ছুটি নেই পুবাইলের
ছুটি নেই পুবাইলের
রুবেল পারভেজ
মেঘ-বর্ষার ছুটি আছে, ছুটি আছে রোদ কিংবা ছায়ার। সেই পথ ধরে ছুটি আছে ব্যস্ত মানুষের একটুখানি নিঃশ্বাস নেয়ার। তবে প্রকৃতির মতো হুটহাট করে ছুটির এই ছন্দপতন শহরের মানুষের বেলায় খুব একটা ঘটে না। একবেলা কাটানো তাদের অবসরের গল্পই খবর হয়ে ধরা দেয় চারপাশে। এই একদিনের ফিরিস্তি বর্ণনা করতে করতেই যেন কেটে যায় আরেকটি বেলা। এবার আসা যাক এ সপ্তাহের সর্বজনীন ছুটির দিন শনিবার প্রসঙ্গে। এদিন মহররমের ছুটি উপলক্ষে বেশির ভাগ মানুষই ফুরসত পেয়েছিল, হয়তো ঘুরে বেড়িয়েছিল দিনের পুরোটা। কিন্তু এমনো কেউ কেউ আছে, যাদের রাত অবধি কাটাতে হয়েছে ল্যাইট-ক্যামেরার সামনে।
নিস্তব্ধ, স্নিগ্ধ আর শীতমাখা ছায়ায় মোড়ানো পুবাইলের বাঁধন শুটিং স্পট। দূর থেকে চোখে পড়ে একটি দোচালা ঘর। খুব সকাল থেকেই এখানে শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় ধারাবাহিক ‘দ্য ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার’ নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু, অভিনেতা আ খ ম হাসান, আরফান, প্রভাসহ অনেককে। এর পর আরেকটু এগোতেই ভেতর থেকে শোনা যায় আ খ ম হাসান ও আরফানের সংলাপ। আর বাইরে বসে তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন সালাউদ্দিন লাভলু। নির্মাতার ঠিক সামনেই রাখা ছিল বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্যের কপি। তাতে বারবার চোখ বুলিয়ে তিনি ও তার সহকারীকে বেশ সতর্কতার সঙ্গেই বারবার অভিনেতাদের বুঝিয়ে দিতে দেখা গেল।
পুবাইলের নিরিবিলি এমন পরিবেশে যারপরানাই খুশি শুটিং ইউনিটের সবাই। কিন্তু হঠাৎ করেই তাতে বাদ সাধে রাস্তা থেকে আসা-যাওয়ারত ইঞ্জিনচালিত কয়েকটি যান। সংলাপের মাঝে শত্রুর বেশে হঠাৎ হঠাৎ বিকট শব্দে সেগুলোর এমন আগমন ক্যামেরা, লাইটকে বারবার বন্ধ হতে বাধ্য করল। তার পরও কোনো বিরাম নেই। এ শুটিং স্পটের ঠিক পাশের আরেকটি স্পটে তারা শুটিংয়ের আয়োজন করল। সব মিলিয়ে সারা দিন কাজ করা এ মানুষগুলো হয়তো ভুলেই গেছেন আজ ছুটির দিন।
বেলা তখন সাড়ে ৩টা। চলে যাওয়া রোদের শূন্যস্থান পূরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে দূর থেকে আসতে থাকা মানুষ। রঙ-বেরঙের নতুন পোশাকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এদিন অনেকেই ঘুরতে এসেছিল এখানে। ছবির মতো সাজানো গোছানো বাড়ি, ঘাট বাঁধানো পুকুর, দোলনা, বিভিন্ন পশুপাখির নানা ভঙ্গিমার ভাস্কর্য সবকিছুই যেন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে চলছিল। দেখা গেল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আগে থেকেই কস্টিউম পরে গাড়ির ভেতর বসে আছেন। পরিচালকের ডাক এলেই দাঁড়াবেন ক্যামেরার সামনে। সব মিলিয়ে ক্যামেরা-নির্মাতা-অভিনেতা-দর্শনার্থীতে মুখর পুবাইলের এ দৃশ্য দেখে সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। বণিক বার্তা।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ফেরার পালা। যদিও ততক্ষণে সবাই পুবাইলের সৌন্দর্যে বিমোহিত। কিন্তু তার পরও যে ফিরতে হবে। নির্জনতা ছড়িয়ে শহরমুখে দর্শনার্থীদের প্রস্তুতি চলছে। পিচঢালা পথে উঠতেই একের পর এক ইট বালিভর্তি ট্রাক পাশ কাটিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলতে দেখা গেল পুবাইলের সেসব সৌন্দর্যের দিকে। কোনো জিজ্ঞাসা ছাড়াই বুঝে নিতে হলো, শহর তার সীমানা আরো বিস্তৃত করার বাসনা পূরণ করতে বেছে নিয়েছে নিবিড় এ এলাকাটিকে, এর সবুজ ভূমিটাকে আরো গ্রাস করতে। অবশ্য এত আশঙ্কার মধ্যেও প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তই সাধারণ দর্শনার্থী আর নাটকপাড়ার মানুষদের এখনো আন্দোলিত করছে সে। নিজের সৌন্দর্যের কাছে টানতে পুবাইল নামক এ জায়গাটির না হয় ছুটি নাই মিলল!