খেজুরগাছিরা মহাব্যস্ত

প্রকৃতিতে শীতের আগমন বার্তা শুরুর সাথে সাথে মাদারীপুরের সর্বত্র খেজুরগাছিরা মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, জেলার ৪টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গাছিরা খেজুর গাছ তৈরি শেষে রস সংগ্রহ শুরু করেছে। চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির হাড়িতে খেজুর গাছ থেকে রাতভর রস সংগ্রহ করে। সেই খেজুর রস ভোরের সূর্য ওঠার আগেই গাছিরা রসভর্তি মাটির হাঁড়ি গাছ থেকে নামিয়ে এনে এক জায়গায় জড়ো করে। পরে এই রস টিনের কড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করে গুড় ও পাটালি। শীতের দিনে বাঙালির খেজুর গুড়ের পাটালি দিয়ে তৈরি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য পিঠা-পায়েসের অন্যতম আকর্ষণ। তাই খেজুরের গুড়ের কদর প্রতি বছর অন্য সময়ের চেয়ে শীতে বেশি হয়। ফলে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হযেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতিটি এলাকায় ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের খেজুরের গাছে ঝুঁকি নিয়ে গাছিরা কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহ শুরু করেছে। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ৪টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির আঙ্গিনায় বা রাস্তার ধারে রয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ। আর সেই খেজুর গাছে বিকালে গাছিরা রসের ভাড় লাগিয়ে রস সংগ্রহ করে খেজুর রস দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠা-পুলি তৈরির পাশাপাশি খেজুর গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে যায়। এ সময় এলাকার গাছিরা ৪-৫ মাসব্যাপী খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটায়। অনেকে আবার ব্যাণিজিকভাবে গুড় তৈরি ও বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়। বাড়ির উঠানে গাছিরা চুলা বানিয়ে সেখানে খেজুর রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি করে। সদর উপজেলার আমবাড়ী গ্রামের গাছি শহিদুল ইসলাম, বাবু, জালাল জানান, নিজেদের খেজুর গাছের সাথে গ্রামের অন্যদের খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে বাণিজিকভাবে গুড় তৈরি করে গাছের মালিককে ভাগ দিয়ে ও পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে থাকি। তারা আরোও জানান, খেজুর গাছ কাটা বেশ কষ্টের হলেও সকালে রসভর্তি হাঁড়ি দেখলে সেই কষ্টের কথা ভুলে যাই। তবে গুড় তৈরির উপকরণের দাম এবার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গুড়ের দামও বৃদ্ধি পাবে। শীতের তীব্রতা বাড়লে খেজুর রস আরও বেশি মিষ্টি হয়, সেই সঙ্গে গুড়ের গুণগতমান ভাল হয়। এক সময় মাদারীপুর জেলায় প্রায় ২০ কোটি টাকার উপর গুড় উপাদন হতো এবং তা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাতসহ ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানী হতো কিন্তু ইটভাটায় অবাধে খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ফলে আশানুরুপ গুড় উৎপাদন হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.