চৈত্রসংক্রান্তির হাত ধরে

রেজাউল করিম খোকন।

আজ চৈত্রসংক্রান্তি। বাংলা বর্ষের শেষ দিন, ১৪২৪ কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আজকের দিন শেষে। মাসের শেষ দিনটিকে বলা হয় সংক্রান্তি। বিভিন্ন মাসে রয়েছে বিভিন্ন সংক্রান্তি। বাংলা বছরের সমাপনী মাস চৈত্র। চৈত্রের শেষ দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এ দিনটিকে বিভিন্ন উত্সবের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে বাঙালি সমাজের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। বিশেষ করে সনাতন হিন্দু সমাজের লোকজন তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও লোকাচারের মধ্য দিয়ে পালন করে এ দিনটি। আর বছরের শেষ দিনের চৈত্রসংক্রান্তির সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যায় বাংলা পঞ্জিকার একটি বিদায়ী বছর। চৈত্রসংক্রান্তির দিনে বাঙালি সমাজের লোকজন নীলপূজা, চড়কপূজা, গাজন মেলাসহ লোকাচারমূলক অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। শাস্ত্র অনুসারে এ দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যজনক বলে মনে করা হয়। অন্যান্য সংক্রান্তির মধ্যে চৈত্র মাসের সংক্রান্তির ভাবই সম্পূর্ণ আলাদা। দারুণ উত্সবমুখর পরিবেশে বিগত বছরটিকে বিদায় সম্ভাষণ জানানো হয় এ সময়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে উদ্বিগ্ন কৃষককুল নিজেদের বাঁচার তাগিদে বর্ষার আগমন দ্রুত হোক, এই প্রণতি জানাতেই চৈত্র মাস জুড়ে উত্সবের মধ্যে সূর্যের কৃপা প্রার্থনা করে। এখন সূর্য তার রুদ্ররূপে প্রতিভাত। তাই চৈত্রসংক্রান্তিতে নানা উপাচারের নৈবেদ্য দিয়ে তাকে তুষ্ট করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে আরও একটি বছর।
১৪২৪ বিদায় নিচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। নতুন বাংলা বছর ১৪২৫-কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবাই। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চারদিকে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। ব্যাপক আয়োজনে বাঙালি নববর্ষের বর্ণাঢ্য উচ্ছ্বাসময় উত্সবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। মেয়েদের পরনে লাল-সাদা শাড়ি, খোঁপায় বেলিফুলের মালা। রঙ-বেরঙের পুতুল, মাটির খেলনা, মুখোশ, বাঁশি আর শাঁস-বাতাসার ছড়াছড়ি। কোথাও নাগরদোলা, তারই পাশে হয়তো সার্কাস, লাঠি খেলা। চিরচেনা এ দৃশ্য আমাদের বৈশাখী উত্সবের। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় নতুন বছরকে বরণ করতে প্রস্তুত বাঙালির উচাটন মন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে যেমন চলছে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি, তেমনি বিভিন্ন এলাকা প্রস্তুত হচ্ছে বৈশাখী মেলার জন্য। এখন রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরে বৈশাখী মেলার ধুম পড়ে যায় নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে। বরাবরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে চলবে নববর্ষের উত্সব। চারুকলা থেকে সকাল সকাল বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। নতুন বছর প্রত্যেক বাঙালির মনে অনাবিল আনন্দ আর সুখের বার্তা বয়ে আনুক, এমন প্রত্যাশা আর দেশের মঙ্গল কামনায় এ শোভাযাত্রার আয়োজন। রমনার সবুজ বৃক্ষের ছায়াতলে চলবে পান্তা-ইলিশ উত্সব। মাটির শানকিতে মাছে-ভাতে বাঙালির চিরচেনা খাবার ইলিশ ভাজা দিয়ে পান্তা। খুব ভোর থেকে রমনার বটমূলে চলবে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। প্রকৃতির নিয়মে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো বাংলা সন ১৪২৪। বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের ছোঁয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। রোদের তাপদাহ বাড়ছে দিন দিন। আকাশে মেঘ জমছে। হঠাত্ বৃষ্টি-ঝড় শুরু হয়ে গেছে। প্রকৃতি তার আপন বৈশাখীরূপে সেজে উঠছে। সেই ছোঁয়া লেগেছে শহর, গ্রাম আর শহরতলিতে। সবাই নিজ নিজ ভাবনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে কীভাবে বরণ করবে পয়লা বৈশাখকে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে বাংলা সন প্রবর্তনের হাত ধরে পয়লা বৈশাখের যাত্রা শুরু। দিন কয়েক পরেই বাংলা নববর্ষের আগমন। চৈত্রের বিদায়ে বৈশাখের নবযাত্রা।
