ঢাকা সিটি নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য নির্বাচন কমিশন ‘তড়িঘড়ি করে’ তফসিল ঘোষণা করেছে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। এ আশঙ্কা নিয়েই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে তারেক রহমান সংযুক্ত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে হঠাৎ করে, তড়িঘড়ি করে। এর পেছনে নির্বাচন কমিশনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে আশঙ্কা করছি। তারা সরকারি দলকে জেতানোর জন্যই তাড়াহুড়া করে একটা তফসিল ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবেন এবং নিচ্ছেন। সে ধারাবাহিকতায় এ নির্বাচনেও অংশ নেবেন। তবে সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, পুরো নির্বাচনটা ইভিএমে হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি। ইভিএমে কারচুপির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলের আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং জমা শুক্রবার বিকেল ৪টার মধ্যে। শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হবে।

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, তার বিচার ও জামিনের বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দেওয়ায় সংস্থার প্রতি বৈঠকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর বাসায় নেতাকর্মীদের ভিড় :

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর বাসায় নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তবে এ দুই প্রার্থীই বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিতের আগে কোনো প্রচারে যেতে চাইছেন না। তা সত্ত্বেও দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী, সমাজের বিশিষ্টজন ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন।

এর আগে, ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। ওই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করার পরও তাবিথ আউয়াল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০টি ভোট পেয়েছিলেন। আর ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আনিসুল হক। ফলে, এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না বলেও দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, রবিবার নির্বাচন কমিশন এই দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর দক্ষিণ সিটির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে ফোন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।

অবিভক্ত ঢাকার মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছে। দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।’

উল্লেখ্য, রবিবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উভয় সিটির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, বাছাই ২ জানুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি।