দুই বেডরুমের বিমানে চড়েন ট্রাম্প
বিমানে বেডরুম! হয় নাকি! হবেইবা না কেন? হবে তো। ডোনাল্ড ট্রাম্পের যখন ইচ্ছা, তখন তা হতেই হবে। বিমানে শুয়ে-বসে আরাম-আয়েশে আকাশ পথে ছুটে বেড়াবেন তিনি- তাতে কার কি? এত সহায়-সম্পত্তি, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি যার, সেই ট্রাম্প বিমানে শোয়ার ঘর বানাবেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। অর্থ থাকলে এখন যেকেউ-ই বোধ হয় এমন বিমানের মালিক হতে পারেন। ট্রাম্পও তাই বলছেন। মার্কিনিদের উদ্দেশে বলছেন, ট্রাম্পের মতো হলে জীবনের সব কিছু সহজ হয়ে যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প আছে কতজন? ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন নেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই পর্বে লড়ছেন। সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। আন্তর্জাতিক বিশ্বের আকটু-আধটু খবর রাখেন যারা, তারা ট্রাম্পের নামের সঙ্গে পরিচিত নিশ্চয়ই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুসলিমদের বের করে দেওয়া, মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলা, অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়া, একদিনে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে ধ্বংস করার মতো বিতর্কিত বক্তব্য করে তিনি বিশ্বজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী ট্রাম্প- এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মানুষটির সম্পদ-সম্পত্তির খোঁজ হয়তো অনেকের জানা নেই। ট্রাম্প ২০ বিলিয়ন ডলারের মালিক। অবশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সম্পদের পরিমাণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে। এমন কি ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন, তার অনেক সম্পত্তি সম্পর্কে গণমাধ্যমের কাছে তথ্য নেই। বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের রিয়েল স্টেটের ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায় হাতেখড়ি হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওপর নির্ভার থাকেননি। ছেলে ডোনাল্ডের সম্পর্কে বাবা ফ্রেডের মন্তব্য হলো- ‘ডোনাল্ড যাতে হাত দেয়, তাতেই সোনা ফলে।’ ৬৯ বছর বয়সি ট্রাম্প ব্যক্তি জীবনে খুবই বিলাসি কিন্তু পরিশ্রমী। দিনে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুমান। তাই বলে রুচির সঙ্গে কখনো আপোশ করেন না। ভ্রমণের জন্য বিলাসি কার ও বিমান তার পছন্দের। ট্রাম্পের বিমান বিলাস সম্পর্কে জানলে হয়তো বুঝতে সুবিধা হবে লোকটি কতটা পূঁজিবাদী। ভ্রমণে ট্রাম্পের সবচেয়ে পছন্দের বাহন বোয়িং ৭৫৭।
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠা পল অ্যালেনের কাছ থেকে ২০১১ সালে প্রাইভেট জেট বোয়িং ৭৫৭ কিনেছিলেন নিউ ইয়র্কের ধনপতি ট্রাম্প। কিন্তু কিনেই ফেলে রাখেননি। বিমানটিতে লাগিয়েছেন ট্রাম্পীয় রুচির ছাপ। ট্রাম্পীয় রুচি মানে ঝা চকচকে, পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি, গোছানো, আরাম-আয়েশের পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত থাকা। তাই বোয়িং ৭৫৭ কেনার পর তার ভেতর-বাহিরের চেহারা পাল্টে ফেলেন ট্রাম্প। ২৩৯ আসনের বোয়িং বিমানে আসন রাখেন মাত্র ৪৩টি। বাকি জায়গায় দুটি শোয়ার ঘর তৈরি করেন। একটু দূরের ভ্রমণ হলে খানিটা বিশ্রাম নিওয়া যায় এই শোয়ার ঘরে। এ ভাগ্য কয়জনের আছে! নিঃসন্দেহে খুব কম মানুষের। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য যারা লড়াই করছেন, তাদের সবাইকে ট্রাম্প এক মুহূর্তে কিনে নিতে পারেন। এ কথা সম্পত্তির বিবেচনায় বলা। অর্থাৎ তার প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ, জন কাসিচ, ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন, বার্নি স্যান্ডার্স সবার সম্পদ এক জায়গায় করলেও তা ট্রাম্পের সমান হবে না। বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমান শুধু একটি নয়। আরো একটি ছোট বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার রয়েছে তার। সেজনা সাইটেশন এক্স করপোরেট জেট বিমান আছে ট্রাম্পের। এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১২ জন। মূল্য ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। একটি বিলাসবহুল হেলিকপ্টার আছে। যার নাম সিকোরস্কাই এস-৭৬ হেলিকপ্টার। এর মূল্যও ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। যখন মন চায়, যেকোনো বাহন নিয়ে আকাশে উড়ে যান ট্রাম্প। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি সব সময় খেয়াল রাখেন। ট্রাম্পের জীবনে অর্থ কোনো সমস্যা নয়। তিনি সাহসীও বটে। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেন না তিনি।