টাকা দিয়ে ‘জেলে’ যাচ্ছেন তাঁরা

কাজ আর পড়ালেখার চাপ থেকে মুক্তি পেতে দক্ষিণ কোরিয়ার লোকজন ‘জেলে’ যাচ্ছেন৷ ২০১৩ সালে নির্মিত এমন এক নকল কারাগারে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি দক্ষিণ কোরীয় থেকেছেন৷

বিশ্বের অন্যতম শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়া৷ তবে সেখানকার চাকরির বাজার বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ৷ লেখাপড়ায়ও শিক্ষার্থীদের বেশ চাপে থাকতে হয়৷ ৩৬টি দেশের উপর ওইসিডি-র করা এক জরিপ বলছে, ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরীয়রা গড়ে ২,০২৪ ঘণ্টা কাজ করেছেন৷ অর্থাৎ, মেক্সিকো আর কস্টারিকার পর তাঁরাই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন৷ এই অবস্থা থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও অনেকেই মুক্তি পেতে চান৷

হ্যাঁ, জেলই বটে৷ কারণ, সেখানকার ‘কয়েদি’দের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক আছে৷ তবে পার্থক্য হচ্ছে, এই জেলে যাওয়ার জন্য বাসিন্দাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়৷ ছবিতে জেলে ঢোকানোর আগে কয়েদিদের দেখা যাচ্ছে৷

‘প্রিজন ইনসাইড মি’ নামে নকল এই জেলটি ২০১৩ সালে চালু হয়৷ তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ এই জেলে গিয়েছেন৷ খেয়াল করে দেখুন, প্রতিটি জানালায় একজন করে মানুষকে দেখা যাচ্ছে৷

২৮ বছরের পার্ক হাই-রি (ছবি) সম্প্রতি ৯০ ডলার দিয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য ঐ জেলে গিয়েছিলেন৷ ‘‘এই কারাগার আমাকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে,’’ রয়টার্সকে জানান তিনি৷ সেখানে গিয়ে কীভাবে ভালোভাবে জীবনযাপন করা যায়, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন হাই-রি৷

কয়েদিরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না৷ তাঁদের পাঁচ বর্গমিটারের একটি ঘরে থাকতে দেয়া হয়৷ সেখানে মোবাইল ফোন কিংবা ঘড়ি নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই৷

কয়েদিদের মেঝেতে শুয়ে থাকতে হয়৷ ছোট্ট একটি টয়লেট আছে৷ কোনো আয়না নেই৷ সকালের খাবার হিসেবে সিদ্ধ চাল আর রাতের খাবারের জন্য মিষ্টি আলু ও কলার জুস দেয়া হয়৷ চা খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে সেখানে৷ যোগব্যায়াম করার পাটি আর লেখার জন্য একটি কলম আর খাতাও দেয়া হয়৷

কারাগারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নোহ জি-হায়াং জানান, তাঁর স্বামী একসময় সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টা কাজ করতেন৷ সেই সময় ক্লান্তি দূর করতে তিনি মাঝেমধ্যে সপ্তাহখানেকের জন্য নিজেকে কোথাও বন্দি করে রাখার কথা বলতেন৷ স্বামীর এই ভাবনা থেকেই এমন জেলখানার আবির্ভাব বলে জানান জি-হায়াং৷ ছবিতে কয়েদিদের খাবার দিতে দেখা যাচ্ছে৷

জি-হায়াং জানান, তাঁদের জেলে ক্রেতারা সাধারণত ২৪ কিংবা ৪৮ ঘণ্টা সময় কাটান৷ কারাবাস শেষে অনেকেই নাকি জি-হায়াংকে বলেন, ‘‘এটা জেলখানা নয়৷ আসল কারাগার হচ্ছে সেটা, যেখানে আমরা ফেরত যাচ্ছি৷’’ ছবিতে জেলেতে ঢোকার আগে কয়েদিদের দেখা যাচ্ছে৷ সূত্র:ডয়চে ভেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.