পর্যটক আকর্ষণে হাতিরঝিলে এবার ডলফিন শো

পর্যটক আকর্ষণে এবার ডলফিন শো করার আয়োজন চলছে। আপাতত ঢাকার হাতিলঝিলে এই ডলফিন শো-এর জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। আর এই শো করার আয়োজনে থাকছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর পর্যটনবর্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই ডলফিন শো।
এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে দেশে-বিদেশে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আর সেটা চলবে বছরব্যাপী। পর্যটকদের আকর্ষণের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। ওই প্রতিষ্ঠান মূলত সারা বছর ধরে এই ডলফিন শো-এর উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ঢাকার হাতিরঝিলে ডলফিন শো হলেও, পরবর্তী সময় কক্সবাজারসহ দেশের ৮টি স্থানে শো-এর ব্যবস্থা করা হবে। ডলফিন আনা হবে সুন্দরবন অঞ্চলের সমুদ্র এলাকা থেকে। যদি এখান থেকে না পাওয়া যায় তাহলে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডলফিন আনা হবে। এই শো দেখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে টিকিটের ব্যবস্থা থাকবে। তবে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হবে।

এদিকে ডলফিন শো আয়োজন করতে ইতিমধ্যে সম্প্রতি একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানতে চেয়েছেন, সমুদ্র থেকে কোনো প্রজাতির ডলফিন ধরা হবে, কিভাবে ডলফিন ধরা হবে, কতদিনের জন্য ধরা হবে, পরবর্তী সময় এই ডলফিনগুলো কি করা হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এই উদ্যোগকে ভালো বলে অভিহিত করেছেন। তবে সমুদ্র উপকূলের কোথা থেকে কোনো প্রজাতির ডলফিন ধরা হবে সে বিষয়ে তার নিজেরও কৌতূহল রয়েছে বলে জানা গেছে। কারণ, এসব ডলফিন ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া বেশ কিছুটা সময়ের ব্যাপার। তাই বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডলফিন আনার বিষয়টি এখন বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকতা জানান, সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে শিশু ডলফিন বঙ্গোপসাগর থেকে ধরার ব্যাপারে তারা মতামত দিয়েছে। তবে কি মতামত দিয়েছে সে ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তবে তিনি ডলফিন শো নিয়ে আশাবাদী।

ডলফিন কি?: ডলফিন জলচর স্তন্যপায়ী। তিমি আর শুশুকও এই গোত্রভুক্ত। ডলফিনকে প্রায় সময় বলা হয় শুশুক। ডলফিন নামে একটি মাছও আছে। লম্বা গড়নের এই মাছটি নীল রঙের। তবে এখানে উজ্জ্বল সোনালি, সবুজ ও বেগুনি আভা আছে। ওজন প্রায় ৩০ কেজি। লম্বায় প্রায় ২ মিটার। সামুদ্রিক ডলফিন প্রজাতির সংখ্যা ৩২। এরা দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার নদীর বাসিন্দা। নদীর ডলফিন দৃশ্যত তাদের পূর্ব পুরুষ তিমির মতো। দেহের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৭ মিটার পর্যন্ত হয়। এরা ঘোলা পানির বাসিন্দা। দৃষ্টিশক্তি সীমিত। বাংলাদেশে ৪ প্রজাতির সামুদ্রিক ও এক প্রজাতির স্বাদুপানির ডলফিন আছে। অধিকাংশ ডলফিন দলবদ্ধভাবে চলে। তারা পিঠের একটি ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নেয়। গড়ন মাছের মতো। শরীর লম্বাটে, লোমহীন। এদের ১৬০ থেকে ২০০টি ধারালো দাঁত থাকে। বুদ্ধিমত্তা, ক্রীড়াদক্ষতা ও বন্ধু সুলভ স্বভাবের জন্য ডলফিন খুবই জনপ্রিয়। ডলফিনের গুরুত্ব বেড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে। প্রায় ৪০টি জলক্রীড়া কেন্দ্রে তারা ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাপক গবেষণার জন্য সহজলভ্য হয়ে উঠছে। সাধারণত ডলফিন গড়ে ২.৪ মিটার লম্বা হয়। ওজন হয় ৭৫ কেজি। বাঁচে ৫০ বছর। কাব্য, সাহিত্য, চিত্রশিল্পে ডলফিন সর্বত্র সমাদৃত। এ জাতীয় প্রাণীর অন্যতম প্রথম সমীক্ষক ছিলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। সুইডিস জীববিদ লিনিয়াস তিমি ও ডলফিনকে স্তন্যপায়ী হিসেবে শনাক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.