জোড়-বিজোড় নীতিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে সফল দিল্লি – আমরা নই কেন ?

শব্দ দূষণ আর বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ১ জানুয়ারি থেকে দিল্লিতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় জোড়-বিজোড় পরিবহন নিয়ম৷ সেই অনুসারে জোড়-বিজোড় নম্বর প্লেটের গাড়ি একদিন অন্তর রাস্তায় নামছে৷ তবে এই নিয়মের চালুর পর পরই সেখানে এর কার্যকারিতা নিয়ে  শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ তবে সর্বশেষ খবর হলো দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে । দিল্লিতে যদি এই উদ্যোগ সফল হয় তবে ঢাকায় এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ঢাকায় এখন যানযট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বায়দূষণ ছাড়াও কি পরিমান তেল গ্যাসের অপচয় হচেছ আর কত শ্রমঘন্টা নষ্ট হচ্ছে তার হয়তো সঠিক হিসাবই পাওয়া যাবে না। তাহলে এ ধরনের সাহসী উদ্যোগ আমরা কেন নিতে পারবো না ?
দিল্লির রাস্তায় জোড়-বিজোড় নীতি শুরু হওয়ার পর বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর ধূলিকণার পরিমাণ ৫০% কমে গেছে বলে জানিয়েছে দিল্লি সরকার। গত শনিবার দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় বায়ু দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। তারপরই এ কথা জানিয়েছে কেজরিওয়াল সরকার। তবে শনিবার দিল্লির আবহাওয়া বেশ ভালো ছিল বলেই বাতাসে দূষণের পরিমাণ কম ধরা পড়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
জোড়-বিজোড় নীতির সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার। পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দিল্লির রাস্তায় একদিন জোড় ও একদিন বিজোড় নম্বর প্লেটের গাড়ি চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে দিল্লির সরকার। দিল্লি সরকারের এই নীতিতে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টও। তাই ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দিল্লির রাস্তায় জোড়-বিজোড় নীতিতে গাড়ি চলায় কোনও সমস্যা রইল না।
দিল্লির পরিবহণ মন্ত্রী গোপাল রাই জানিয়েছেন, “এই কয়েক দিনের মধ্যেই জোড়-বিজোড় নীতির উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছি। ১৫ জানুয়ারির পর চূড়ান্তভাবে দিল্লির বাতাসে দূষণের পরিমাপ করা হবে। তার আগে শনিবার চারটি জায়গায় দূষণ মাপা হয়। ৫০% বায়ু দূষণ কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। রাস্তায় যানজটও অনেকটা কমে গিয়েছে। এই জোড়-বিজোড় নীতি সরকার বেআইনিভাবে চাপিয়ে দিয়েছে বলে যারা প্রচার করছেন, তাদের জানাই মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্টের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকার এটা করতেই পারে।”
এতো গেলো দিল্লির কথা – তাহলে আমাদের ঢাকায় এখন এই ব্যাবস্থাই হোক বা অন্য কোন ব্যাবস্থাই হোক খুব তাড়াতাড়ি কেন আমরা গ্রহন করতে পারবো না ? । এর আগে ঢাকায় টু ষ্ট্রোকের অটো রিকসা বন্ধ করে সিএনজি চালিত অটো রিকসা চালুর ফলে তখন পরিবেশ দূষণ থেকে ঢাকাবাসি কিছুটা হলেও রেহাই পেয়েছিলো – এটাও প্রায় ১০/১২ বছর আগের কথা, ইতোমধ্যে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ী, বাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুনে। অতিরিক্ত যানজট প্রত্যক্ষভাবে মানুষের শ্রমঘন্টা ও পরিবেশ দূষণের কারন হলেও পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থের প্রতি এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সূষ্টি করছে। একই সাথে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে – ঢাকা শহরের গণপরিবহন চলাচলে সঠিক ব্যবস্থা আমরা আজও গড়ে তুলতে পারিনি। বাসের রুট বিকেন্দ্রিকরনের মাধ্যমে শহরের সব এলাকার মানুষই যেন বাসের সুবিধা পেতে পারে সে ব্যাপারেও আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকা শহরের গণপরিবহন চলাচলে সঠিক ভাবে উন্নত করতে পারলে মানুষও প্রাইভেট কার ব্যবহারে অতিরিক্ত আগ্রহী হবে না। একই সাথে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসের নিজস্ব পরিবহনের দিকেও আগ্রহী করে তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.