দীর্ঘ ছুটির প্রথমেই কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল
কক্সবাজার, ইউএনবি : ঈদের আগে দীর্ঘ ছুটি পেয়ে পর্যটকরা ছুটে এসেছে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে । গত বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করে। তবে শুক্রবার থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে কক্সবাজারে।
২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত নয়দিনে মাঝে মাত্র দুদিন কর্মদিবস। বাকি সাতদিন ছুটি থাকায় এ সুযোগে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন দল বেধে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। এ কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের পদভারে টুইটুম্বুর।
এরই মধ্যে সাগরপাড়ের সকল আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউসের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
আর পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন প্রশাসন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
২৭ ও ২৮ এপ্রিল শুক্র ও শনি দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। ২৯ এপ্রিল রবিবার বৌদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি। ৩০ এপ্রিল সোমবার কর্মদিবস থাকলেও পরের দিন ১ মে শ্রমিক দিবসের ছুটি। পরদিন ২ মে বুধবার থাকছে পবিত্র শবে-বরাতের ছুটি। ৩ মে বৃহস্পতিবার কর্মদিবস থাকলেও পরের দুদিন ৪ ও ৫ মে শুক্র ও শনিবার রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা বাকি দুদিনও ছুটি নিয়ে দীর্ঘ ভ্রমনে বেরিয়েছেন বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা দম্পতি আলী রেজা ও সেলিনা আক্তার জানান, তারা দুজনই সরকারি চাকুরিজীবী। এবার ঈদের আগে যেহেতু দীর্ঘ ছুটি রয়েছে তাই বেড়াতে কক্সবাজার ছুটে আসা। নগরজীবন থেকে নিজেদের মন ও শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে এর চেয়ে আর ভালো সুযোগ নেই বলে জানান তারা।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা কলেজ শিক্ষক ইকবাল আহমদ জানান, কক্সবাজরে ভ্রমণে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আগে যাওয়া হতো না। ঈদের ছুটি কাটানো হয় আত্মীয় স্বজনদের সাথে। এবার এটি ঈদের ছুটি না হওয়ার কারণে কক্সবাজারে আসার ইচ্ছাটা পূরণ হলো।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অতীতের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতি বছর ঈদের ছুটিসহ নানা ছুটিতে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের ভিড় হয় কক্সবাজারে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ ঈদের ছুটিতে যারা বাড়িতে যাবেন তারা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন। তাই ঈদের আগেই সাতদিনের ছুটির কারণে হোটেলগুলোতে পর্যটকের স্থান সংকুলানেই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
হোটেল মোটেল ওনার’স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সি-গাল হোটেলের প্রধান নির্বাহী ইমরুল সিদ্দিকী রুমী বলেন, সি-গাল, ওশান প্যারাডাইস, লংবিচ, সি প্যালেস, সায়মন বিচ রিসোর্ট, রয়েল টিউলিপ হোটেল অ্যান্ড স্পা,প্যাঁচার দ্বীপের ‘মারমেড ইকো বিচ রিসোর্ট’ ইনানির রয়েল টিউলিপ কক্সবাজারের নামীদামী এ তারকা হোটেলগুলোর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কক্ষ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিদেশী এনজিও’র দেশী-বিদেশী প্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছে। এসব তারকা হোটেলে পর্যটকের চাহিদা কম থাকলেও বাকি কক্ষগুলো প্রায়ই বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান জানান, দুই-তিন দিনের ছুটি পেলেই কক্সবাজারে পর্যটকে ভরে যায়। তাই এবার নয়দিনের মতো ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছে। ইতিমধ্যে প্রায় হোটেল পর্যটকে ভরে গেছে।
কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমদ বলেন, সমিতির আওতাভুক্ত ১১৭টি কটেজ রয়েছে। কম দামে কক্ষ পাওয়া যায় বলে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কটেজে ওঠেন বেশি। সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন -টোয়াক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান- দীর্ঘ ছুটি পেয়ে ভ্রমণ পিপাসুরা কক্সবাজারে ছুটে এসেছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারী পার্ক, মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে নেমেছে পর্যটকদের ঢল। কক্সবাজারের হোটেলসহ প্রায় ৪শ’টি আবাসিক কটেজ এর ৯০ ভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটক হয়রানি রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত’র নজরদারি রয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা ও ভেজাল খাবার পরিবেশন করলে ব্যবস্থা নেবেন এ আদালত।
পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রস্তুত আছে। সৈকতের বালুচরে অত্যাধুনিক মোটরযানে টহলে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা বিধান করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার শহরের বিনোদন কেন্দ্র ও শপিংমলে পুলিশের বাড়তি নজরদারি রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন।