ঢাকায় এসেছিলেন শরণার্থী হয়ে, হলেন নায়ক রাজ্জাক

আহরার হোসেন বিবিসি বাংলা :
বাংলাদেশের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়ক আব্দুর রাজ্জাক আজ পঁচাত্তরে পা দিলেন।

প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ করছেন তিনি।

ভক্তরা তাকে চেনেন নায়ক রাজ রাজ্জাক নামে, আব্দুর রাজ্জাক তার পোশাকি নাম।

গত বছর প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, বলতে গেলে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। এখনো ততোটা সুস্থ নন তিনি।

কিন্তু তার পঁচাত্তর তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনেকেই রেখেছে বিশেষ আয়োজন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, ফলে ঘর ছেড়ে বেরোতেই হয়েছে তাকে।

এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেবার এক ফাঁকেই বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

রাজ্জাক বলেন, “আমার প্রেম আমার ভালবাসা আমার সবকিছু অভিনয়, চলচ্চিত্র। এছাড়া আমি আর কিছু জানি না, পারি না। আল্লাহ অনেক সুযোগ দিয়েছেন, অনেক কিছু করতে পারতাম। করিনি।”

“স্বপ্ন ছিল আজীবন কাজ করতে করতে মারা যাব। মরেই গেছিলাম প্রায়। আবার ফিরে এসেছি, আল্লাহ ফিরিয়ে দিয়েছেন। যেন কাজ করতে করতে মরে যেতে পারি, এই দোয়া আমি সবার কাছে চাই।”

আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন।

এর পর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছায়াছবি বেহুলা। সেই থেকে শুরু।

গত বছরও তার অভিনীত একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।

বিবিসিকে রাজ্জাক বলেন, “আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।”

রাজ্জাকের নায়ক জীবনে জন্ম হয়েছে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো জুটি।

রাজ্জাক-কবরী জুটির কথা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

দুপুরে ঢাকার এফডিসিতে পরিচালক সমিতির এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

প্রায় অর্ধশত বছরের অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাকের ঝুলিতে রয়েছে তিনশোটির মত বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটিই পেয়েছে ক্লাসিকের খ্যাতি।

আগের দিনের অনেক তারকার মতো এখনকার তারকাদের চোখেও রাজ্জাক একজন আইডল।

ঢাকাই ছবির এই সময়ের তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতা শাকিব খানের ভাষায়, “এখনকার প্রজন্ম এবং আগামী যত প্রজন্ম আসবে তাদের কাছে নায়ক রাজ রাজ্জাক একটি প্রেরণার শক্তি হয়ে থাকবে।”

অভিনয় জীবনের এক পর্যায়ে ছবি পরিচালনার কাজও শুরু করেন রাজ্জাক।

ষোলটির মতো ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন তিনি।

সবশেষ পরিচালিত ছবিটির নাম আয়না কাহিনী, যেটি মুক্তি পায় গত বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.