তিন ধাপে সম্পন্ন হবে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন

সেলফোনের সিম নিবন্ধনে বাধ্যতামূলকভাবে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতি ব্যবহারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয় ১৫ ডিসেম্বর। নিবন্ধিত নয়, এমন সব সিমের ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। দেশের সব সেলফোন গ্রাহকের সিম তিনটি ধাপে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

কয়েক বছর ধরে সেলফোন ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটনের অভিযোগ বাড়ছে। মূলত নিবন্ধন ছাড়া বা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সিম নিবন্ধনের মাধ্যমে এসব অপরাধ করা হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গ্রাহকের দেয়া তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতের এ উদ্যোগ নেয়া হয়।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে যেকোনো সেলফোন গ্রাহক স্বপ্রণোদিত হয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে তিনটি পর্যায়ে বাধ্যতামূলকভাবে এ নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এসএমএসের মাধ্যমে বাল্ক আকারে সংগ্রহ করা তথ্য যাচাই শেষে যেসব সিমের তথ্যে গরমিল পাওয়া যাবে, সেগুলো প্রথম পর্যায়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি এসব সিমের নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যেসব সিমের তথ্য যাচাই করা হয়নি, সেগুলোর অংশবিশেষও এ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে হবে।

দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে ১ মার্চ। এ পর্যায়ে বাল্ক আকারে সংগ্রহ করা সিমের তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের মিল রয়েছে এমন সংযোগের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এ পর্যায়েও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যেসব সিমের তথ্য যাচাই করা হয়নি, তার অংশবিশেষের নিবন্ধন করতে হবে।

শেষ পর্যায়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের বাইরে থাকা অন্য সব সিমের নিবন্ধন বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এছাড়া কোনো গ্রাহক চাইলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় সংযোগ বন্ধ করতে পারবেন। সিম বন্ধের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা আগামী ১ মে থেকে অপারেটরদের অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আঙুলের ছাপ নিতে ব্যবহার করা হবে বিশেষ ডিভাইস। বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার বা স্ক্যানার নামে পরিচিত এ ডিভাইসের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে প্রত্যেক গ্রাহকের আঙুলের ছাপ। গ্রাহকের অন্যসব তথ্যের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হবে এটি। এতে পরিচয় জালিয়াতির আশঙ্কা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিভিন্ন কার্যক্রমে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করার এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আর দেশে ব্যাংকিং খাতের লেনদেনে এটি চালু হয়েছে আগেই।

জানা গেছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের জন্য বর্তমানে অপারেটররা ৮১ হাজার ৫০০ ডিভাইস সংগ্রহ করেছে। কার্যক্রম আরো গতিশীল ও সহজ করতে ডিভাইসের সংখ্যা বাড়িয়ে এক লাখ দুই হাজার করা হবে।

এ পদ্ধতি চালু হওয়ায় এখন থেকে হাতের আঙুলের ছাপ ছাড়া সংযোগ কিনতে পারবেন না সেলফোন গ্রাহক। পাশাপাশি বিদ্যমান গ্রাহকদেরও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা না হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সংযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া সেলফোন সংযোগ কেনার ক্ষেত্রে যেসব গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া অন্য বৈধ পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছেন, তাদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এনআইডি ছাড়া অন্য পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করার সুযোগ না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সময়ের পর এনআইডি ছাড়া অন্য পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত সিম বন্ধ করে দেয়া হবে। সুত্র: বণিক বার্তা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.