চন্দ্রাবতী সম্মেলন : শিশু সাহিত্যিকের প্রাণের মেলা

চন্দ্রাবতী সম্মেলন : শিশু সাহিত্যিকের প্রাণের মেলা
আ.ফ.ম.মোদাচ্ছের আলী

৩ অক্টোবর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২দিন ব্যাপি চন্দ্রাবতী একাডেমি আয়োজিত শিশু সাহিত্য সম্মেলন। শিশু সাহিত্যিকদের প্রাণের মিলন মেলা ছিল এটি। চট্টগ্রাম থেকে রাশেদ রউফ, জসীম মেহবুব, ... মোদাচ্ছের আলী,ওবায়দুল সমীর, মিজানুর রহমান শামীম, নজরুল জাহান, রমজান আলী মামুন, মিলন বনিক,অমিত বড়ুয়া, আখতারুল ইসলাম, রুকন উদদৌলা সোহেল সহ সারাদেশের প্রায় দুশতাধিকেরও অধিক শিশু সাহিত্যিক এই আয়োজনে অংশ নেন। ভারত থেকে এসেছিলেন শিশু সাহিত্যিক শৈলেন্দ্র হালদার। ২ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধনের কথা থাকলেও প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এম.পির উপস্থিত হতে দেরি হওয়ায় ৫টার পরে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান থাকায় দেরিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কথা সাহিত্যিক ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সেলিনা হোসেন ও অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এ.বি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক। এই পর্বে তিন বরেণ্য শিশু সাহিত্যিক হালিমা খাতুন, হায়াৎ মামুদ ও আলী ইমামকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। হালিমা খাতুন প্রাঞ্জল ভাষায় মঞ্চে উপস্থিতদের জ্যোতিস্ক ও অনুষ্ঠানে উপস্থিদের রত্ন সম্বোধন করে শিশু সাহিত্যের সেকাল ও একাল নিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তাঁর সরস বাচনভঙ্গী ও সরাসরি কথা বলা উপস্থিত শিশু সাহিত্যিকদের আলোড়িত করে। বক্তব্য রাখেন সম্মাননা প্রাপ্ত শিশু সাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ ও আলী ইমাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রানিত হয়েছি এজন্য যে হায়াৎ মামুদ এর লেখা “বাঙালি বলিয়া লজ্জা নাই” বইটি ৮৭ সালে স্কুলে উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় আমি পুরস্কার লাভ করেছিলাম যা এখনো আমার সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বক্তব্যে বলেন তাঁর জীবনে প্রথম শিশু সাহিত্যিক ভূগোলের শিক্ষক গোবিন্দ বাবুর কথা। যিনি রূপকথার মিশেল দিয়ে হিমালয় চিনিয়েছেন,ভূগোল শিখিয়েছেন। ঐদিন কিশোরগঞ্জ লোক সংস্কৃতি পরিষদ চন্দ্রাবতী গীতি নৃত্য নাট্য পরিবেশন করে যা দর্শক নন্দিত হয়।

