তিনি না থাকলে

আজকের কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন, মানে দুনিয়া বদলের মূল মশলা সব জন্মেছে তাঁরই চিন্তা থেকে। তাঁর জন্মের দুশো বছর পূর্ণ হল। লিখছেন পথিক গুহ

আড়াই বছরের বাচ্চা হঠাৎ নিখোঁজ। গিয়েছিল ইস্কুলে। বাড়ির কাছেই। বয়স দেড় বছর হতেই যেখানে ভর্তি করে দেন বাবা। বেশি দূরে নয়, তাই যাতায়াত একা একাই। সে দিন ছুটির পর ছেলে আর ফেরে না। উদ্বিগ্ন, উদ্ভ্রান্ত বাবা খোঁজ করছেন শহরের পথে পথে। অনেক পরে, পাওয়া গেল তাকে, এক বড় রাস্তার মোড়ে। সেখানে তাকে ঘিরে বিশাল জটলা। সে যেন মধ্যমণি। কী ব্যাপার? শিশুর উদ্দেশে বয়স্ক মানুষেরা ছুড়ে দিচ্ছে একের পর এক কঠিন ইংরেজি শব্দ। আর সে অবলীলায় বলে দিচ্ছে শব্দের বানান। নির্ভুল। মানুষ হতবাক। প্রতিভার প্রশংসায় জুটছে পুরস্কার। শিশুর দিকে পয়সা ছুড়ছে অনেকে। আর সে যত্নে কুড়িয়ে নিচ্ছে সব। ছেলে খুঁজে পেয়ে বাবার আনন্দ। কিন্তু চোখে জল। সংসারে অনটন। দারিদ্রের ব্যথা ছুঁয়েছে শিশুকেও!

ধন্য সে শিশু। বড় হয়ে সে পালটে দিয়েছিল দুনিয়া। তবে, জেনেবুঝে কিন্তু করেনি কিছু। যা করেছিল, সব খেয়ালে, নেশায়। বলা যায়, সমকাল থেকে অনেক, নে এগিয়ে ভেবেছিল সে; তাই তার ভাবনার ফসল দুনিয়াবদল স্বচক্ষে দেখা হয়নি তার। না হোক, আজকের কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন জন্মেছে তারই চিন্তা থেকে। তাই সে, যথার্থই ফাদার অব কম্পিউটার সায়েন্স ২০১৫ পৃথিবী কুর্নিশ জানাচ্ছে তাকে। বছর তার জন্মের দুশো বছর পূর্ণ হল

নভেম্বর, ১৮১৫। ইংল্যান্ডের লিংকন শহরে জন্ম নিল যে শিশু, তার নাম জর্জ বুল। বাবা জন। জুতো বানান এবং বিক্রি করেন। মা মেরি অ্যান। এক বাড়িতে দাসীর কাজ করেন। জর্জ তাঁদের প্রথম সন্তান। পরে এক মেয়ে এবং দুই ছেলে। জনের সংসার চলে না ভাল ভাবে। জন জুতো বানান বটে যত্ন করে, কিন্তু খদ্দের নেই যে। টা পেট চালাতে তিনি হিমশিম

তা হোক। পেটের খিদে সহ্য করেও জন মেটান মনের খিদে। অঙ্কে গভীর আগ্রহ তাঁর। পাটিগণিত, বীজগণিত কিংবা জ্যামিতি। বড় ছেলে জর্জ ভীষণ প্রিয় জনের। তাঁরই ইচ্ছায় এবং স্ত্রীর অমতে ওই ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল মাত্র দেড় বছর বয়সে। বাবার সাধ ছিল শহরের নামী স্কুলে ভর্তি করার। সাধ্য নেই। তাই অনামী স্কুলে। সে তো পরের ব্যাপার। তার আগে ছেলের প্রথম শিক্ষক তার বাবা। শুধু পড়ানো নয়, খেলনা বানানোর কাজও বেচারা বাবার। কেমন খেলনা? ক্যামেরা, ক্যালাইডোস্কোপ, টেলিস্কোপ এবং সানডায়াল। যে সংসারে অনটন, সেখানে সব খেলনা বানানো। তো গরিবের ঘোড়ারোগ!

