চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা শুরু, কাল জব্বারের বলীখেলা
দেবদুলাল ভৌমিক, বাসস ।
বছর ঘুরে আবার এসেছে চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের উৎসব আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা। এটি জব্বারের বলী খেলা নামেই সবার কাছে পরিচিত। সোমবার থেকে নগরীর লালদীঘি ঘিরে শুরু হয়েছে তিন দিনের মেলা। চলবে বুধবার পর্যন্ত। বলী খেলা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। এবার হবে জব্বারের বলী খেলার ১০৮তম আসর। বলী খেলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গত বছর ৮০ জনের মত বলী অংশ নিয়েছিলেন। এবারও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বলী অংশ নেবেন বলে আশা করছেন আয়োজনকারীরা।
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, জব্বারের বলী খেলা এবং এ উপলক্ষে বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্য। এ মেলা চট্টগ্রাম নগরবাসীর প্রাণের সাথে মিশে গেছে। এই মেলায় পাওয়া যায় ঘরের নিত্য ব্যবহার্য সব জিনিসপত্র। গৃহিণীরা সারা বছর এ মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকা, ফেনী, নোয়াখালী, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ মেলায় নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসেন। আর এবার বলীর সংখ্যাও গতবারের মত হবে বলে আশা করছি।’
১৯০৯ সালে নগরের বকশির হাট এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেই থেকে প্রতিবছর বঙ্গাব্দের ১২ বৈশাখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এদিকে গতকাল রোববার থেকেই মেলার দোকানপাট বসতে থাকে। বৃষ্টির মধ্যেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান গুছিয়ে নিয়েছেন। আজ সকাল থেকেই পুরোদমে মেলা শুরু হয়েছে।
সোমবার সকালে মেলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেল আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কতোয়ালী মোড় পর্যন্ত এবং জেল রোড, কে সি দে রোডজুড়ে নানা রকম বাহারী পণ্যের পসারা সাজিয়েছেন দোকানীরা। কে সি দে রোড়ে বগুড়া থেকে আসা খেলনা ব্যবসায়ী কলিম উল্লা বাসসকে জানানÑ ‘আমরা প্রতি বছর চট্টগ্রামের এই মেলায় যোগ দিই। এখানে বিক্রি বেশ ভালোÑ লাভও হয়। এবারও বেচা-বিক্রি ভালোই হচ্ছে।’
সড়কের পাশে জেল গেটের সামনে বসে মাটির টব সাজাচ্ছিলেন সুবোধ পাল। সাভার থেকে আসা এ তরুণ মৃৎশিল্পী জানায় সে গত ৩ বছর ধরে এ মেলায় আসছে। তার বাবা অমর কৃষ্ণ পাল প্রায় এক যুগ ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। সুবোধ জানালো গত ছয় মাস ধরে তারা এ মেলায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার বিক্রিতে কেমন প্রত্যাশা? এ প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়Ñ প্রতি বছর ভালো বিক্রি হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’
সোমবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে কথা হয় বহদ্দার হাট থেকে আসা গৃহিনী তসলিমা আক্তারের সাথে। তিনি জানালেনÑ ‘দুপুরের পর থেকে ভিড় বেড়ে যাবে চিন্তা করে সকাল সকাল ঘর থেকে বের হয়েছি। দাম একটু বেশি হলেও ভালো জিনিস কিনতে পারছি। এবার মেলায় অনেক নতুন জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে।’