পরিবেশ বান্ধব ই-যান
পরিবেশ বান্ধব ই-যান
পরিবেশ সংরক্ষণ আজ সব ক্ষেত্রেই জরুরি হয়ে উঠেছে৷ বিশেষ করে শহরের ব্যস্ত প্রাণকেন্দ্রে পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে সমাধানসূত্রের খোঁজ চলছে৷ বার্লিন শহরে কাজে লাগানো হচ্ছে ইলেকট্রিক সাইকেল ও স্কুটারের মতো যান৷
বার্লিনের এক স্টার্ট-আপ কোম্পানি ‘ই-স্কুটার শেয়ারিং’ চালু করেছে৷ ১৫০টি ইলেকট্রিক স্কুটার কিনে তারা চলতি বছরেই সেগুলো পথে নামাতে চায়৷ এই স্কুটার রিচার্জেবল ব্যাটারিতে চলে৷ ব্যাটারি বের করে সাধারণ প্লাগ-পয়েন্টে চার্জ করা যায়৷ ইলেকট্রিক গাড়ির মতো আলাদা চার্জিং স্টেশনের প্রয়োজন হয় না৷
ই-মিও কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভালেরিয়ান সাইটার বলেন, ‘‘স্কুটারের মধ্যে দুটি ব্যাটারি রয়েছে৷ এক একটির রেঞ্জ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অর্থাৎ দুটি ব্যাটারি দিয়ে ১০০ কিলোমিটার যাওয়া যায়৷ এই স্কুটার শহরের মধ্যে প্রতিবার ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলার উপযোগী৷ অর্থাৎ সেটি দিনে বেশ কয়েকবার চালানো যায়৷”
যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই ই-স্কুটার ভাড়া নেয়া যায়৷ মোবাইল ফোনের অ্যাপের মাধ্যমে সবচেয়ে কাছের খালি স্কুটারের অবস্থান জানা যায়৷ তারপর অ্যাপ-ই পেছনের বাক্স খুলে দেয়, যার মধ্যে চাবি ও দুটি হেলমেট থাকে৷ এবার পথ চলার শুরু৷
গাড়ি ছাড়াই শহরের মধ্যে ইচ্ছেমতো যাতায়াত করতে অনেকে ইলেকট্রিক সাইকেলও ব্যবহার করেন৷ প্যাডেলে চাপ দিলেই সাইকেলে লাগানো ইলেকট্রিক মোটর চালু হয়ে যায়৷
কিন্তু সমস্যা হলো, এই সব যানের দাম এখনো বড্ড বেশি৷ বার্লিনের ‘ই-বাইক ফাইন্ডার’ নামের কোম্পানি তাই কেনার বদলে ‘লিজিং’ বা ভাড়ার ব্যবস্থা করেছে৷ তাদের ওয়েবসাইটে ২০টিরও বেশি মডেল থেকে বেছে নেয়া যায়৷ মাসে ৩০ থেকে ৯০ ইউরো কিস্তি দিতে হয়৷
‘জববাইক’ ওয়েবসাইট ক্রিস্টিয়ান শিন্ডলার বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলোর মনোভাবেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তারা দেখছেন, রাস্তাঘাটে যানযট, গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা পাওয়া মুশকিল, কর্মীদের নড়াচড়া করারও তেমন উপায় নেই৷ এখন উপায় কী? তাদের মনে হয়, অনেকেই তো সাইকেল চেপে আসেন৷ তাই গাড়ি পার্কিং-এর বদলে সাইকেল রাখার আরো ব্যবস্থা রাখা উচিত৷ তাহলে তার সাথে ইলেকট্রোমোবিলিটি, অর্থাৎ ই-বাইক কম্বাইন করলে কেমন হয়!”
এককালে ইলেকট্রিক সাইকেলকে প্রবীণদের যান হিসেবে মনে করা হতো৷ এখন আর সে দিন নেই৷ আজকাল ই-বাইক ও সাধারণ সাইকেলের মধ্যে পার্থক্য সহজে চোখে পড়ে না৷
ব্যাটারিও সাইকেলের কাঠামোর মধ্যে থাকে৷ সাধারণ সাইকেল থেকে মাউন্টেন বাইক – জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ ব্যাটারিচালিত দুই চাকার বাহন বিক্রি হয়৷ গড়ে সেগুলোর দাম প্রায় দুই হাজার ইউরো৷ কিছু মডেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে৷
প্যাডেলে চাপ দিতে হবে নিজেকেই৷ ইলেকট্রিক মোটর বিভিন্ন পর্যায়ে চালু করা যায়৷ টুর, স্পোর্টস বা টার্বো মোড৷ যত বেশি সেট করা হবে, সিস্টেম তত জোরে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷
‘ই-মোশন’ সাইকেলের দোকানের লেও প্রেৎসে বলেন, ‘‘আমি প্যাডেলের উপর স্বাভাবিক চাপ দিচ্ছি৷ মোটরের কাছ থেকে কতটা সাহায্য নেব, সেটা এখানে স্থির করতে পারি৷”
বার্লিনে টুরিস্টরাও সানন্দে ইলেকট্রিক যান ব্যবহার করছেন৷ যেমন ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের কাছে ইলেকট্রিক টুকটুক বা অটোরিক্সা ভাড়া নেয়া যায়৷ ই-টুকটুক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডাম রাইস বলেন, ‘‘আমরা বার্লিনে পর্যটকদের জন্য এক টেকসই পরিবহণের সুযোগ করে দিচ্ছি৷ বিবেক দংশন ছাড়াই সাইটসিয়িং টুর, শহর উপভোগ করা যায়৷”
সত্যি, পরিবেশ দূষণের অপরাধবোধ ছাড়াই শহর ঘোরার আনন্দ পাওয়া সম্ভব৷
সূত্র : ডয়চে ভেল