হতে পারে। তবে যে ছেলে খেলনা হিসেবে নাড়াচাড়া করে সব, সে সমবয়সিদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে ঢের, আশ্চর্য কী? শুধু ভর্তির পরীক্ষায় ভাল ফলের সুবাদে বৃত্তি পেয়ে বড়, আরও নামী স্কুলে পড়ার সুযোগ। সেখানেও সবার নজর কাড়ল এই ছেলেটির প্রতিভা। এক সহপাঠীর কথায় গোটা ক্লাসে কেউ ওর সমকক্ষ ছিল না। এমনকী মাস্টারমশাইও নয়। তিনি শুধু ওকে পড়ানোর ভান করতেন। যদিও জানতেন ওকে নতুন করে পড়ানোর তেমন কিছুই নেই। যেন আমাদের মধ্যে এসে পড়া অসামান্য প্রতিভা। যেন প্রথম সারির স্টার।অথচ সব সময় ভীষণ চুপচাপ। ভীষণ লাজুক।

১৮২৫। জর্জের বয়স দশ। জন বুল বুঝলেন ছেলেকে শেখানোর বিদ্যে তাঁর শেষ। ছেলে শিখতে চায় ল্যাটিন, যা তিনি তেমন ভাল জানেন না। শরণ নিলেন এক বন্ধুর। তিনি জর্জকে কঠিন ভাষা শেখাতে রাজি। তাঁর কাছে ল্যাটিন শেখার পর নিজে নিজে কষ্ট করে গ্রিক, ফরাসি এবং ইতালিয়ান ভাষা শিক্ষা। কিছু গ্রিক কবিতা জর্জ অনুবাদ করে ফেলল ইংরেজিতে। পড়ে কয়েক জন প্রশংসা করল। গর্বিত বাবা সেগুলো পাঠিয়ে দিলেন স্থানীয় পত্রিকায়। ছাপাও হল। তার পর বিতর্ক। এক পণ্ডিত খুঁত ধরলেন। অনুবাদে নাকি ভুল হয়েছে। পত্রিকায় চিঠিচাপাটি। চলল কয়েক মাস। শেষে রায় জর্জের পক্ষে। পণ্ডিত হার মানলেন তার কাছে

১৮৩১। জর্জের বয়স ষোলো। টিমটিম করেও আর চলল না বাবার জুতোর দোকান। সংসারে রোজগার একদম বন্ধ। মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রাবস্থায় শেষ হয়ে গেল জর্জের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনো। সংসারের হাল ধরতে হবে। যে ছেলে মাধ্যমিকউত্তীর্ণ নয়, তার চাকরি হতে পারে কারখানা শ্রমিকের। জর্জের আশা অন্য রকম। অনেক খুঁজে মিলল সে চাকরি। স্কুলে। অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার

এই ভাবে কয়েকটা স্কুলে কাজ করার পর জর্জ নিজেই এক স্কুলে প্রধানের দায়িত্ব পেলেন। তিনি ডুব দিলেন জ্ঞানসাগরে। গণিত আর ক্লাসিক সাহিত্যে। সান্ধ্য স্কুল খুললেন নিজে। ছাত্রছাত্রী? কারখানার শ্রমিক, বারবনিতা। জর্জ বিশ্বাস করেন, জ্ঞানের স্বাদ পেলে ওদের জীবনও হবে মধুর। ক্লান্তি যাবে দূরে

