‘পরিবার চেয়েছিল বিয়ে করি, কিন্তু আমি চেয়েছি পার্টির ডিজে হতে’

ভারতের নাইটক্লাবগুলোতে নারী ডিজে’র দেখা পাওয়া বেশ বিরল ঘটনা।

ফটোগ্রাফার শায়ন হাজরার সাথে দেখা হয়েছিল ব্যাঙ্গালোরের ডিজে পুজা শেঠ-এর।

“আমি চাই মানুষ আমার বাজানো গানগুলো উপভোগ করবে। আমার কাছে এগুলো মুক্তির গান,” বলছেন তিনি, “এগুলোর মাধ্যমে আমি বাইরের দুনিয়ার কাছে নিজেকে তুলে ধরতে চাই।”

পুজা শেঠ তার ডিজে কেরিয়ার শুরু করেন ২০১৪ সালে। ব্যাঙ্গালোরের পানশালাগুলো গানবাজনার জন্য বিখ্যাত।

“আমি যখন ক্লাবগুলোতে বাজাতে শুরু করলাম তখন ভারতের বিভিন্ন শহর, এমনকি বিশ্বের নানা দেশে থেকে আসা মহিলা ডিজে-দের সাথে আমার দেখা হতো। কিন্তু সে সময় ব্যাঙ্গালোরে একজন সারী ডিজে ছিল না।”

এর পরের দিনগুলোতে তিনি যখন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গান বাজানো শুরু করেন তখন লোকে ‘ব্যাঙ্গালোরের একমাত্র নারী ডিজে’ নামে তার পরিচয় দিতে শুরু করে।

কিন্তু ডিজে হিসেবে কেরিয়ার গড়ে তোলা তার জন্য খুব সহজ ছিল না, বলছেন পুজা শেঠ। পূর্ব ভারতের এক গ্রাম তার জন্ম। পরিবার বেশ রক্ষণশীল। কিন্তু তিনি ঘরের মধ্যে বন্দি না থেকে নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলতে চেয়েছেন।

“আমার বাবা-মা সবসময় চেয়েছি আমি বিয়েথা করে সংসারী হই। কিন্তু আমি তা চাইতাম না।”

নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য স্কুলের পড়া শেষ হওয়ার পর তিনি ঘরে ছেড়ে পারিয়ে যান।

“আমার যে সমাজ সেখানে মেয়েদের কাজ করতে দেয়া হয় না। অনেক মেয়ে স্বামীর ঘরে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে বেরই হয় না। এজন্যেই আমাকে ঘর ছাড়তে হয়।”

কাজের সন্ধানে পুজা শেঠ হাজির হন ব্যাঙ্গালোরে। সেখানে তিনি কিছুদিন এয়ার স্টুয়ার্ডেস হিসেবে কাজ করেন।

সেখানেই তিনি প্রথমবারের মতো কোন পার্টিতে যোগ দেন।

“পার্টিতে গিয়ে প্রথম যার দিকে আমার নজর পড়লো সে হলো ডিজে। আমার মনে আছে আমি খুবই চমৎকৃত হয়েছিলাম।”

তখনই তিনি বুঝতে পারেন তিনি আসলে কী করতে চান।

“এরপর ব্যাঙ্গালোরের ক’জন ডিজে’র সাথে আমার পরিচয় হয়। তারা আমাদের ডিজে’র কাজের প্রাথমিক দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা দেন। বাকি কাজ আমি ইউটিউব ভিডিও দেখে শিখে ফেলি।”

এরপর গত পাঁচ বছরে মিস শেঠ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাড়ে চারশোর বেশি অনুষ্ঠানে গান বাজিয়েছেন।

যথেষ্ট গ্ল্যামার থাকলেও ভারতে ডিজেৰর কাজে বেশ ঝুঁকিও রয়েছে, বলছেন তিনি। “মানুষ সব সময় আমাকে বলে এটা মেয়েদের কাজ না।”

“ক্লাবগুলিতে প্রায়ই মাতাল লোকেরা এসে আমার সাথে কথা বলতে চায়। অনেকে আমার কাছ থেকে ফোন নাম্বারও চায়। কিন্তু আমি তাদের উপেক্ষা করি। বেশি ঝামেলা করলে বাউন্সাররা এসে সেটা সামাল দেয়।”

কিন্তু এসব সমস্যার পরও তিনি দমে যান না।

“আমার কাজের সবচেয়ে ভাল দিক হলো মানুষজন আমার বাজনার সাথে নাচতে পছন্দ করে। তারা আমার সঙ্গীতের সাথে যুক্ত হয়। এই ভাল লাগার জন্যই লোকে আমার অনুষ্ঠানে আসে।”

ছবি: শায়ন হাজরা
বিবিসি বাংলা