ঘুম ভাঙাতে
টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করেন সানজিদা। সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে ঘর থেকে বেরোতে হয়। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠিক ভোর ৬টায় ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখে সে। নিয়মমাফিক ঘড়ি বাজলেও বিছানা ছাড়তে ছাড়তে তার ঘণ্টা পার হয়ে যায়। সানজিদার মতো ঘুম ভাঙার পর জড়তা কাজ করে, এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। আমেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা যায় সকালে ঘুম ভাঙার পর এক ধরনের জড়তা আর দুর্বলতা কাজ করে, এমন লোকের সংখ্যা ৬০ শতাংশ। ঘুমকাতুরেদের আড়মোড়া ভেঙে চটজলদি বিছানা ছাড়ার জন্য কিছু পরামর্শ—
নির্ধারিত সময়ে অ্যালার্ম সেট করা
মন বলছে ঘুম ভেঙেছে, তবে চোখ সে কথা শুনছে না। এমনটা হয় যাদের, তারা কিন্তু একটি কাজ সবসময়ই করে থাকেন। তা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৩০ কিংবা ৪৫ মিনিট আগে অ্যালার্ম সেট করা। নিউইর্য়কভিত্তিক স্নায়ু এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ওয়েস্টউড বলেন, ‘আমি শুনেছি ঘুম থেকে উঠবার জন্য অনেকে এক কিংবা দুবার নয়, কিছু কিছু সময় বিরতি দিয়ে ১০ থেকে ১২ বার অ্যালার্ম দিয়ে রাখেন। এটা একদমই ঠিক নয়। এর চেয়ে ঠিক ওই সময়ে অ্যালার্ম সেট করুন, যে সময়ে আসলেই আপনার ঘুম থেকে ওঠা জরুরি।’ এছাড়া অ্যালার্ম সেট করে ঘড়িটি সাইড টেবিলে না রেখে পাশের রুমে কিংবা বিছানা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। যাতে অ্যালার্ম বন্ধ করতে আপনাকে বিছানা ছাড়তেই হয়।
ঘরে আলোর প্রবেশ
সূর্যের আলো আপনাকে জানিয়ে দেবে ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টি, তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে জানালার পর্দা ফাঁকা রাখুন। অ্যালাবামা বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিশেষজ্ঞ অ্যামি আমারা বলেন, আলো সবসময়ই একটি সচেতন সংকেত। ব্যক্তিবিশেষে এর প্রভাব ভিন্ন ধরনের। তাই সকালে যাদের সহজে ঘুম ভাঙে না, তারা কিন্তু এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।
অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকারস
প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে অনেক ধরনের ফিটনেস বা অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকারস পাওয়া যায়। এটা আমাদের র্যাপিড আই মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে ঘুমের গভীরতা নির্ণয় করে। এছাড়া ঘুম যত গভীর হয়, আমাদের শরীরের মাংসপেশি ততই শিথিল থাকে। এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকারস ঘুম থেকে জাগাতে সাহায্য করে। গাঢ় ঘুমের মধ্যে অ্যালার্মের শব্দে জেগে ওঠার থেকে এ পদ্ধতি নেহাত খারাপ নয়।
ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা
এ পদ্ধতিটি কিন্তু প্রচলিত ও পুরনো। ঘুম থেকে জেগে চোখে-মুখে পানি ছোঁয়ালে দ্রুতই ক্লান্তি দূর হয়। তাই ঘুম ভেঙে যাদের জড়তা কাজ করে, তারা যদি চোখে-মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা নেন, তাহলে কিন্তু দ্রুতই তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে ড. ওয়েস্টউড বলেন, ঠাণ্ডা পানির স্পর্শেও যাদের তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কাটে না, তাদের উচিত চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া।
ব্যায়াম
যোগব্যায়াম অথবা জগিং। ঘুম-পরবর্তী শরীরের জড়তা কাটাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এছাড়া ব্যায়াম আমাদের গাঢ় নিদ্রার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। গভীর ঘুমের শেষে জেগে উঠে দেখবেন শরীর থেকে আলসেমির ক্লান্তি উধাও।
খালি পেটে পানি পান
সকালে ঘুম ভেঙেই পানি পানের অভ্যাস আছে যাদের, তারা কিন্তু শরীরের যত্নে শতভাগ মনোযোগী। এছাড়া ঘুমের সময় টানা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা কোনো তরল পান না করার কারণেও শরীরে ক্লান্তি ভর করে। ২০১১ সালে আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশনের এক জরিপে দেখা যায়, স্বল্প পানি পানের ফলে তরুণদের বড় একটি অংশ পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়। এতে মাথাব্যথার পাশাপাশি তাদের ক্লান্তি লাগে। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রথম ১ ঘণ্টায় বেশি পরিমাণে পানি পানই শ্রেয়।
সূত্র: হেলথডটকম