তেভাগাঁ আন্দোলন ও রক্তঝরা পহেলা জানুয়ারি
কৃষক বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তেভাগাঁ আন্দোলনে সর্বপ্রথম প্রাণ ঝড়েছিল কৃষকযোদ্ধা তন্নারায়নের। তিনি ছিলেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামের একজন সাহসী ও দৃঢচেতা প্রতিবাদী কৃষকযোদ্ধা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৬ সালে পহেলা জানুয়ারি ডিমলার খগাখড়িবাড়ী গ্রামের প্রভাবশালী জোতদাররা বন্দুক নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে কৃষকযোদ্ধা তন্নারায়নকে গুলি করে হত্যা করেছিল।
ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন হাজার হাজার কৃষক যে ঐতিহাসিক মিছিল করেছিল তা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
কৃষক বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তেভাগাঁ আন্দোলনে সে সময় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গড়ে ওঠা কৃষক নেতাদের মধ্যে অন্যরা ছিলেন জমসেদ আলী চাটী, বাচ্চা মামুদ, দীন দয়াল, কালাচাঁদ বাবু, কার্তিক কবিরাজসহ নাম না জানা আরও অনেকে। এদের কেউ আজও বেঁচে নেই। তবে শুধু রয়ছে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের এক জ্যোতির্ময় অধ্যায়। কৃষিজীবী মানুষের নিজের জমি আর জমির ফসলের ওপর যে অধিকার রয়েছে তার দৃঢতার পিছনেই ছিল কৃষক বিদ্রোহ তেভাগাঁ আন্দোলন।
উেেল্লখ, ১৯৪০ সালের গোঁড়ার দিকে জমি থেকে উৎপন্ন ফসলের ৩ ভাগের ২ ভাগ পাবে চাষী, ১ ভাগ পাবে জমির মালিক। এ দাবি থেকে তেভাগাঁ আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। এ আন্দোলনের আগে বর্গা প্রথায় জমির সমস্ত ফসল মালিকের গলায় উঠত এবং উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক বা তার আরও কম বরাদ্দ থাকত ভূমিহীন কৃষক বা ভাগ চাষীর জন্য। যদিও ফসল ফলানোর জন্য বীজ ও শ্রম দু’টোই কৃষক দিত। পাক-ভারত সৃষ্টির আগে কৃষকদের তেভাগাঁ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলেও ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসেই ডিমলায় তেভাগা আন্দোলন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে।
আন্দোলনের শ্লোগান ছিল- ‘নিজ গোলায় ধান তোলো, অর্ধেক নাই, তেভাগাঁ চাই, ধার করা ধানের সুদ নাই।’ আন্দোলনের এ মন্ত্রে বেগবান হয়ে নীলফামারীর জেলার ডিমলা উপজেলায় শত শত কৃষক মাঠ থেকে যৌথভাবে ধান কেটে নিজেদের (চাষী) বাড়িতে তুলতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে জোতদাররা তাদের পেটোয়া গুন্ডা বাহিনী চাষীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। সে সময় কৃষকদের লাঠির আঘাতে গুন্ডা বাহিনী ধরাশায়ী হয়ে পালিয়ে যায়। এ অবস্থা দেখার পর ডিমলার জোতদাররা কৃষকদের বিরুদ্ধে ৫টি বন্দুক আমদানি করেছিল। ১৯৪৬ সালের পহেলা জানুয়ারি জোতদাররা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে সেই বন্দুক দিয়েই গুলি করে হত্যা করেছিলো কৃষক বিদ্রোহের তেভাগাঁ আন্দোলনের সোচ্চার কন্ঠস্বর তন্নারায়নকে।