চট্টগ্রাম: হাসিমুখে ভোগান্তির ঈদযাত্রা
চট্টগ্রাম: হাসিমুখে ভোগান্তির ঈদযাত্রা
নূপুর দেব
গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গত চার দিনে বন্দরনগরী ছেড়ে গেছেন কয়েক লাখ মানুষ। এর মধ্যে গতকাল বুধবার সবচেয়ে বেশি মানুষ সড়ক, রেল ও নৌপথে চট্টগ্রাম ছেড়ে যান। এখন নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা অনেকটা ফাঁকা। চিরচেনা যানজটও নেই।
এদিকে নগর ও জেলার বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও অলি-গলিতে কোরবানির পশুর হাটের কারণে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নগরের মুরাদপুর থেকে আতুরারডিপো পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে সিডিএ আবাসিক এলাকার সামনের সড়কে দুই কিলোমিটার, সাগরিকা থেকে কর্নেলহাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার, ইপিজেড থেকে কাটগড় বাজার চার কিলোমিটার, ওয়াসা থেকে বহদ্দারহাট চার কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের বড়দিঘির পার থেকে ফতেয়াবাদ স্কুল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বুধবার ছিল তীব্র যানজট। গন্তব্যে পৌঁছতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। তবে যানজটের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থাকলেও ঈদের আনন্দে মানুষের মধ্যে তেমন ক্ষোভ ছিল না। সবাই বাড়ি যেতে পেরে খুশি।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে অননুমোদিত পশুর হাটের কারণে আজকে (বুধবার) দুপুরের পর থেকে নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’
আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আড়াই হাজার বাস-মিনিবাস করে নগর থেকে বুধবার লক্ষাধিক যাত্রী চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার (আজ) আরও অর্ধলক্ষাধিক লোক যেতে পারেন।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মোহাম্মদ মুছা বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলা এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বুধবার অর্ধলক্ষাধিক লোক সড়ক পথে বাড়ি গেছেন। আগের ২/৩ দিনের চেয়ে আজ (বুধবার) বেশি যাত্রী ছিল।’
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ২৬টি ট্রেনে করে গত চারদিনে (বুধবার পর্যন্ত) ৬০ থেকে ৭০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে গেছেন। বুধবার সর্বোচ্চ ১৭ হাজার যাত্রী চট্টগ্রাম ছেড়ে যান। ঈদের আগের দিন হওয়ায় বৃহস্পতিবার ভিড় কিছুটা কম হতে পারে। তার পরও ১০-১২ হাজারের কম হবে না। এবারের ঈদে লাখখানেক যাত্রী ট্রেনে বাড়ি গেছেন।’ এছাড়া সদরঘাট ও সীতাকুণ্ডের নৌঘাট থেকে সন্দ্বীপ, হাতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গেছেন ১০ হাজারের বেশি যাত্রী।
নগরের দামপাড়া, বিআরটিসি, স্টেশন রোড, কদমতলী, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, সিনেমা প্যালেস, অলংকার, কর্নেলহাট, সিইপিজেড, বারিক বিল্ডিং, অক্সিজেনসহ স্থায়ী-অস্থায়ী বিভিন্ন বাসস্টেশনে গতকাল বুধবার সকাল থেকে ভিড়। অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় অনেকে টিকিট না পেলেও গতকাল কাউন্টারে টিকিট পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি টাকায় টিকিট বিক্রি হয়েছে। বাস, মিনিবাসের পাশাপাশি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ হাল্কা যানবাহনেও মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
কদমতলী বাসস্টেশন থেকে নোয়াখালীর মাইজদী যাবেন আমীর হোসেন। সকাল ১০টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা পর বাস ছেড়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে আমীর হোসেন বলেন, ‘গত ঈদেও বাড়ি যেতে বিলম্ব হয়েছে। এবার যানজটের কারণে গাড়ি আসতে এক ঘণ্টা দেরি করেছে। আরও আধা ঘণ্টা যাত্রী নেওয়ার পর সকাল সাড়ে ১১টায় বাস ছাড়বে বলে জানানো হয়েছে।’
স্টেশন রোডে একটি বেসরকারি কম্পানির বাসে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অপেক্ষা করছেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরের বাসায় ঈদ করব। সকাল ১১টায় বাস ছাড়ার কথা। এখন বলছে আরও ২০ মিনিট দেরি হবে। তবু যেতে পারলেই হল।’
সিনেমা প্যালেসে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় যথাসময়ে বাস ছাড়ার খবরে খুশি স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদ করতে কুমিল্লায় যাচ্ছি। ভোগান্তির পরও ঈদযাত্রায় খুশি।’ কালের কণ্ঠ