২৩ বছর বয়সে বুল লিখলেন প্রথম গবেষণাপ্রবন্ধ। অবশ্যই গণিত বিষয়ে। তার পর একে একে অনেক পেপার। ১৮৪১ গোড়াপত্তন করলেন ইনভ্যারিয়েন্ট থিয়োরি নামে গণিতের সেই বিশেষ শাখার, যা পরে কাজে লেগেছিল অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের গবেষণায়। ১৮৪৪ লন্ডনে রয়্যাল সোসাইটি প্রথম চালু করল গোল্ড মেডেল। বুল প্রথম বছরেই সম্মানিত। গণিতজ্ঞ হিসেবে তখন তাঁর খ্যাতি চার দিকে। ১৮৪৯ সালে আমন্ত্রণ পেলেন আয়ার্ল্যান্ডের কর্ক শহরে কুইন্ কলেজ থেকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ চান, বুল যোগ দিন গণিতের অধ্যাপক হিসেবে। বুল রাজি। এক দিন যে ছেলেটি পেরোতে পারেনি মাধ্যমিকের গণ্ডি, সে কিনা আজ কলেজের প্রফেসর! প্রতিভার স্বীকৃতি আর কাকে বলে?

স্বশিক্ষিত জিনিয়াসেরা বুঝি এক রকম হন। গণিতের একএকটা আশ্চর্য থিয়োরেম মাথায় আসে কী ভাবে? প্রশ্নের উত্তরে শ্রীনিবাস রামানুজন বলতেন, ইষ্টদেবতা নাকি তাঁকে স্বপ্নে উপহার দেন ওগুলো। আর যুক্তিকে গণিত বানিয়ে ফেলা যে কাজের জন্য কম্পিউটারের জনক হিসেবে বুল জগদ্বিখ্যাত কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল? জবাবে বুল বলেছিলেন তাঁর দিব্য অভিজ্ঞতার কথা। ঈশ্বর নাকি স্বয়ং আবির্ভূত হয়ে ভক্তকে ব্যাখ্যা করেন, মানুষের মন কী ভাবে নাড়াচাড়া করে চিন্তা

মূলে যা থাক, আমরা বোঝার চেষ্টা করি যুক্তিকে গণিত বানানোর কৌশল। ধরা যাক দুটো বিবৃতি। = তেন্ডুলকর এক জন ক্রিকেটার; = লংকার স্বাদ মিষ্টি। আমরা জানি দুটো বিবৃতির একটা সত্যি একটা মিথ্যে। যেটা সত্যি, তার মান ধরা যাক ১। যা মিথ্যে, তা ০। তা হলে = ; = ০। বার আর যদি এবং অব্যয় দিয়ে জুড়ে দেওয়া যায়? এবং খ। সচিন তেন্ডুলকর এক জন ক্রিকেটার এবং লংকার স্বাদ মিষ্টি। এই যৌথ বিবৃতি সত্যি না মিথ্যে? অবশ্যই মিথ্যে, কারণ সত্যি হতে গেলে এবং প্রত্যেকটা সত্যি হতে হত। ক্ষেত্রে ঘটনা তো তা নয়। সুতরাং, ( এবং )-এর মান ০। বুল দেখালেন, এবং অব্যয়কে অনেকটা গুণ (X) হিসেবে লেখা যায়। কেননা, ভাবে লিখলে ( এবং )-এর মান পাওয়া যায়। কী ভাবে? এবং = X =

X =

এবংএর বদলে যদি অথবা অব্যয় প্রয়োগ করা হয়? সচিন তেন্ডুলকর এক জন ক্রিকেটার অথবা লংকার স্বাদ মিষ্টি ( অথবা ) এই যৌথ বিবৃতির একটা অংশ সত্যি হলেই কিন্তু গোটা বক্তব্যের সত্যি হতে বাধা নেই। সুতরাং, ( অথবা )-এর মান ১। বুল দেখালেন, অথবা অব্যয়কে যোগ (+) প্রক্রিয়া হিসেবে লেখা যায়। কারণ, অথবা = + = +=

এবং আর অথবাকে ভাবে গুণ আর যোগ বানিয়ে ফেলা কি ঠিক?

