ঘরে বসেই প্রাথমিক চিকিত্সা

আঙুল কেটে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া কিংবা মৌমাছির কামড় খাওয়া— এ রকম ছোটখাটো আঘাত কিংবা ক্ষত নিরাময়ে সবসময় চিকিত্সকের কাছে ছোটার কোনো প্রয়োজন নেই। এসব ক্ষেত্রে ঘরে বসে প্রাথমিক চিকিত্সাতেই সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব। এজন্য দরকার একটু বাড়তি সচেতনতা।

১. হোঁচট খেয়ে গোড়ালি মচকানো বা আঘাত পেলে প্রথম তিনদিন জায়গাটি শক্ত করে সংকোচনশীল ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখুন। এ সময় প্রতিদিন গোড়ালিকে হূিপণ্ডের চেয়ে একটু উঁচুতে রেখে ৪০ মিনিটের বিরতি দিয়ে ২০ মিনিট করে বরফ দিয়ে ঘষুন। তবে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পূর্ণ বিশ্রাম। এ সময় কোনো কিছুতে ভর দিয়েও হাঁটার চেষ্টা করা উচিত নয়, এতে নতুন করে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে গোড়ালি বেগুনি হয়ে ফুলে গেলে অন্যদের সাহায্য নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে একটু হাঁটাচলা করুন।

২. দরজা কিংবা অন্য কিছুর সঙ্গে বাড়ি লেগে মাথা ফুলে যায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মাথায় আঘাত পেলে প্রথমেই আক্রান্ত স্থানে বরফ লাগান। এর পর সতর্কতার সঙ্গে পরবর্তী লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন: মাথাব্যথা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, স্মৃতিশক্তিতে সমস্যা হওয়া প্রভৃতি বিষয়। বমি হলে, মাথা ঝিম ঝিম করলে এবং আপনি রাস্তায় থাকলে আশপাশের মানুষের সহায়তা চান।

৩. ছুরি, বঁটি কিংবা অন্য কোনোভাবে আঙুল কেটে গেলে প্রথমে হাত উঁচু করে ক্ষতস্থান তোয়ালে দিয়ে চেপে ধরুন। প্রথম ৫ মিনিট এ চাপ কোনোভাবেই শিথিল করবেন না। রক্ত পড়া বন্ধ হলে ট্যাপের পানির নিচে কিছুক্ষণ ক্ষতস্থানটি ধরে রাখুন। এর পর অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে ফেলুন। তবে রক্ত বন্ধ না হলে বা ক্ষতস্থানটি ১ ইঞ্চি বা তার বেশি হলে চিকিত্সকের সহায়তা নেয়া উচিত।

৪. পুড়ে গেলে প্রথমেই আক্রান্ত স্থান ট্যাপের পানির তলায় ধরে রাখুন। তার পর হালকাভাবে অ্যান্টিবায়োটিক মলম এবং ব্যান্ডেজ লাগান। তবে কোনো অবস্থাতেই বরফ লাগাবেন না। অনেকেই আগুনে পোড়ার বিপরীতে বরফ লাগান, এটা একেবারেই ভুল কাজ। কারণ, বরফ আক্রান্ত স্থানে রক্ত চলাচল হ্রাস করে এবং এতে আরোগ্য লাভের গতি ধীর হয়ে যায়। তবে চামড়া খসে পড়লে বা অবস্থা খারাপ মনে হলে দ্রুত হাসপাতালে যান।

৫. মরিচা ধরা কোনো কিছুর সঙ্গে হাত-পা ছিঁড়ে বা কেটে গেলে সাবান ও গরম পানি দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন। এর পর দ্রুত টিটেনাস টিকা নেয়ার ব্যবস্থা নিন।

৬. গরমের দিন এসে যাচ্ছে। গরমে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে, বমি বমি ভাব হলে কিংবা মাথা ঘুরলে গোসল করে ফেলুন। সেটা সম্ভব না হলে এয়ার কন্ডিশন বা ফ্যানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। গরমের অবসাদগ্রস্ততাকে হেলাফেলা করবেন না, কারণ এ থেকে হিটস্ট্রোক হতে পারে। আর অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হলে, বেশি বমি হলে আশপাশের মানুষের সাহায্য চান।

৭. হঠাত্ নাক দিয়ে রক্তপাত শুরু হলে কী করবেন? প্রথমে আতঙ্কিত না হয়ে নাক চেপে ধরুন। এভাবে ১৫-২০ মিনিট চেপে রাখুন। এ সময়ের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ না হলে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন।

৮. মৌমাছি কিংবা বোলতা হয়তো ঢাকায় খুব একটা নেই। কিন্তু মফস্বল বা গ্রামে এদের কামড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা হতেই পারে। প্রথমে দেখুন এদের হুল আক্রান্ত স্থানে বিঁধে আছে কিনা। থাকলে সাবধানতার সঙ্গে সেটা বের করে ফেলুন। এর পর জায়গাটা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যথা থাকলে বরফ লাগাতে পারেন। শ্বাস নিতে সমস্যা হলে, জিভ ফুলে গেলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: হেলথ ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.