চার বছরে ২৪ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলার লক্ষ্যে টেস্ট ও ওয়ানডে লিগের জন্য একটি কার্যকর সূচির প্রস্তাব দিয়েছে আইসিসির প্রধান নির্বাহী কমিটি (সিইসি)। ‘অপশন সি’র প্রস্তাব অনুসারে, টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষ নয় দল আগামী চার বছরে সর্বোচ্চ ১২টি টেস্ট সিরিজ খেলতে পারবে; যার মধ্যে ছয়টি হবে দেশে, বাকিগুলো বিদেশে। প্রতিটি সিরিজে কমপক্ষে দুটি ম্যাচ থাকবে। চার বছরের এ সময়চক্রে একটি দল দুই বছরে তিনটি হোম সিরিজ আয়োজনের সুযোগ পাবে; এরই মধ্যে একটি খসড়া সূচিও প্রদান করেছে আইসিসি। আর এতে কম টেস্ট খেলার আক্ষেপ ঘুচতে পারে বাংলাদেশের।
২০১৯ বিশ্বকাপের পর পরই শুরু হবে নতুন টেস্ট লিগ এবং তা চলবে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ১২টি টেস্ট সিরিজ খেলতে পারবেন মুশফিকুর রহিমরা। টেস্ট লিগের সূচি অনুসারে, ২০১৯-২৩ মৌসুমে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হোম এবং অ্যাওয়ে দুটি করে টেস্ট সিরিজ খেলবে টাইগাররা। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি হোম সিরিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে একটি অ্যাওয়ে সিরিজ খেলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সূচিতে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ হবে অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে।
এমনিতে টেস্টে বাংলাদেশ খুব নিয়মিত নয়। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির ১৭ বছরে মাত্র ১০০টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। এর মধ্যে ২০১৫ সালের জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ খেলার পর প্রায় ১৪ মাসের জন্য টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে ছিল বাংলাদেশ।
নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়নে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশ্বজুড়ে টি২০ লিগের প্রসার। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর ভিড়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। গত এপ্রিলে আইসিসি সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে টেস্ট খেলার পরিসর কমিয়ে আনার প্রস্তাব আসে। ফলে এবার লন্ডনের বৈঠকে চার বছরে ১৬ টেস্ট সিরিজের পরিবর্তে ১২তে কমে আসার প্রস্তাবটি পাস হয়।
টি২০ লিগের বাড়তি চাপ থাকলেও চার বছরে ১২টি টেস্ট সিরিজ খেলা অসম্ভব কিছু নয়, এমনই অভিমত আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিচার্ডসনের। ২০১১-১৫ মৌসুমে টেস্ট সিরিজের পারিসংখ্যানিক উপাত্তের আলোকে তিনি জানান, গত চার বছরে ১০টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। তবে সর্বোচ্চ ১৬টি সিরিজ খেলেছে নিউজিল্যান্ড। এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি করে সিরিজ খেলছে পাকিস্তান ও ভারত। ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলেছে ১৩টি সিরিজ। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১২টি এবং জিম্বাবুয়ে খেলেছে ৯টি টেস্ট সিরিজ।
তবে নতুন টেস্ট লিগ বাস্তবায়িত হলে কপাল পুড়বে র্যাংকিংয়ের নিচু সারির দল জিম্বাবুয়ে এবং সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের। নিজেদের মধ্যে একাধিক টেস্ট সিরিজ আয়োজন করতে পারলেও বড় দলগুলোর সঙ্গে তাদের টেস্ট খেলার সুযোগ খুব কম থাকবে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে পারবে। তবে ওই সিরিজের কোনো পয়েন্ট যোগ হবে না।
নতুন প্রস্তাবে টেস্টের পাশাপাশি শীর্ষ ১৩ দলকে নিয়ে ওয়ানডে লিগের কথাও বলা হয়েছে। দুই বছরব্যাপী এই লিগ শুরু হবে ২০২০ সালে, আর শেষ হবে ২০২১ সালে। প্রতি বছর দুটি করে হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজ মিলিয়ে চারটি ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পারবে সদস্য দেশগুলো।
আইসিসির পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে যে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড পূর্ণ সদস্যপদ লাভের পর ২০১৮ সালে টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষ দলের সঙ্গে সবচেয়ে তলানির দল টেস্ট চ্যালেঞ্জ প্লেঅফ ম্যাচ খেলবে। এতে বাংলাদেশের জন্য ভালো ও খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষ নয়ে থাকলে কোনো সমস্যা নেই। এ মুহূর্তে ৬৯ পয়েন্ট র্যাংকিংয়ে নবম স্থানে রয়েছে টাইগাররা। তাদের নিচে রয়েছে পয়েন্ট শূন্য জিম্বাবুয়ে। সেক্ষেত্রে জিম্বাবুয়ে যদি কোনোভাবে টপকে যায়, তাহলে ২০১৯-২৩ মৌসুমে টেস্টে এককথায় নির্বাসিত থাকতে হবে বাংলাদেশকে।