উদাহরণ দিলে দেখা যাবে, কাজটা এক্কেবারে ঠিক। ধরা যাক, সব কালো গরু= ; সব মোটা গরু= খ। তা হলে + = কালো অথবা মোটা সব গরু। X বা কখ= কালো এবং মোটা সব গরু। বার ধরা যাক, কলকাতার সব গরু= গ। তা হলে, (+)= গক+ গখ। বাস্তবেও তো তা সত্যি। কলকাতার কালো অথবা মোটা গরু= কলকাতার কালো গরু+ কলকাতার মোটা গরু

যুক্তিকে গণিত বানিয়ে ফেলা যেন ছিলরুমালহলবেড়াল গোছের ব্যাপার। কিন্তু এই ম্যাজিক নেহাতই বিশুদ্ধ গণিতভাবনা। বুদ্ধির ব্যায়াম। তার তো চাপা পড়ে থাকার কথা জার্নালের পাতায়। বুলের সৌভাগ্য, সেই বীজ চাপা পড়ে থাকেনি। তা বরং আজ এক প্রকাণ্ড মহীরুহ। গোটা ইনফরমেশন টেকনোলজি। কোন সে মালি, যার তদারকিতে ঘটল এমন কাণ্ড? আশ্চর্যের ব্যাপার, সে মানুষটাকে কখনও দেখেননি বুল। দেখবেন কী করে, তিনি যে বুলের পরের শতাব্দী, অর্থাৎ বিশ শতকের মানুষ। ক্লদ শ্যানন। দুজন দুই মহাদেশের মানুষ। বুল ব্রিটিশ, শ্যানন আমেরিকান। শুধু স্থান আর কালে নয়, মানসিকতাতেও দুজনে দূরে। বুল বিশুদ্ধ ভাবনার কারবারি। শ্যানন পেশায় ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, যন্ত্রপাতি নিয়ে খুটখাট যার কাজ। এহেন দুই ব্যক্তিত্বের হ্যান্ডশেক। এবং দুনিয়াবদল। কী ভাবে?

জার্নালে বুলের লেখা পেপার পড়ে আইডিয়া এল শ্যাননের মাথায়। যুক্তি= গণিত? ভারী মজা তো। এবং, অথবা, হ্যাঁ, না’— এগুলোকে তো তা হলে যন্ত্রে চালান করা যায়। এক বা একাধিক ইলেকট্রিক সুইচ বিশেষ ভাবে সাজিয়ে, আর তাদের অন কিংবা অফ দশা কাজে লাগিয়ে। গণিতে আগেই জানা ছিল এক পদ্ধতি। থেকে এবং এই দশটা চিহ্নের বদলে শুধু আর দিয়ে সংখ্যা লেখা। শ্যানন ভাবলেন, = সুইচ অন; = সুইচ অফ। বুলের ভাবনা আর শ্যাননের প্রয়োগ মিলেমিশে এগোল যে পথে, সেখানে মিলল কম্পিউটার

এই হল প্রযুক্তি। বিশুদ্ধ ভাবনার ব্যবহারিক প্রয়োগ। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক। তাদের মধ্যে আবার বুলশ্যানন হ্যান্ডশেক এক উজ্জ্বল উপাখ্যান। যে মানুষটা জীবিত কালে ইলেকট্রিক বাল্ পর্যন্ত দেখেননি, তাঁর চিন্তার সূত্রেই কিনা আজকের কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন! হ্যাঁ, কালের ব্যবধান অতিক্রম করে এমন যোগাযোগ কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ চিন্তা এবং তার ব্যবহারিক প্রয়োগের মাঝে সময়ের এত দূরত্ব বেশি একটা দেখা যায় না

আকর্ষণীয় যোগাযোগের কারণে বুল আর শ্যানন জুটিকে আলাদা করা যায় না। ব্যাপারটাও ব্যতিক্রম। বিজ্ঞানে থিয়োরির সঙ্গে চিহ্নিত হন বিশেষ এক জন। রিলেটিভিটি আইনস্টাইনের। গ্র্যাভিটি নিউটনের। ইভোলিউশন ডারউইনের। অথচ বুল আর শ্যানন যেন পয়সার পিঠ পিঠ। অথচ দুঃখের বিষয়, ওই জুটির নাম তেমন জানা নেই সবার। কম্পিউটার বললে সবার হিরো বিল গেট্, স্টিভ জোব্স। ততটা প্রাচীন নন বলে হয়তো শ্যানন ঈষৎ পরিচিত, বুল তা নন

