ঢাকা মহানগরের মোহাম্মদপুরের আসাদ গেটের নামকরণ প্রসঙ্গে ইতিহাস।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে, স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্বের অন্যতম অংশ ছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলন। সেই সংগ্রামের অন্যতম শহীদ, শহীদ আসাদ। তাঁর পঞ্চম ভাই অধ্যাপক মনিরুজ্জামান আমার সাথে পরিচিত। দীর্ঘদিন আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন এবং বর্তমানে ঢাকা আছেন। সমকালীন সামাজিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার অফিসে এসেছিলেন শনিবার ১৫ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যায়। আমি মনে করলাম, আজকের তরুণ সমাজের নিকট, সেই আত্মত্যাগী আসাদের পরিচয় তুলে ধরা উচিত।
১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স এর চলমান পরীক্ষার পরীক্ষার্থী ছিলেন আসাদুজ্জামান। ঢাবি’র ঢাকা হলে থাকতেন। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের পূর্বসূরী ছিল সর্বদলীয় ছাত্র আন্দোলন। সেই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার সভাপতি: আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ তারিখে ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক বিরাট মিছিলের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মিছিলটি যখন, বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটের অতি সন্নিকটে এসে পৌঁছায় তখন, জনৈক পুলিশ সদস্য, আসাদকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। আসাদ পুলিশের রিভলবার-এর গুলিতে আক্রান্ত হয়ে প্রধান সড়কের ওপর পড়ে যান এবং শাহাদত বরণ করেন।
ঐ মিছিলে হাজারো সাধারণ ছাত্রের সাথে , আমিও পিছনের দিকে শামিল ছিলাম । আমি তখন ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের অনার্স পড়ুয়া ছিলাম ।
বাংলাদেশের জনগণ পরেরদিন ২১ জানুয়ারি তারিখে যে সকল স্থাপনায় বা স্থানে আইয়ুব খানের নাম ছিল, সেখানে ‘আসাদ’ নামটি বসিয়ে দিল। কিন্তু সকল স্থানের পুন:নামকরণ কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও মিরপুর রোডের ওপর আইয়ুব গেটের নাম বদলিয়ে আসাদ গেট করা হয়েছিল—সেটা টিকে গিয়েছে। আজকের বাংলাদেশি তরুণদের নিকট ৬৯’এর তরুণ আসাদের আত্মত্যাগের স্বাক্ষী এই আসাদ গেট।
আসাদদের পৈত্রিক বাড়ি বা গ্রামের ঠিকানা, বর্তমান নরসিংদী জেলার শিবপুর থানায়। উনার বাবা (বর্তমানে মরহুম) মৌলভী আবু তাহের ছিলেন শিবপুর হাই স্কুলের হেডমাস্টার। উনার মা (বর্তমানে মরহুম) মতিজান খাদিজা খাতুন ছিলেন আইটি স্কুল নারায়ণগঞ্জ-এর হেড মিস্ট্রেস। জনাব আসাদের জ্যেষ্ঠতম ভাইয়ের নাম (বর্তমানে মরহুম) খুরশিদউজ্জামান; দ্বিতীয় ভাইয়ের নাম (বর্তমানে মরহুম, বিখ্যাত রেডিওলজিস্ট) ডাক্তার অধ্যাপক মোরশেদুজ্জামান; তৃতীয় ভাই প্রকৌশলী রশিদুজ্জামান বুয়েট প্রথম ব্যাচ তথা ১৯৬৪-এর ছাত্র এবং বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ এর স্থপতি বিখ্যাত লুই কান-এর প্রধানতম সহকর্মী ও সহযোগি ছিলেন। শহীদ আসাদ হলেন ভাইদের মধ্যে চতুর্থ, জন্ম ১৯৪২ এবং মৃত্যু ১৯৬৯। পঞ্চম ভাই জনাব মনিরুজ্জামান এবং শহীদ আসাদ (অর্থাৎ দুই ভাই একসাথে) ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্স পাশ করেন। শহীদ আসাদের জন্য এটা ছিল ইতিহাসে দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করা। ষষ্ঠ ভাই সরকারি চিকিৎসক ডাক্তার জনাব নুরুজ্জামান, সদ্য অবসরে গিয়েছেন। দুই বোন; প্রথম বোন আনোয়ারা ফেরদৌসী যুউলজী বা প্রাণীবিদ্যায় মাস্টার্স করেছিলেন এবং তার স্বামী অধ্যাপক মুরতাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছিলেন। অপর বোন দেলোয়ারা ফেরদৌসী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যুউলজী বা প্রাণীবিদ্যায় প্রফেসর ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘটিকা, রবিবার ১৬ আগস্ট ২০১৫।