ঘুমহীন রাত, তার পর…
নিয়ম করে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর উপকারিতার কথা কে না জানে। স্মৃতিশক্তি থেকে শুরু করে আয়ু বৃদ্ধি, সৃজনশীলতা ত্বরান্বিত করা আর মানসিক চাপ কমানোর জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। তবে সবসময় যে মেপে মেপে ঘুমানোর সুযোগ মিলবে, এমনটা নয়। বিশেষ করে সদ্য মা হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে কিংবা হুট করে কাঁধের ওপর চেপে বসা কোনো কাজের প্রয়োজনে অনেক সময় ২-৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর সুযোগ মেলে না। তবে রাতে কম ঘুমিয়েও কিন্তু দিনভর নিজের ফিটনেস ধরে রাখা যায়। কীভাবে—
স্ক্রাব করুন
অপরিমিত ঘুমের সর্বপ্রথম প্রভাবটি পড়ে ব্যক্তির চেহারায়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তির পরিমিত ঘুমের সমস্যা হলে তার চেহারা ক্রমেই অনাকর্ষণীয় আর অসুস্থের মতো মনে হয়, যা তার আশপাশের মানুষ সহজেই বুঝতে পারে। কারণ রাতে ঘুমের মধ্যে ত্বক শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলো ঘাম গ্রন্থির মাধ্যমে নিঃসরণ করে দেয়। আর তাই অপরিমিত ঘুমের কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় বিষাক্ত উপাদান নিঃসরণে বিঘ্ন ঘটে। ফলে ব্যক্তির ত্বক নিস্তেজ আর নিষ্প্রভ মনে হয়। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মুখের ত্বকে ক্রাব করুন। বাজারে অনেক ধরনের স্ক্রাবার পাওয়া যায়, প্রয়োজনে তা ব্যবহার করে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। স্ক্রাবের ফলে মাইক্রোক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পায়, যা কিনা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
৫ মিনিটের জগিং
প্রাকৃতিকভাবে ২৪ ঘণ্টার জৈব প্রক্রিয়ার মধ্যে আবদ্ধ আমাদের শরীরের গঠন প্রণালি। আর এ জৈব প্রক্রিয়ার নাম স্যার্কাডিয়ান প্যাটার্ন। যখন এর গরমিল হয়, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি হূত্স্পন্দনেও এর প্রভাব পড়ে। এমনকি মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের পরিবর্তিত মাত্রা ‘আমি কখন একটু ঘুমাতে পারব’— এটা ছাড়া ব্যক্তির অন্য সব চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করে। এমন পরিস্থিতিতে মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। এর পর মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে জগিং করুন। কারণ ব্যায়ামের ফলে শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা কিনা ক্লান্তি জুড়াতে সাহায্য করে।
নীল রঙের প্রভাব
ঘুম নিয়ে গবেষণা করেন বার্ট জ্যাকোবসন। কম ঘুমের ক্লান্তি দূর করতে তিনি খোলা আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ চোখের সেন্সরি সেলে (যেখানে আলোর পতনে প্রতিক্রিয়া হয়) নীল রঙের বর্ণচ্ছটা পতন এক ধরনের প্রাণরাসায়নিক প্রক্রিয়া তৈরি করে, ফলে ঘুমের উদ্দীপক হরমোনের নিঃসরণ কম হয়। তবে বার্ট জ্যাকোবসন অবশ্য উল্লেখ করে দিয়েছেন, খোলা আকাশের দিকে বারবার না তাকাতে। এছাড়া এ সময়ে স্বল্প মাত্রায় খাদ্য গ্রহণ করা ভালো। কারণ বেশি পরিশ্রম আর বেশি পরিমাণ খাবার গ্রহণের পর সাধারণত শরীরের স্নায়ু শিথিল হয়ে পড়ে। ফলে ঘুম এড়িয়ে জেগে থাকাটা কষ্টকর এ সময়ে। তাই কম আহার আর কম কায়িক শ্রম এ সময়ে জরুরি। এছাড়া কাজের খুব চাপ থাকলে পছন্দসই গান শুনতে পারেন এ সময়ে। কারণ এতে মস্তিষ্ক থেকে নিউরোট্রান্সমিটার প্রসরণ হয়, যা আপনার কর্মক্ষম আর মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম
রাত জেগে কাজ করেছেন, সকাল ১০টা নাগাদ আবার শুরু হয়ে গেছে অফিসের ব্যস্ততা। দুপুর ১২টা বাজতেই রাজ্যের অবসন্নতা ভর করেছে শরীরে। আপনি ভাবছেন দিনটি কীভাবে পার করবেন। এমন পরিস্থিতিতে দুপুরে খাবার পর ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিন। তবে এর সঙ্গে এক মগ কফি খেতে ভুলবেন না।