তাই ফেরা যাক তাঁর জীবনে। বিয়ে ১৮৫৪ সালে। পাত্রী মেরি এভারেস্ট। ভারতের সার্ভেয়ারজেনারেল, যাঁর নামে মাউন্ট এভারেস্ট, সেই জর্জ এভারেস্টের ভাগনি। বুলের চেয়ে বয়সে ১৭ বছরের ছোট। প্রথম দেখা বন্ধুর বাড়িতে। বুলের বন্ধু জন রিয়াল। মেরির কাকা। জনের বাড়িতে যাতায়াত বুলের। সেখানে আলাপ। অচিরে ঘনিষ্ঠতা। বীজগণিত পাঠের সূত্রে। বীজগণিত মেরির প্রিয় বিষয়। তাঁর কথায় ঈশ্বর বিষয়ে কিছু জানি না। শুধু এটুকু জানি যে, তিনি আমাদের জন্য বীজগণিত বানিয়েছেন। শুধু জন্য তাঁকে মনপ্রাণ সঁপে দেওয়া যায়। কাকার বন্ধু বুলের কাছে সেই বীজগণিতের উচ্চতর পাঠ নিতে শুরু করলেন মেরি

ক্রমে পারিবারিক দুর্যোগ। হঠাৎ মারা গেলেন মেরির বাবা। কাকা পড়লেন আর্থিক দুর্বিপাকে। মেরি অসুস্থ। বয়সের ফারাক সত্ত্বেও বুল তখন মেরির পাশে। বন্ধুর মতো। বিয়ে হল। সংসার। পাঁচটি মেয়ের বাবামা বুল আর মেরি। সংসার সুখের। হবেই। খিটিমিটি থেকে স্বামীস্ত্রীর ঝগড়া বাধলে বুল তক্ষুনি বাড়ির বাইরে

সুখ বেশি দিন সইল না। অকালে মারা গেলেন বুল। বাড়ি থেকে কলেজ প্রায় চার কিলোমিটার। হেঁটেই রোজ যাতায়াত। ২৪ নভেম্বর, ১৮৬৪। বুল চলেছেন কলেজের পথে। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। সঙ্গে শীতের হাওয়ার ঝাপটা। বুল দাঁড়িয়ে পড়লেন না কোথাও। কলেজের ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে যে। কলেজে যখন পৌঁছলেন, জামাকাপড় ভিজে জবজবে। কোট থেকে জল গড়াচ্ছে। কাঁপছেন ঠকঠক করে। সেই অবস্থায় ক্লাস নিলেন। বাড়ি ফিরলেন গায়ে জ্বর নিয়ে। মেরি সারা রাত জেগে। জ্বর বাড়ল। পর দিন এলেন ডাক্তার। ফুসফুসে সংক্রমণ। চলল ওষুধ। বুল ক্রমে সংজ্ঞাহীন। জ্ঞান আর ফিরল না। ডিসেম্বর মারা গেলেন বুল। বয়স ৪৯

আর মেরি? বিধবা হলেন ৩২ বছর বয়সে। তার পরের জীবন কষ্টের। পয়সাকড়ি রেখে যাননি স্বামী। ফলে পাঁচ মেয়ে নিয়ে অবস্থা সঙ্গিন। চাকরি? কে দেবে? অবশেষে জুটল এক। লন্ডনে কুইন্ কলেজে লাইব্রেরিয়ান। সে কাজ রইল না বেশি দিন। মেরি কাজ নিলেন এক সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের প্রাইভেট সেক্রেটারির। পাশে রোজগার হিসেবে প্রাইভেট টিউশন। গণিত পড়িয়ে রোজগার। ভাবে বড় করলেন পাঁচ মেয়েকে। তিনি দীর্ঘায়ু। ১৯১৬ সালে মারা গেলেন ৮৪ বছর বয়সে। অর্থকষ্টেই কাটালেন অনেকটা জীবন

বিল গেট্, স্টিভ জোব্এর স্ত্রীদের কাছে যা কল্পনাতীত। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.