চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট ঃ পেট্রোবাংলার বিমাতাসুলভ বন্টন নীতি, হাজার মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন বাড়লেও বরাদ্দ বাড়েনি
মুস্তাফা আরহাম হাশমী : চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে প্রতিদিন. বাসার রান্নাঘর থেকে সিএনজি ষ্টেশন- কোথায় নেই এই সংকট? একটু খোঁজ নিয়েই জানা গেল আসল কারণ। দেশে উৎপাদিত গ্যাস বন্টনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের প্রতি পেট্রোবাংলার কি একটু বিমাতাসুলভ আচরণ করছে না? আর এ জন্য ব্যবসায়ীনেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের নির্লিপ্ততাও কি কম দায়ী ? এক হিসেবে দেখা গেছে দেশে প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদন হয় ২ হাজার ৭’শ মিলিয়ন ঘনফুট । উৎপাদিত গ্যাস থেকে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম পায় মাত্র ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গুরুত্বপূর্ণ কোনো শিল্পকারখানা না থাকা সত্ত্বেও কুমিল্লা-সিলেটে চট্টগ্রামের থেকে বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ঢাকা পাচ্ছে ১৭২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, কুমিল¬া (কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর-নোয়াখালী) পাচ্ছে ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, সিলেট পাচ্ছে-২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। পেট্রোবাংলার গ্যাস বন্টনের ক্ষেত্রে এই ধরনের বিমাতাসুলভ আচরণের জন্য চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের নির্লিপ্তাকে দায়ী করছেন সচেতন নগরবাসী। তাদের বক্তব্য, বছরের পর বছর চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট লেগে থাকলেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের তেমন কোনো জোরালো প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। আগে যখন দেশে মাত্র ১৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো তখন চট্টগ্রামে যে পরিমাণ গ্যাস পেত এখন ২৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হয়েও সেই পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছে। সব দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার পরে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অবস্থান হলেও গ্যাসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চট্টগ্রামকে বছরের পর বছর অবহেলা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতিদিন ২৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস কোম্পানী-পুরো ঢাকার জন্য পায় ১৭২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি-পুরো কুমিল¬ার (কমিল¬া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর-নোয়াখালী) জন্য পায় ৩৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি-পুরো সিলেট অঞ্চলের জন্য পায় ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, আর কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি পুরো চট্টগ্রামের জন্য পায় মাত্র ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পাচ্ছে মাত্র ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অথচ চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। মাঝে মাঝে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পায় চট্টগ্রাম। তবে বেশিরভাগ সময় ২৩০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রামে। সংশি¬ষ্টরা জানিয়েছেন, এ কারণে গ্যাস সংকট রয়েছে শুধু চট্টগ্রামেই। কর্ণফুলী গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলেও কোনো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে মোটামুটি আবাসিক ও শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ দিতে পারি আমরা। কিন্তু গত ১০/১২ দিন ধরে আমরা ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস পাচ্ছি না। যার কারণে পুরো চট্টগ্রামে গাসের হাহাকার চলছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা জানান, উৎপাদিত গ্যাসের সুষম বন্টন করা হলে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট থাকবে না। এজন্য সদিচ্ছার প্রয়োজন। খবর নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় কোনো গ্যাস সংকট নেই। কুমিল¬া-সিলেটে কোনো গ্যাস সংকট নেই, পশ্চিমাঞ্চলে কোনো গ্যাস সংকট নেই। বাখরাবাদ কুমিল¬া-ব্রাক্ষণবাড়িয়া-চাঁদপুরের জন্য ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিয়ে গেলেও এই পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন নেই। অপরদিকে সিলেটের জন্য জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি প্রতিদিন ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলেও ওখানে সে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন নেই। সিলেট থেকে তিতাস হয়ে কুমিল¬া দিয়ে পাইপ লাইনে গ্যাস চট্টগ্রাম আসতে আসতে গ্যাসের চাপ একেবারেই কমে যাচ্ছে। এই কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট লেগে আছে। পেট্রোবাংলা সুষ্ঠুভাবে মনিটারিং করলে তবে চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট কমবে বলে মনে করছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি লিমিটেড ঠিকাদার সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ জানান, গ্যাস সংকট শুধু চট্টগ্রামেই লেগে আছে। সুষম বন্টন হলে এই সংকট হতো না। এজন্য ব্যাবসীয়-শিল্পোউদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে। অপর ব্যবসায়ী কহিনূর কমেন্ড এন্ড মামুন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক এমদাদ জানান, আমাদের গ্যাস নির্ভর কারখানা মাসে অনেকদিন বন্ধ থাকে গ্যাসের কারণে। গ্যাস সংকটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ-শিল্পবাণিজ্যে চট্টগ্রাম যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার কথা সেই পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছে না। এদিকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটের ব্যাপারে বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, শিল্প-বাণিজ্যের দিক দিয়ে চট্টগ্রামকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া দরকার সেই ভাবে দেয়া হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট নিরসনে ব্যাবসায়ী-শিল্পপতি এবং মন্ত্রী-এমপিদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নেয়া দরকার।