছাড়াও এই আলোচিত মহিলাদের কারও সঙ্গে হিটলারের গভীর কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

১. ম্যাগদা গোয়েবেলস: নাৎসি জমানার বেশ কিছু নথি ঘেঁটে জানা যায় হিটলারের অন্য়তম কাছের মানুষ ছিলেন জোসেফ গোয়েবেলসের স্ত্রী,ম্যাগদা। তার সঙ্গে হিটলারের বন্ধুত্ব ছিল চোখে পরার মতো। এই কারণে জোসেফের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক মোটেও সুখের ছিল না তার স্ত্রীর। কোনও কোনও ঐতিহাসকের মতে তো ম্যাগদা, জোসেফকে বিয়ে করেছিলেন হিটলারের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য এবং নিজের কেরিয়ারকে আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছাতে। নিজ জীবনকালে হিটলার, ম্যাগদার সঙ্গে কোনও সম্পর্কের কথা স্বীকার না করলেও দুজনেই কিন্তু মারা গিয়েছিলেন এক জয়গায়, এক সময়। এক অন্ধকার নাৎজি বাঙ্কারে হিটালার যখন আত্মহত্যা করেছিলেন, তখন একই জায়গায় জোসেফ এবং ম্যাগদাও নিজেদের জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

২. গেলি রুবেল: হিটলারেরে বোনের মেয়ে ছিল গেলি। লুডউইগ ম্যাক্সিমিলান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় হিটলারের বাড়িতে থাকা শুরু করেন ছোট্ট গেলি। সে সময় গেলির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় হিটলরারে শোফারের। বিষয়টি হাটলারের গোচরে আসার পর এক মুহূর্তও সময় ব্যয় না করে এমিল নামক সেই শোফারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেন এবং গেলির উপর মারাত্মক অত্যাচার চালান। এর কিছু বছর পরে গেলি ভিয়েনা চলে যেতে চাইলে হিটলার সেই সিদ্ধান্তেরও বিরোধ করেন। এ সময়ই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন গেলি। যদিও হিস্টোরিয়ানদের মতে গেলির মৃত্যুর কারণ ছিল অন্য। কী কারণ? নিজের ভাগ্নির সঙ্গে নাকি শারীরিক সম্পর্ক ছিল হিটলারের। এক সময় সেই কারণেই মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন গেলি। কোন ঘটনাটা সত্যি সে বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া না গলেও হিটলারের জীবনে গেলির গরুত্ব যে অপরিসীম ছিল সে বিষয়ে যদিও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

৩. ইউনিটি মিটফোর্ড: হিটলারের জীবনের রহস্যময়ী নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইউনিটি। জন্ম সূত্রে ব্রিটিশ এই সুন্দরির সঙ্গে হিটলারের সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল, তা নিয়ে নানান গুঞ্জন শোনা যেত সে সময়। পরবর্তী সময়ও একাধিক ঐতিহাসিক এই সম্পর্কের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সব নথি থেকেই জানা যায় ব্রিটেন থেকে জার্মানিতে আসার পর হিলটারের উপহার দেওয়া একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন ইউনিটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে হিটলার যখন আত্মহত্যা করেন, তার পরপরই নিজের প্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করেন ইউনিটি। কিন্তু বিফল হন। এর পরেই জার্মানি ছেড়ে চিরদিনের মতো ব্রিটেনে চলে যান ইউনিটি মিটফোর্ড। ১৯৪৮ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্য়াগ করেন হিটলারের এই প্রিয় বান্ধবী।

৪. এমি গোয়েরিং: হিটলারের সময় ইভা ব্রাউনের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এমি। কমান্ডার-ইন-চিফের স্ত্রী হওয়ার কারণে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আগে সরকারি যে কোনও অনুষ্টানের আয়োজনের দায়িত্ব বর্তাত এমির উপরই, যা ইভা একেবারেই মেনে নিতে পারতেন না। এক সময় এমি গোয়েকিং-এর ক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে তাঁকে সবাই “ফার্স্ট লেডি” হিসেবেও ডাকা শুরু করে দেন। যদিও হিটলারের মৃত্যুর পর এই ক্ষমতা প্রিয় লেডিকে প্রায় এক বছর জেলে থাকতে হয়েছিল। আর তার পরের জীবন ছিল বেজায় কষ্টকর। রাজ প্রাসাদের মত সুবিশাল অট্টালিকার মালকিনকে বাকি জীবনটা কাটাতে হয়েছিল মিউনিখের একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে।

৫. লিনা হেডরিচ: হলোকস্টের জনক, “ম্যান অব দা আয়রন হার্ট” নামে খ্যাত রেইনহার্ড হেইডরিচের স্ত্রী ছিলেন লিনা। হিটলারের সঙ্গে এই মহিলার সম্পর্ক কেমন ছিল সেই নিয়ে তেমন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না গেলেও ফুয়েরারের খুব কাছের মানুষ ছিলেন লিনা। আর ক্ষমতার অলিন্দে থাকার কারণে নিজেও বেশ ক্ষমতাময়ী ছিলেন। তবে বাকি সবার মতোই যুদ্ধ শেষে জীবনটা একেবারে বদলে গিয়েছিল লিনার। ১৯৪২ সালে হেইডরিচের মৃত্যুর পর বাকি জীবন বড়ই একাকিত্বে কেটেছিল এই জার্মান সুন্দরীর। প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে শেষ নিংশ্বাস ত্যাগ করেন লিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.