৩ অক্টোবর সকাল ১০টায় ফারুক নেওয়াজ এর সভাপতিত্বে যশস্বী শিশু সাহিত্যিক প্রয়াত ফয়েজ আহমদ ও এখলাস উদ্দিন আহমদ স্মরণে “আমাদের দুই শিশু সাহিত্যিকঃণ্ড উজ্জল উত্তরাধিকার” এই শিরোনামে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আলী ইমাম। এর উপর আলোচনা করেন শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ ও রহীম শাহ। এর পরের পর্বে বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী লায়লা আফরোজা ও ডঃ শাহাদাৎ হোসেন নিপু তাদের স্বভাব সুলভ ললিত কণ্ঠে আবৃত্তি করেন। তৃতীয় পর্বে কবি আহসান হাবীব ও শামসুর রাহমান স্মরণে সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল “ শিশু কিশোর ছড়া কবিতায় আমাদের দুই প্রধান কবির উত্তরাধিকার”। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুবল কুমার বনিক। প্রধান অতিথি ছিলেন ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম। ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ছড়াকার সুজন বড়ুয়া ও শহীদ তনয় সাংবাদিক জাহিদ রেজা নুর। সুজন বড়ুয়া আহসান হাবিবের ‘আমি মেঘনা পাড়ের ছেলে’ কিশোর কবিতাটিও সবাইকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেন এটি বাংলাদেশের শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে অন্যতম মাইল ফলক। এরপর শুরু হয়ে সারা দেশ থেকে আগত অসংখ্য শিশু সাহিত্যিকদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিকের ছড়া পাঠ। যার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণে দুই দিন ব্যপী এই অনুষ্ঠানটি সার্থক হয়ে ওঠে। এ পর্বে সভাপতি ছিলেন ফারুক হাসান। অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম জাহান ও ছড়াকার আনজীর লিটন। ছড়ার ছন্দে ছড়াময় হয়ে ওঠে আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন। ছড়াপাঠ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ছড়াকার বৃন্দ। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রামের সকল শিশুসাহিত্যিকরা ছড়া পাঠে অংশ নেন। ভারতের ছড়াকার শৈলেন্দ্র হালদার

তোমার যদি আমসি হবে

আমার তো চাই আমচুরও

আমার বুকে শক্তি সুনীল

এবং তোমার শামসুরও”। পড়ে দুই বাংলার মেলবন্দন তৈরি করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী কামরুজ্জামান কাজল।

এর পর সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। প্রধান অতিথি চিত্রশিল্পী হাশেম খান যিনি অনুষ্ঠানের দুই দিনই উপস্থিত থেকে শিশু সাহিত্যিকদের সাথে মতবিনিময় সহ সঞ্জিবনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। এই পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেস ইন্সস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর ও পৃষ্ঠপোষক এ.বি ব্যংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চৌধুরী।

০৩.১০.২০১৫ তারিখে শিশু সাহিত্যিক রহিম শাহ ও শিশু সাহিত্যিক, সাংবাদিক যাযাবর মিন্টুর জন্মদিন হওয়ায় সকল শিশুসাহিত্যিক ও বিভিন্ন সংগঠন তাঁদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়।

চন্দ্রাবতীর পক্ষ থেকে একটি সুদৃশ্য ব্যাগে বীরেন সোম রচিত “বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিল্পী সমাজ” মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য এই বইটিসহ চন্দ্রাবতীর একটি নোট প্যাড ও স্যুভেনিয়র সম্মেলনে উপস্থিত সকল শিশু সাহিত্যিকদের উপহার দেন যা উপস্থিত শিশু সাহিত্যিকদের মুগ্ধ করেছে।

এরপর চাটগাঁর শিশু সাহিত্যিকদের জন্য এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সভাপতির সমাপনি বক্তব্য প্রদানকালে সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান প্রস্তাব করেন আগামীর সম্মেলন চট্টগ্রামে করার। চট্টগ্রামের অংশগ্রহণকারী অতিথিদের পক্ষে রাশেদ রউফকে মঞ্চে ডাকা হয় এবং চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহণকারী সকল শিশুসাহিত্যিকদের সানন্দ সম্মতিতে আগামীর অনুষ্ঠানটি চট্টগ্রামে করার বিষয়টি তিনি মঞ্চে গিয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন। মঞ্চে উপবিষ্ট শিশু সাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম সবাইকে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানাতে বললেন, সবাই তাই করলেন। অভিভূত হলাম আমরা সবাই। বীর চট্টলা অপেক্ষায় থাকলো দেশ ও দেশের বাইরের শিশু সাহিত্যিকদের বরণ করা জন্য। জয় হোক চন্দ্রাবতী একাডেমির, জয় হোক শিশুসাহিত্যের । দৈনিক আজাদী ।

লেখক : প্রাবন্ধিক,ছড়াকার

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.