আর পয়লা বৈশাখ মানে ঐতিহ্যের আবাহন। বাঙালিয়ানা ধরে রেখে চিরচেনা আনন্দে নববর্ষ বরণ। প্রাণের সুরে আরও একবার মেতে ওঠা বাঙালি উত্সবে। বাতাসে কান পাতলেই যেন শোনা যাচ্ছে নতুন বছর পয়লা বৈশাখের আগমনী ধ্বনি। বাংলা বছরের প্রথম এই মাস বৈশাখের সারাটা সময় থাকে দেশজুড়ে আনন্দঘন পরিবেশ। সারাদেশে চলতে থাকে বৈশাখ বরণ উত্সব। বৈশাখ শুধু একটি মাসের নাম নয়, বৈশাখ আগমন মানে তীব্র এক মাতন সারাবেলা। নবোদ্যমে, নবোল্লাসে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দীপ্ত অঙ্গীকার সবাইকে উজ্জীবিত করে এই দিনে। পয়লা বৈশাখে জরাজীর্ণ, পুরাতনকে ছেড়ে নতুনের আহ্বানে ভেসে যাবে সবাই। ব্যর্থতা, না পাওয়ার গ্লানি, দুঃখ-শোক, বঞ্চনার ক্ষোভ-দুঃখ সবই ভুলে আবার নতুন করে জীবনের পথ চলার প্রত্যয় নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াবে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-বয়স্ক সবাই। বৈশাখের রঙে নতুন চেতনায় সাজবে সবাই। বাঙালি যেন আকুল হয়ে প্রতীক্ষা করে বৈশাখী উত্সবের। কেননা আবহমানকাল থেকে বাঙালির চিরন্তন সার্বজনীন পার্বণ বাংলা নববর্ষ। বাঙালি আর বাংলা নববর্ষ এক বিকল্পহীন অভিযাত্রা। এই সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দে উদ্বেল হয় নববর্ষের আহ্বানে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, হালখাতা, কারুশিল্প, লোকসংস্কৃতির বর্ণচ্ছটা, নতুন রঙিন পোশাক, হলুদ ফুলের সাজসজ্জা এবং ভোরের আলোয় নববর্ষের সূর্যোদয় সবই উদযাপন করার আকাঙ্ক্ষায় থাকে প্রতিটি মানুষ। এই সময়ে আমাদের ফ্যাশন ভুবন আন্দোলিত হয় নতুন আনন্দে। পোশাকের আয়োজনে আসে নতুন সংযোজন। ডিজাইনে আসে নতুনত্ব। বৈশাখ মানেই লাল-সাদার চিরায়ত রূপ। আগেও নববর্ষের দিন নতুন শাড়ি পরার চল ছিল। উত্সবের নতুন পোশাক হিসেবে সবাই সাধারণত লাল পাড়ের সাদা শাড়ি বেছে নিত। এর পেছনেও কারণ ছিল। পয়লা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন একটি উত্সব। এই দিনে সবাই নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে যেতে অনুভব করে বাঙালিত্বের অনাবিল বিচিত্র স্বাদ। বৈশাখ মানেই ষোল আনা বাঙালিয়ানা। তাই বৈশাখকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে এখন সাজ সাজ রব। ঐতিহ্য আর রঙের সংমিশ্রণে এসেছে নতুন নতুন ডিজাইন। পয়লা বৈশাখের ছোঁয়া লাগছে মানুষের পোশাকে, অন্দরে, খাবার থেকে সবখানে। তারুণ্য এই বৈশাখে সেজে উঠবে রঙে রঙে। কীভাবে? পোশাকে ও ফ্যাশনে। গত কয়েক দিনে বাজার ঘুরে অনুমান করা গেছে এবার তরুণদের বৈশাখী পোশাকে দেখা যাবে নানা ডিজাইনের খেলা। বিশেষজ্ঞরাও এমনটাই আভাস দিলেন। সাদা লাল রঙের পাশাপাশি অন্যান্য রঙের পোশাকও এবার পরবে তরুণ-তরুণীরা। পোশাকের কাটছাঁটেও থাকবে বৈচিত্র্য। সুতি শাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য। পয়লা বৈশাখের এত রঙিন পোশাকের আয়োজনের মধ্যে এতটুকু কমেনি সুতি শাড়ির আবেদন। বরং কপালে টিপ, চুলের বাঁধনে ফুলের বাহার আর হাতভর্তি রঙিন চুড়ি-চিরায়ত বাঙালির চমত্কার এই সাজ পোশাক এদিন ছড়িয়ে দেয় ষোল আনা বৈশাখী বার্তা। সবাই যেন নিজের মনের মাধুরীতে তুলে ধরেছে বৈশাখী আমেজ। এখন দোকানগুলোতে আনাগোনা বাড়ছে ক্রেতাদের। বিভিন্ন ধরনের পোশাক কিনছে মানুষ। বিশেষ দিনে সাজটা হওয়া চাই মনের মতো। শুধু পোশাক কিনেই বৈশাখী আয়োজন শেষ হচ্ছে না। ফ্যাশন সচেতন নারীরা ছুটছেন পার্লারে। নারীর সৌন্দর্যকে নববর্ষের উত্সবে নতুন রঙে রাঙাতে চলছে কত অফার, কত আয়োজন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ, বৃহত্ এবং সর্বোচ্চ অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান হল বৈশাখের প্রথম দিনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা। এ অনুষ্ঠানের আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস এখন আর গ্রামেগঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই। বাঙালি হয়ে জন্ম নিয়ে বাংলায় কথা বলা, বাংলায় বেড়ে ওঠার কী যে আনন্দ, কী যে মজা, তা সবাই আমরা অনুভব করি। দেশের মাটি, দেশের সংস্কৃতি যেন আমাদের গর্ব, আমাদের অহঙ্কার। সংস্কৃতি মানেই সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে আর মহত্ভাবে বাঁচা। আর প্রতিনিয়ত মরতে মরতে বেঁচে থাকাটার নামই অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতিতে বাংলা ও বাঙালির প্রতিটি বৈশাখেরই মৃত্যু হচ্ছে। এ মৃত্যু দৈহিক নয়, আত্মিক ও মানসিক। অসুন্দরের উপাসনা করে, অকল্যাণের হাত ধরে বেঁচে থাকাটাই অপসংস্কৃতি।
এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চলছে অপসংস্কৃতির প্রচণ্ড দাপট, লোভ-লালসা, ষড়যন্ত্র, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদের চর্চা আমাদের চিরন্তন বাঙালিয়ানাকে ম্লান করে দিচ্ছে। আমাদের জীবনাচরণ, খাদ্যাভ্যাস, বিনোদন, আবেগ-উচ্ছ্বাস সবকিছুতেই এখন বিদেশি সংস্কৃতির ছাপ সুস্পষ্ট। বৈশাখ এলেই আমরা সবাই একদিনের জন্য যথার্থ বাঙালি হতে নানা কসরত করি। যা অনেক সময় হাস্যকর প্রহসন মনে হয়। শুধু লোক দেখানো পান্তা-ইলিশ উত্সবের আয়োজন, রমনার বটমূলে ঘুরে বেড়ানোর কোনো তাত্পর্য থাকে না তখন। শুধু একটি দিনের জন্য বাঙালি সাজার প্রহসন না করে সারা বছরের জন্য বাঙালি হওয়ার শপথ নিতে হবে সবাইকে। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি, বাঙালিয়ানা ধরে রাখতে হবে আমরণ। বছর জুড়েই আমরা বাঙালি থাকতে চাই। পোশাক-আশাকে, চিন্তা-চেতনায় মননশীলতায় বাঙালি সংস্কৃতি ও জীবনবোধকে গুরুত্ব দিতে সবাইকে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। আসুন, এবারের পয়লা বৈশাখে নববর্ষের আনন্দ উত্সবে হূদয়ের গভীর থেকে আত্মোপলব্ধির চেষ্টা করি যে আমরা সবাই প্রত্যেকে খাঁটি বাঙালি। আমাদের বৈশাখী উত্সবে বিনোদনে আর উদযাপনে স্বদেশীয় বিশ্বাস, প্রথা ও চেতনাকে যুক্ত করতে যত্নবান হই। যারা অপসংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে স্বদেশীয় আর স্বজাতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে তত্পর, তাদের প্রতিরোধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এখনই। পেছনে ফেলে আসা বছরটিতে যেমন আমাদের অনেক গৌরবময় অর্জন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গ্লানি দুঃখ বেদনাময় অনেক অভিজ্ঞতার স্মৃতি। আমাদের সমৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিক সাফল্যের বিপরীতে জঙ্গিবাদীদের অপতত্পরতা সবাইকে হতবাক এবং হতাশ করেছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নারী ধর্ষণ, হত্যা আর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার অধঃপতনের ঘটনা সমাজে অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনায়। এ রকম অনেক গ্লানিময় বোঝা নিয়ে বিদায় নিচ্ছে বাংলা ১৪২৪ সন। আগামীকাল বাঙালির প্রাণের উত্সব বাংলা নববর্ষ। আমরা সবাই নবপ্রাণের উচ্ছ্বাসে নতুন পথে এগিয়ে যেতে চাই। দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে উজ্জ্বল রোদেলা আলোর ভুবনে পথ চলতে চাই। ফেলে আসা অতীত সময়ের গ্লানি, দুঃখ-শোক, হতাশা, বেদনা ভুলে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর হতে চাই আমরা। নবপ্রাণের আনন্দে ভেসে যেতে চাই সবাই। বাংলা নববর্ষের আগমনী মুহূর্তে আমরা ফেলে আসা বছরের পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব মেলানো নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করতে চাই না। এবারের পয়লা বৈশাখের আনন্দ উত্সবে আমাদের প্রত্যাশা সুন্দর সমৃদ্ধ সুখী বাংলাদেশের। যেখানে বঞ্চনা, সংঘাত, হানাহানি, লোভ-লালসা, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ক্রসফায়ার, ঘুষ, দুর্নীতি, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্ক, আর্তনাদ আর বেদনা ভরা শোকের মাতম থাকবে না। সবাই একসঙ্গে শান্তি সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। শুভ নববর্ষ। লেখক : ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.