ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার উপসর্গসমূহ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটি লোক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। বিষণ্ণতা বর্তমানে অক্ষমতার চতুর্থ কারণ হিসাবে চিহ্নিত এবং ২০২০ সাল নাগাদ এটা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান। এখানে বিষণ্ণতা কি কি উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয় সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করব যাতে আমাদের পাশে পরিচিত কেউ আক্রান্ত হলে আমরা বুঝতে পারি এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। গবেষণায় দেখা গেছে Depression বা বিষণ্ণতার সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা দুটোই কম হয়।

Depression বা বিষণ্ণতা সাধারণত মন খারাপ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে কাজে কর্মে আনন্দ না পাওয়া, অল্পতে রেগে যাওয়া, রাতে ঘুম কম বা বেশি হওয়া, ক্ষুধা কমে বা বেড়ে যাওয়া, শরীরের শক্তি কমে যাওয়া, লম্বা সময় মনোযোগ দিয়ে কাজ না করতে পারা, নিজেকে দুর্বল মনে হওয়া, মূল্যহীন মনে হওয়া, ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে হওয়া, আগে যেসব কাজে আনন্দ পেতেন সে আনন্দ না পাওয়া, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, বন্ধু বান্ধবদের সাথে মেলামেশা কমে যাওয়া, আত্মহত্যা করার চিন্তা বা চেষ্টা, জৈবিক চাহিদা কমে যাওয়াসহ আরও অনেক উপসর্গ নিয়ে দেখা দিতে পারে। অনেক সময় Depression বা বিষণ্ণতার সঙ্গে ভ্রান্ত বিশ্বাস বা ধারণা দেখা যেতে পারে।

এই উপসর্গ গুলো দিনের বেশিরভাগ কাজে, বেশিরভাগ সময়, বেশিরভাগ অবস্থায়, বেশিরভাগ জায়গায় স্বভাবত উপস্থিত থাকে।

এই উপসর্গের জন্য দৈনিক কাজের ক্ষতি হতে পারে।

এই উপসর্গ গুলো একটানা ২ সপ্তাহের বেশি থাকে।

Depression বা বিষণ্ণতা সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় অবহেলিত হয়। এই উপসর্গগুলো দেশ, পরিবেশ, ব্যক্তিগত অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে ভিন্ন রকম হিসাবে দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের উপমহাদেশে Depression বিষণ্ণতা মন খারাপের চাইতে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ নিয়ে বেশি উপস্থিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মন খারাপ এই কথা বলতে বা বুঝতে এবং মানতে অনেক সময় লেগে যায়। আমাদের পরিচিত জন সহ অনেক সময় উপযুক্ত ব্যক্তিগণও মনের কষ্টটাকে বুঝতে ছোট করে ফেলি। যার ফলে রোগীদের ভোগান্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়। দ্রুত সময়ে রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে পারলে আমাদের রোগীদের, পরিবারের এবং সার্বিক ভোগান্তি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

Depression বা বিষণ্ণতা নিয়ে লিখতে বা আলোচনা করতে গেলে বছর বছর আলোচনার পরও শেষ করা কঠিন হবে। আমার সামান্য প্রচেষ্টা এই জন্যেই, যাতে আমাদের পরিচিত কারো মন খারাপ দেখলে একেবারেই হেসে উড়িয়ে না দিয়ে বা তাকে নিয়ে ঠাট্টা না করে আলাদা ভাবে ডেকে একটু সহানুভূতির সাথে জিজ্ঞাসা করি, আসলেই সে Depression বা বিষণ্ণতা রোগে ভুগছে কিনা। আমাদের মনে রাখতে হবে বিষণ্ণতা রোগীর চিকিৎসা আছে, চিকিৎসা করলে ভালো হবার সম্ভাবনা আছে এবং তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ। সৌজন্যে-মনের খবর।

ডা. এস এম ইয়াসির আরাফাত
এমডি রেসিডেন্ট (সাইকিয়াট্রি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.