ছোটরা ব্যবসা ছাড়ছে বড়রা বৈচিত্র্য আনছে

ছোটরা ব্যবসা ছাড়ছে বড়রা বৈচিত্র্য আনছে

জেসমিন মলি

কয়েক বছর ধরেই ছোট আকারের অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করছে শেলটেক। এক বেডরুমের এ বাসাকে তারা বলছে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। এ অ্যাপার্টমেন্ট আবার সাজিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে তারাই। শেলটেকের পাশাপাশি আবাসনে এ ধরনের বৈচিত্র্য আনছে বিল্ডিং ফর ফিউচার, এসইএলসহ খাতটির বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই। ঢাকার বাইরেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে কেউ কেউ। সেসঙ্গে নান্দনিকতা আসছে নকশায়ও।

যদিও এ খাতের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে চিত্রটা বিপরীত। মন্দ বাজারে টিকতে না পেরে ব্যবসা ছাড়ছে অনেকেই। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্য বলছে, গত এক বছরে ২০৯টি প্রতিষ্ঠান তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেনি। সংশ্লিষ্টদের মতে, যারা রিহ্যাব সদস্যপদ নবায়ন করেনি, তাদের বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে।

২০১০ সাল থেকেই মন্দা চলছে দেশের আবাসন খাতে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায় কৌশলে পরিবর্তনকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন তারা। আর এ কৌশলেরই অংশ স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। দেশে এ ধরনের প্রকল্প প্রথম উন্মোচন করে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এসইএল)। রাজধানীর গ্রিন রোডে তাদের তৈরি এসইএল নিবাস হোটেল অ্যান্ড সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ৭৫টি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় আকারের ফ্ল্যাটের দিন এখন আর নেই। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় বেশির ভাগ গ্রাহকই এখন ছোট ফ্ল্যাট কেনায় আগ্রহী। এ চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ছোট ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে আবাসন খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান শেলটেক। রাজধানীর শ্যামলী, মিরপুর, বনানীতে তাদের এক বেডরুমের ৩০০-৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়ছে ২৫-৫০ লাখ টাকা।

শেলটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, জমির দামের কারণেই ফ্ল্যাটের দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ফ্ল্যাট তৈরির জন্য যেসব প্রয়োজনীয় উপাদান আছে, সেগুলোর দামও বাড়ছে দিন দিন। তার পরও সবকিছু মিলিয়ে আমরা ক্রেতার সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে ছোট আকারের ফ্ল্যাট তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছি। পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ছোট আকারের ফ্ল্যাট তৈরির কথা ভাবছি আমরা। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ভবিষ্যতে এ-জাতীয় ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়বে।

ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার অংশ হিসেবে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভূঁইগড় এলাকায় একটি স্যাটেলাইট শহরের প্রকল্প করেছে। আর সাভারে দুই হাজার অ্যাপার্টমেন্টের ১০০টি ভবন তৈরি করছে অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেড। মধ্যম আয়ের ভোক্তার কথা ভেবেই এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। কনকর্ড গ্রুপও মধ্যম আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে রাজধানীর বাইরে প্রকল্প করছে বলে জানা গেছে। এ তালিকায় আরো আছে হামিদ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের মতো প্রথম সারির আবাসন প্রতিষ্ঠান।

রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও এসইএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, কয়েক বছর ধরেই আবাসন ব্যবসা ঢাকার বাইরে সম্প্রসারণ হচ্ছে। সাধারণত বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে যেতে চান না। তবে এখন অনেকেই যাচ্ছেন। এটি আবাসন খাতের ব্যবসার জন্য ইতিবাচক।

পশ্চিমা দেশে কনডোমিনিয়াম অ্যাপার্টমেন্ট অনেক পুরনো ধারণা হলেও কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠছে। হাঁটার জায়গা, খেলার মাঠ, শপিং সেন্টার, সুইমিং পুলের সমন্বিত ব্যবস্থা রয়েছে এসব অ্যাপার্টমেন্টে। প্রতিটি ফ্ল্যাটেই কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যুৎ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের ব্যবস্থা রয়েছে। কনডোমিনিয়াম আবাসনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে শান্তা প্রপার্টিজ, রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট, হামিদ রিয়েল এস্টেটসহ এ খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আবাসনে নান্দনিকতাও আনছে প্রতিনিয়ত। এআরসি আর্কিটেকচারাল কনসালট্যান্টসের স্থপতি মাহবুব হোসেন বলেন, এ সময়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান নতুন ধরনের আবাসন ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তাদের এ উদ্যোগ উচ্চবিত্তের আবাসন সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।

স্থাপত্য নকশা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এ অ্যাপার্টমেন্টগুলোয় যারা বসবাস করবেন, তাদের রুচিকে প্রাধান্য দিয়েই এর নকশা করা হয়েছে।

মন্দা পরিস্থিতিতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায় বৈচিত্র্য এনে টিকে থাকলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো তা পেরে উঠছে না। ব্যবসাই ছেড়ে দিচ্ছে তারা। রিহ্যাবের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরখানেক আগেও সংগঠনের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৩০। সে সংখ্যা এখন নেমে এসেছে ১ হাজার ১২১-এ। এ হিসাবে গত এক বছরে সদস্যপদ নবায়ন করেনি ২০৯টি প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যেসব প্রতিষ্ঠান সদস্যপদ নবায়ন করেনি, তার বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। চলমান প্রকল্পের ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিতে ব্যবসা চালু রেখেছেন অনেক ব্যবসায়ী। এগুলোর সবই তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠান। বণিক বার্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.