পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার অভাবে বইয়ের মান বাড়ছে না
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বইয়ের পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা দরিদ্র অবস্থায় আছে। প্রকাশকেরা সম্পাদনার বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। আবার কোনো কোনো প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদনা বিভাগই নেই। তাই বইয়ের মান বাড়ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে পাঠক সমাবেশে অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের আয়োজনে ‘পাবলিশার অব দ্য মান্থ’ অনুষ্ঠানে লেখক-প্রকাশক-সম্পাদকদের আড্ডায় এই অনুযোগ করেন অংশগ্রহণকারীরা। চলতি মাসে প্রতিদিন নানান বিষয়ের আড্ডা বসছে পাঠক সমাবেশের দোতলায়। গতকালের আড্ডার বিষয় ছিল পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা।
আড্ডায় বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন বলেন, লেখকদের পরই পাণ্ডুলিপির সম্পাদকদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু এ দেশে লেখকদেরই সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। ভালো বই প্রকাশের জন্য অবশ্যই বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের প্রয়োজন। হামিদা হোসেন ১৯৬৩ সাল থেকে পাণ্ডুলিপি সম্পাদক হিসেবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
লেখক আহমদ মাযহার বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বই কিনে পড়ার চর্চা হয় না। নীলক্ষেতের ফটোকপি কিংবা পাইরেটেড বই দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এতে করে কিছু টাকা বাঁচলেও যে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে, সেটা উপলব্ধি করা দরকার। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের বইয়েরও সম্পাদনা হয়েছে, সেখানে পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার যে গুরুত্ব, সেটা খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়।
বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য সুব্রত বড়ুয়া বলেন, প্রতিটি বইয়ের সম্পাদনা হওয়া উচিত। সম্পাদককে কিছু টাকা দিতে হয় এই ভয়ে কোনো কোনো প্রকাশক হয়তো সম্পাদকের দারস্থ হতে চান না। কিন্তু সম্পাদকের সম্মানী ছাপা বইয়ের মধ্যে ভাগ করে দিলে সেটা যে খুব বেশি, তা বলা যাবে না। বইয়ের দাম বাড়লেও এর মান যদি বাড়ে কিংবা নির্ভুল ছাপা হয়, তাতেও পাঠকের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
কবি নুরুল হুদা বলেন, সৃজনশীল লেখার ক্ষেত্রে প্রত্যেক লেখককে স্ব-সম্পাদক হতে হবে। এরপরও যদি সম্পাদনার প্রয়োজন হয়, সে জন্য বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসাইনের সঞ্চালনায় এ সময় লেখক আন্দালিব রাশদী, সংহতি প্রকাশনীর সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, অনুপমের প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ, অনুবাদক কবির চান্দ, পাণ্ডুলিপি সম্পাদক রাখাল রাহা, প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়ক জাফর আহমেদ রাশেদ, ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক আতা সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সৌজন্যে: প্রথম আলো।