দিল্লিতে ১০ দিনের পলিউশন ইমার্জেন্সি ঘোষণা, বন্ধ ব্যক্তিগত গাড়ি

দূষণ মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি হিসাবে বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হল ১০ দিনের দূষণজনিত আপৎকালীন ব্যবস্থা (পলিউশন ইমার্জেন্সি)।

বন্ধ রাখা হয়েছে সব রকম নির্মাণ কাজ, কয়লা নির্ভর শিল্প ও কল-কারখানা। ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে গণপরিবহণ ব্যবহারের আর্জি জানানো হয়েছে। তার জন্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সব রকম গণপরিবহণের সংখ্যা। চলছে অতিরিক্ত ট্রেন ও মেট্রো।

দূষণের নিয়ম ভঙ্গ করলে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছেন দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। দিল্লির পাশাপাশি পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও এই নিয়ম কার্যকর করার নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দিল্লি সরকারের তরফে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, দূষণ-যুদ্ধে তারা সব রকমভাবে প্রস্তুত।

বুধবার দিল্লিতে মোটের উপর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৩৬৬। দূষণের নির্ধারক হিসাবে যা ‘সিভিয়ার’ বা মারাত্মক। তবে বৃহস্পতিবার প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া নিয়ে এসেছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। সকাল থেকেই হাওয়ার গতি থাকায় বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

কেন্দ্রের সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চের (সফর) এক কর্মকর্তা বলেছেন, দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা কমার কৃতিত্ব অনেকটাই দেয়া যেতে পারে এই পশ্চিমী বাতাসকে।

এর সাথে ব্যক্তিগত গাড়ি কম ব্যবহার, নির্মাণ বন্ধসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ‘মারাত্মক’ থেকে কিছুটা উন্নত হয়ে ‘অত্যন্ত খারাপ’ অবস্থায় উঠেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, আগামী দু’দিন দূষণের মাত্রা আরো কিছুটা কমবে। যদিও তার মাত্রা খুবই ধীর। তবে তারপর থেকে পরিস্থিতি আরো ভাল হতে পারে।

দিল্লিতে মোট ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাথ। রাজধানীর প্রায় ৪০ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী এই গাড়ি। সেই কারণেই ১ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে গণপরিবহণ ব্যবহারের আর্জি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। পুরোপুরি বন্ধ রাখার আর্জি জানানো হয়েছে ডিজেল চালিত গাড়ি।

পরিস্থিতির মোকাবিলায় অতিরিক্ত কয়েকটি ট্রেন চালাচ্ছে ভারতীয় রেল। ২১টি অতিরিক্ত মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি মেট্রো। যাতে ৮১২টি অতিরিক্ত ‘ট্রিপ’ মিলবে। রাস্তায় দূষণ সংক্রান্ত কড়া চেকিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

দিল্লির পরিবহণমন্ত্রী কৈলাস গহলৌত বলেছেন, গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (জিআরএপি) অনুযায়ী সব রকম ব্যবস্থা নিতে এবং প্রয়োগ করতে প্রস্তুত দিল্লি সরকার।

একইসাথে রাজধানীতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে ফের জোড়-বিজোড় ফর্মুলা নিয়েও। ২০১৬ সালের ১ থেকে ১৫ জানুয়ারি এবং ১৫ থেকে ৩০ এপ্রিল দু’দফায় এই ফর্মুলা প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাতে কিছুটা সুরাহা হয়েছিল। তবে ফের এই ব্যবস্থা চালু করা হবে কিনা, তা নিয়ে সরকারি তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, প্রয়োজন হলেই এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।

তার সাথেই আলোচনায় উঠে এসেছ নতুন এক সম্ভাবনা। দূষণের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলে প্রয়োজনে ব্যক্তিগত গাড়িও কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। যদিও এখনো তা শুধুমাত্র আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। সূত: আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.