দশ বছর হওয়ার আগে সন্তানের শিক্ষা
শিশু-সন্তানেরা মানব সমাজের সম্পদ। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত। আজকের শিশু আগামী দিনের পরিচালক। যুগ ও সময়ের পথনির্দেশক। মানব ও মানবতার পথপ্রদর্শক। তাদের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা তাই একান্ত প্রয়োজন। কীভাবে আপনি আপনার সন্তানকে শিক্ষা দিতে পারেন? আর কখন কোন শিক্ষা দরকার তার?
শিক্ষার সবচেয়ে উপযোগী সময় শৈশব। গ্রহণ ও ধারণের সর্বোত্তম সময় শৈশব। শিশু- সন্তানেরা যে কোনো জিনিস খুব সহজে ধারণ করতে পারে।
আপনি যখন বাবা কিংবা মা হন, ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। এটিই স্বাভাবিক। সকলেরই সন্তান নিয়ে অসংখ্য পরিকল্পনা থাকে। প্রত্যেকেই একেকটি নিখুঁত ব্যক্তিত্বে রুপান্তর করতে চায় নিজ সন্তানকে। সকলেই চান তার সন্তান যেন দয়ালু, সৎ, সহানুভূতিশীল এবং সাহসী হয়। কিন্তু এ গুণাবলীগুলো একটি বাচ্চার মাঝে কিন্তু রাতারাতি এসে পড়েনা। একটি ভালো পরিবেশ, দায়িত্বশীল বাবা-মা এবং তাদের সৎ সংস্কারই পারে তাদের সন্তানকে সুস্থ, সফল ও স্বাবলম্বী করে তুলতে।
আজকে আপনাদের জানানো হবে সন্তান দশ বছর বয়সে পা দেওয়ার আগেই যা কিছু শেখাবেন।
বাবা-মা কখনো শত্রু নয়
সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠা খুব কষ্টকর কিন্তু আপনাকে এ চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। খুব বেশি জোরাজুরি করার প্রয়োজন নেই একদম। ধীরে ধীরে সন্তানের কাছের মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন যেন যে কোনোবিপদে-আপদে সে আপনার কাছে আসতে পারে।
নিজের পক্ষে কথা বলা শেখান
কিছু কিছু পিতা-মাতা নিজের সন্তানের চাইতে তাদের শিক্ষক কিংবা অন্য বাচ্চাদের প্রতি অধিক ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করেন। এতে করে আপনার নিজ সন্তান কিন্তু বেশ নিরাপদহীনতায় ভোগে এবং অকর্মঠ হয়ে ওঠে। আপনার সন্তানকে বোঝান যে সম্মান সকলের জন্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ। অন্যকে সম্মান করার পাশাপাশি সে যেন নিজের প্রতিও যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে।
পরিবেশকে সম্মান করতে শেখান
আমরা কতবার ময়লা সড়ক নিয়ে অভিযোগ করি বলুন তো? পরিবেশকে সম্মান করার কাজটা পরিবার থেকেই শেখাতে হবে। নিজেই শুরু করুন এ অভ্যাসটি এবং অতঃপর সন্তানকে শেখান। এতে করে, উত্তম একটি ফলাফল পাবেন।
ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, সকলকেই সম্মানের চোখে দেখতে হবে
আপনার সন্তানকে ছেলে কিংবা মেয়ে আলাদা সত্তা হিসেবে পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই কোন। তারা যেন সকলকেই সমানভাবে সম্মান প্রদর্শন করে সেদিকে দৃঢ় মনোযোগ দিন। লিঙ্গবৈষম্য যেন তাদের মধ্যে কোনভাবেই প্রকাশিত না হয়।
ভুল করা কোন অপরাধ নয়
ভুল থেকে যদি কোন শিশু কিছু শিখতে পারে, তবেই কিন্তু সে একটি আদর্শ। নিজের ব্যর্থতা থেকেও কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তান যেন ভুল করতে কখনো ভয় না পায়।
গ্রেডের চাইতে জ্ঞান বড়
অনেক সময় সন্তানেরা পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল না করলে বাবা-মা খুব ক্ষেপে যান এবং খুব কঠোরভাবে তিরস্কার করতে থাকেন। এটি খুবই ক্ষতিকারক। আপনার সন্তানকে এটি শিক্ষা দিন যে গ্রেডের চাইতে অর্জিত জ্ঞানই প্রয়োজনীয়।
অন্য কারো জন্য সে যেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ না করে
বাচ্চারা মনে করে থাকে যে বন্ধুদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব সময় চেষ্টা করে এটি অর্জন করার জন্য। আপনার নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সন্তানের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং তাকে শেখান যে সৎ এবং সম্মানিত হওয়া যেকোন কিছুর উর্ধ্বে। এমনকি জনপ্রিয় হবার চাইতেও।
কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করতে শেখান
যে কোনোব্যাপারে না বুঝলে প্রশ্ন করা খুব সাধারণ। সবকিছু বুঝে ফেলেছেন এমন মিথ্যে ভান করার চাইতে প্রশ্ন করা ঢের কৃতিত্বের। এ ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য শৈশব খুব ভালো সময়।
অসুস্থ বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে বলতে শেখান
একজন শিশু যেন কখনোই স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কথা বলতে জড়তাবোধ না করে। এ শিক্ষাটি পরিবার থেকেই দিতে হবে। গ্রেড এবং শিক্ষকের বকুনির চাইতে স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। এটি সন্তানকে ভালোমতন বুঝিয়ে দিন।
‘না’ বলতে শেখান
আপনার সন্তানকে বয়স্ক মানুষ, শিক্ষক এবং নিজেক ‘না’ বলতে শেখান। আপনি তাকে একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তৈরি করতে চাচ্ছেন, অবশ্যই অন্যের গোলাম হতে শেখাচ্ছেন না। তার এ অভ্যাস পরিপূর্ণ বয়সে তাকে বেশ সাহায্য করবে।