ডিজিটালকরণে প্রয়োজন ডিজিটাল সংস্কৃতি
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত ডিজিটাল সংস্কৃতি। তাহলেই যেকোনো টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সহজ হবে। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের (এমডব্লিউসি) প্যানেল থেকে ডিজিটাল অপারেটরদের সেশনে এ কথা বলা হয়েছে। স্পেনের বার্সেলোনায় এমডব্লিউসির শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। খবর টেলিকম এশিয়া।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনভিত্তিক বহুজাতিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেঞ্চার ডিজিটালের গ্রুপ অপারেটিং অফিসার শেলী সোয়ানবাক বলেন, তিনি তার প্রতিষ্ঠান ডিজিটালাইজেশনের জন্য প্রথম ধাপে পত্তন করেন ডিজিটাল সংস্কৃতি। কর্মীদের পছন্দমতো পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দেয়া হয় সে সময়। সোয়ানবাকের ভাষায়, ‘আমরা নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছিলাম— ডিজিটাল স্টুডিও ছিল এর মধ্যে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আনা হয় পরিবর্তন। গুরুত্ব দিয়েছিলাম সংস্কৃতিমনা কর্মী নিয়োগে। উন্নত সংস্কৃতিমনারাই ডিজিটাল সংস্কৃতির পরিবেশ ভালোভাবে তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে দক্ষতার মানদণ্ড একটু কম হলেও সমস্যা হয় না। উপযুক্ত সংস্কৃতি তৈরি হলে প্রযুক্তিপ্রক্রিয়ার রূপের ডিজিটালাইজেশনও সহজ হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, তবে এর জন্য একটি বুনিয়াদ দরকার। এ বুনিয়াদকে ভিত্তি করে ডিজিটাল সংস্কৃতি কাজ করবে। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রচেষ্টা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্রডব্যান্ড ও টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান টেলিফোনিকার প্রধান নির্বাহী মাইকেল ডানকানের মতে, ডিজিটাল সংস্কৃতির রূপান্তর কোনো সংস্থার কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে দামি সম্পদ হচ্ছে ভোক্তা ও প্রতিভাবান। এ দুই শ্রেণীর সঙ্গে কাজ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
ডানকান টেলিফোনিকার ডিজিটালাইজেশন নিয়েও কথা বললেন সেশনে। তিনি বলেন, কোম্পানিতে ডিজিটাল সেবা উন্নয়নে একটি পৃথক ডিজিটাল ইউনিট স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে এ ইউনিটকে মূল ব্যবসার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বিটুবি ও বিটুসি সেগমেন্টের সঙ্গে। অর্থাত্ ডিজিটাল রূপান্তর থাকতে হবে একেবারে মূলভিত্তিতে। ডানকান ডিজিটাল অপাটেরদের স্থিতিস্থাপক হওয়ার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিজেকে উদ্ভাবনের কাজে নিয়োজিত করতে হবে। উদ্ভাবন সংস্কৃতিই সফলতা-ব্যর্থতার মানদণ্ডে ভারসাম্য আনতে পারঙ্গম। তবে ডিজিটাল রূপান্তরে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত, তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হওয়া।
নিজের প্রতিষ্ঠানের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও একটি ধারণা দেন ডানকান। টেলিফোনিকায় দুটো ক্যাটাগরি আছে। ক্যাটাগরির একটিতে গুরুত্ব দেয়া হয় আউটস্ট্যান্ডিং কানেক্টিভিটি ও ইন্টিগ্রেটেড অফার্সে। অন্যটি হচ্ছে কাস্টমার এনগেজমেন্ট-বিষয়ক। এ ক্যাটাগরির মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব। পরবর্তী ধাপের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সঙ্গে বিগ ডাটা ইনোভেশন— এন্ড-টু-এন্ড ডিজিটালাইজেশন। এর মাধ্যমে সেবা সম্পর্কে ভোক্তাদের মতামত সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এমটিএস গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) ভাসিল লাতসানিচ শোনালেন ব্যর্থতার গল্প। শুরুর দিকে ভোক্তা অভিজ্ঞতা উন্নয়নে কাস্টমার অ্যাপ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছিল এমটিএস। তবে ডিজিটালাইজেশনের জন্য এটি মোটেই পর্যাপ্ত নয়। সঠিক পথে চলতে হবে। অ্যাকসেঞ্চার ডিজিটাল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মাইক সাটক্লিফও প্যানেলে ছিলেন। তিনি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো অবস্থান তৈরিতে করণীয় বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন। তবে ভোক্তাদের সহায়তার দিকেই গুরুত্ব দিতে বলেন বেশি। তার ভাষ্যে, ডিজিটাল সেবা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে হবে ডিজিটাল অপারেটরদের। এ কাজে সাহায্য করতে পারে ভয়েজ, ভিডিও, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), হলোগ্রামসহ অন্যান্য প্রযুক্তি।